প্রথম রায় আজ ॥ একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা by বিকাশ দত্

 একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক রোকন পলাতক বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শেষে ৭৯ দিনের মাথায় আজ রায় ঘোষণা করা হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ ১৪ মামলার এটাই প্রথম রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করবে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য রয়েছেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জেলা জজ মোঃ শাহিনুর ইসলাম। এ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (জেলা জজ) একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ রবিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় ডেপুটি রেজিস্ট্রার (যুগ্ম জেলা জজ) ব্যারিস্টার মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ২৬ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে মামলাটির রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখা হয়েছিল। আজ ঐতিহাসিক এই রায় ঘোষণা করা হবে। ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা তদন্ত শুরু করে। ২০১২ সালের ২ এপ্রিল গ্রেফতারের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়। ৩ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেয়। ২৭ জুলাই, ২০১২ তদন্ত সংস্থা বাচ্চুর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টার ও দৈনিক জনকণ্ঠে বাচ্চুর বিরুদ্ধে হাজির হওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ৭ অক্টোবর বাচ্চুর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে ট্রাইব্যুনালের আদেশ। ১১ অক্টোবর মামলার নথিপত্র ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়। ৪ নবেম্বর গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক রাখা, নির্যাতন, দেশান্তর, ধর্মান্তরিত করাসহ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগ গঠন করা হয়। ২৬ নবেম্বর প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য পেশ। ২৬ নবেম্বর প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী শুরু। ১৯ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী ও জেরা সমাপ্ত। ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুরু। ২৬ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শেষ। যে কোন দিন রায়। বাচ্চুর বিরুদ্ধে সর্বমোট ২২ সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন। বিচারিক কার্যক্রম মাত্র ৫৩ দিনে মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভিতে রাখা হয়। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন মোঃ নূর হোসেন।
যুক্তিতর্ক ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পলাতক আসামি বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ২৩ ডিসেম্বর থেকে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান তার পক্ষে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন সম্পন্ন করেন। ২৬ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ২৩, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দিন প্রসিকিউশন এবং ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর দুই দিন আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মোট ৮টি অপরাধের বিষয়ে ২২ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ব্যাপারে যুক্তি (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেছেন বলে জানান প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য ও তথ্যপ্রমাণ পেশ করে আইনগত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রসিকিউটর এ মামলায় আসামি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের আরজি পেশ করেন। এর আগে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ২২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্র নিযুক্ত (ডিফেন্স ল’ইয়ার) আইনজীবী তাদের জেরাও শেষ করেন।
যুক্তিতর্কে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মোঃ আবদুস শুকুর ট্রাইব্যুনালে বাচ্চু রাজাকার নিরপরাধ বলে তুলে ধরেন। প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী আইনী দিক ব্যাখ্যা করে বলেন, এই মামলায় আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে পাওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রসিকিউশন পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে। এ জন্য আসামি সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।
চীফ প্রসিকিউটর ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু সাংবাদিকদের বলেন, গভীর প্রত্যাশা নিয়ে আমরা অপেক্ষা করছিলাম এ রায়ের জন্য। প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করেছে, সেগুলোই বিচারের রায়ে প্রতিফলন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আজ ট্রাইব্যুনালের ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার দিন।
এ মামলার প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের রায় ঘোষণা করা হবে আজ। তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যেসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাচ্চু রাজাকারের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেন তিনি। অন্যদিকে রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবী মোঃ আবদুস শুকুর বলেন, আমি ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্কে যা তুলে ধরেছি তাতে আমার মক্কেল খালাস পাবে।
যারা সাক্ষী ॥ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনার সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এরা হলেনÑ নেপাল চন্দ্র পাঠক, বাচ্চু রাজাকারের হাতে শহীদ চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী জোৎস্না রানী দাশ, মোঃ মোজাহের সিকদার, মোঃ ধলা মাতুব্বর, রঞ্জিত কুমার নাথ বাবু, শহীদ মাধব বিশ্বাসের পুত্র ভক্ত রঞ্জন বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন, প্রফুল্ল রঞ্জন ম-ল, নগেন চন্দ্র ম-ল, প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক তুষ্ট কুমার ম-ল, দেব কুমার দাশ, রওশন আলী বিশ্বাস, একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী (ক্যামেরা ট্রায়াল), বিনোদ চন্দ্র বিশ্বাস, প্রবোধ কুমার সরকার, আব্দুল মান্নান, শহীদ পরিবারের সদস্য সুশীল কুমার পোদ্দার, আবু ইউসুফ সিদ্দিকী পাখি, সত্য রঞ্জন সাহা এবং অসিত বরণ সাহা। তাদের সবার বাড়ি ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মোঃ নূর হোসেন ও জব্দ তালিকার সাক্ষী বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) বুক সর্টার এসএম আমিরুল ইসলাম। আসামিপক্ষ কোন সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।
বাচ্চুর বিরুদ্ধে ৮ অভিযোগ ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) (এ) (সি-আই) (জি) (এইচ) তৎসহ ৪(১) হত্যাজনিত গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত করে। বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে যে ৮টি অভিযোগ গঠন করা হয়Ñ প্রথম, দ্বিতীয় ও অষ্টম অভিযোগে বাচ্চুর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক রাখা ও নির্যাতনের। তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ অভিযোগে হত্যার অভিযোগ। পঞ্চম অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। সাত নম্বর অভিযোগ গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে।
চার্জ-১ ॥ ১৯৭১ সালে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে সকাল অনুমান দশটার সময় রঞ্জিত নাথ ওরফে বাবু নাথ ফরিদপুর শহরে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের অবস্থান ও কার্যকলাপ সংক্রান্ত খোঁজখবর নিতে খাবারসপুর (বর্তমান সাগর ট্রের্ডাস) সংলগ্ন হবি মাতব্বরের দোকানের সামনে গেলে সেখান থেকে আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ও তার সহযোগীরা রঞ্জিত নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে। সেখানে তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বসে ছিল। রাত দুটা-আড়াইটার দিকে জানালার শিক বাঁকা করে রঞ্জিত নাথ ওরফে বাবু নাথ আটক অবস্থা থেকে পালিয়ে আসেন।
চার্জ-২ ॥ ২৬ জুলাই আবু ইউসুফ পাখিকে অপহরণ করে নির্যাতন করা হয়। পাখিকে স্থানীয় রাজাকাররা আলফাডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে ধরে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানী আর্মিদের কাছে সোপর্দ করে। সেখানে আবু ইউসুফ পাখিকে বেলা ১১টার দিকে আসামি বাচ্চু ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ পাকিস্তানী আর্মি মেজর আকরাম কোরাইশীর সঙ্গে মিটিং করতে দেখে। আবু ইউসুফ পাখি স্টেডিয়ামের ভেতরে টর্চার সেলে ১ মাস ১৩ দিন আটক থেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং বহু নির্যাতনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। তার ইঙ্গিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী স্টেডিয়ামের ভেতরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে স্টেডিয়ামের ভেতরে মাটিচাপা দিয়েছে। বহু লাশ নদীতে ও ফরিদপুর শহরে ময়লারগাড়ি নামক স্থানে ফেলে দেয়।
চার্জ-৩ ॥ একাত্তরের ১৪ মে বেলা ৩টার দিকে ফরিদপুর জেলার সালথা (সাবেক নরগকান্দা) থানার অন্তর্গত খাড়দিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু প্রায় ১০-১২ সঙ্গীকে নিয়ে বোয়ালখালী থানার কলারন গ্রামে আক্রমণ করে। সুধাংশু ও তাঁর ছেলে বাড়ির দিকে রওনা হলে বাচ্চুর হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে। এ সময় গুলিতে সুধাংশু হোম রায় নিহত হন। ও তাঁর ছেলে মারাত্মক আহত হন।
চার্জ-৪ ॥ একাত্তরের ১৬ মে পুরুরা নমপাড়ায় বাচ্চু রাজাকার দলবল নিয়ে আক্রমণ চালায়। গ্রামের মাধব চন্দ্র বিশ্বাসের বাড়িতে প্রবেশ করে তারা লুটপাট চালায়। মাধব চন্দ্র বিশ্বাসের বাড়ি থেকে অনুমান ৩০০ গজ পশ্চিমে তুষ্ট কুমার ম-লের বাড়ির পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে বাচ্চু রাজাকার তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে মাধব বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে। বাচ্চু রাজাকারের ভয়ে গ্রাম থেকে ৫শ’ থেকে ৬শ’ হিন্দু ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়।
চার্জ-৫ ॥ ১৯৭১ সালের ৮ জুন বোয়ালখালী থানার নতিবদিয়া গ্রামের সুধীর বিশ্বাসের বাড়িতে প্রবেশ করে বাচ্চু রাজাকার। এ সময় ভয়ে গ্রামের মানুষ পালিয়ে পাটক্ষেতে চলে যায়। ওই বাড়ির মহিলারা পালানোর সময় বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবল দেবী রানী বিশ্বাস ও শোভা রানী বিশ্বাসসহ আরও কয়েক মহিলাকে ধরে ফেলে। এ অবস্থায় বাচ্চু রাজাকার ও তার সঙ্গীয় রাজাকাররা দেবী রানী ও শোভা রানী বিশ্বাসকে অন্যান্য মহিলা থেকে আলাদা করে। সুধীর বিশ্বাস ওরফে গোসাই পদ বিশ্বাসের বাড়িতে তার বসতঘরে নিয়ে বাচ্চু রাজাকার ও তার সঙ্গীয় ৪-৫ রাজাকার দেবী রানী ও শোভা রানীকে পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
চার্জ-৬ ॥ ১৯৭১ সালের ৩ জুন সকাল ১১টায় বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে ২০-২৫ রাজাকার বড় দুটি নৌকা নিয়ে নগরকান্দা থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামে প্রবেশ করে। রাজাকাররা ফুলবাড়িয়া গ্রামের হিন্দুপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে নিরীহ মানুষের মালপত্র লুটপাট করে। এই সময় বাচ্চু রাজাকারসহ তার রাজাকার বাহিনী নিয়ে চিত্ত রঞ্জন দাশের বাড়িতে প্রবেশ করে। তাঁকে ঘর থেকে টেনেহেঁচড়ে বাইরে এনে রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে রশি দিয়ে হাত বেঁধে বাড়ির পূর্ব পাশে পিত্তি গাছের নিচে বাচ্চু রাজাকার তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে চিত্ত রঞ্জনকে হত্যা করে।
চার্জ-৭ ॥ ১৯৭১ সালের ১৭ মে সকাল ৬টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার বাহিনী ৩০-৩২ জন পাকিস্তানী সেনাসদস্য বড় নৌকা নিয়ে ফরিদপুর জেলার হাসামদিয়া হিন্দুপাড়ায় প্রবেশ করে। গ্রামে ঢুকেই শরৎ চন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যমাপদ সাহা, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীলরতন সমাদ্দারকে গুলি করে হত্যা করে। তারা সুবল কয়াল ও মল্লিক চক্রবর্তীকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে হীরালাল সাহা, সূর্য কুমার, নীল রতন সমাদ্দার ও ডা. ননী গোপাল সাহাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেয়ার আগে বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়।
চার্জ-৮ ॥ বাচ্চু রাজাকার ১৮ মে ফরিদপুর জেলার সালথা থানাধীন উজিরপুর বাজারপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে গুরুদাশের মেয়ে অঞ্জলী দাশের ওপর অত্যাচার করে। ভয়ে ও সম্ভ্রম রক্ষার্র্থে অঞ্জলী দাশ বিষপানে আত্মহত্যা করে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সালথা থানার যদুনন্দী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় গুরুদাশ (মৃত), পিতা মৃত কালাচরণ দাশ তাঁর পরিবার-পরিজন নিয়ে এই গ্রামেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। বর্তমানে তাঁর ছেলে দেব কুমার দাশসহ অন্য ছেলেরা পরিবারবর্গ নিয়ে বসবাস করছেন।
১৯৭১ সালে ওই বাড়িতে বিল্ডিংসহ এল প্যাটার্ন একটি টিনের ঘর ছিল। ১৯৭১ সালের ১৮ মে বিকেল বেলা বাচ্চু রাজাকার ও তার সহযোগী ৭-৮ সশস্ত্র রাজাকারসহ গুরুদাশের বাড়িতে আসে। গুরুদাশের বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে অঞ্জলী দাশকে (১৮) তাদের অশুভ লালসা চরিতার্থ করার জন্য অপহরণ করে কাড়দিয়া গ্রামের চাঁন কাজীর বাড়িতে নিয়ে আটকে নির্যাতন করে।
ওই সময় অঞ্জলী দাশ ভয়ে ও সম্ভ্রম রক্ষার্থে তাদের বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে বিষপানে আত্মহত্যা করে। বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হলে মোহাম্মদ কাজী তার সঙ্গে থাকা লোকজন নিয়ে চলে যায়। এই সংবাদ পেয়ে বাচ্চু রাজাকার কয়েক সঙ্গী নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যার পরে গুরুদাশের বাড়িতে আসে। অঞ্জলী দাশের লাশ দ্রুত মাটিচাপা দেয়ার নির্দেশ দেয়। গুরুদাশ কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাচ্চু রাজাকারকে দুই হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে অঞ্জলী দাশের লাশ হিন্দু ধর্ম মতে দাহ করার অনুমতি নেয়।

No comments

Powered by Blogger.