দেশের বাইরে একা বেড়াতে ॥ by শামিমা আক্তার

আমরা বেড়াতে যাওয়া মানেই হয় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দলবেঁধে আর নয়ত পুরোপুরি সপরিবার। সেই ধরাবাধা একঘেয়ে নিয়মটা এইবার একটু ভেঙে দেশ ভ্রমণ হোক একেবারে একা। এখন প্রচ- শীত যা নাকি পৌষের শীত বলে কথা।
ঘরের ভিতর বন্দী থেকে একঘেয়েমি থেকে একটু বদলানো। কাজ করতে করতে বার বার চোখ দুটো বাইরে চলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে প্রাণভরে মিষ্টি রোদটা একটু মেখে কয়েকটা দিন কোথাও একটু... না পাহাড়-জঙ্গল-সমুদ্রের বা অন্য কোন ট্যুরিস্ট বিবরণ দেব না। এইবার বেড়াতে যাওয়াটাকে একটু ব্যক্তিগত বা বিজ্ঞাপনের ভাষায় একটু ‘পার্সোনালাইজ করে তোলা। সবার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়াটা খুব আনন্দের, খুব হুল্লোড়ের, তাতে তো কোন সন্দেহ নেই। সেইভাবে তো অনেকবার বেড়াতে গিয়েছেন, এবার একটু একা দেশ ভ্রমণে বের হলে কেমন হয়?
পরিবার নিয়ে বেড়াতে গেলে দেখা যায় সব জায়গায় যাওয়া যায় না, হয়ত বা কোন বিশেষ স্থানের খাবারের স্বাদ নেয়ার খুবই ইচ্ছা কিন্তু বাবা-মার বায়নার কারণে যাওয়া হয় না। একা বেড়াতে গেলে কিন্তু এই ছোট ছোট অভিযোগগুলো আর থাকবে না। বেড়াতে পারেন পুরোপুরি নিজের মতো করে। বানিয়ে ফেলতে পারেন নতুন বন্ধু, শেয়ার করতে পারেন নিজস্ব ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্জার অনেকে হয়ত ভ্রƒ কুঁচকে ভাবছেন একা একা বেড়াতে যাওয়াটা কতটা নিরাপদ? আসলে বিপদ আপদের প্রশ্নটাও বেশির ভাগ সময়ই সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। বাড়িতে বা চেনা শহরের পথেঘাটেও বিপদের সম্ভাবনা কি একেবারেই নেই। তবে এটাও অস্বীকার করা চলে না যে, অচেনা জায়গায় বিপদের আশঙ্কা খানিকটা হলেও থাকে। কিন্তু বিপদ যেমন আছে, ঠিক তেমনই আছে বিপদ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা। সঠিক পরিকল্পনা এবং সতর্কতার যুগলবন্দী আপনার ট্রিপকে করে তুলতে পারে দারুণ এক্সাইটিং।
প্রথমেই যা দরকার তা হচ্ছে অনুপ্রেরণা। নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন। উৎসাহ আর সাহস যোগান। পুরো ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে যাবে যদি একা বেড়াতে যাওয়ার কোন গাইডবুক পড়ে নিতে পারেন। অন্যান্য পর্যটক যাঁরা একা দেশ ভ্রমণ করেছেন তাদের লেখা ভ্রমণকাহিনী পড়লেও অনেক জরুরি জিনিস জানতে পারবেন। নিজের পরিচিতদের গ-ির মধ্যে যদি এমন কেউ থাকেন যিনি আপনার পছন্দের জায়গাটা আগে ঘুরে আসছেন, তাঁর কাছ থেকে টিপস, ট্র্যাভেল এজেন্টের ঠিকানা এবং অন্যান্য যোগাযোগের ঠিকানা নিয়ে নিন। কাছাকাছির মধ্যে, একটু দূরে বা বিদেশে যেখানেই যাওয়ার প্লান থাকুক না কেন, সেই জায়গাটা সম্বন্ধে একটু পড়শোনা করে নেয়াটা কিন্তু মাস্ট। ট্যাভেলার্স গাইড বুক দেখে দর্শনীয় স্থান, শপিংস্পট এবং আপনি আর যে জায়গায় ইন্টারেস্টড সেগুলো ম্যাপে মার্ক করে রাখুন। ট্যুরের সময়সীমা অনুযায়ী একটা খসড়া পরিকল্পনা ছকে ফেলুন। ভারতের মধ্যে হিন্দি আর ইংরেজীতে মোটামুটি কাজ চলে যায়। কিন্তু এমন কোনও বিদেশী জায়গায় যদি যান যার ভাষা সম্বন্ধে আপনি বিন্দু বিসর্গ জানেন না তাহলে একটা সহজ পরিভাষার বই কিনে নিলে খুব সুবিধা হবে। যদি নিরাপত্তা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন তা হলে আস্থাভাজন ট্যাভেল এজেন্ট নির্দেশিত ট্যুর বা ক-াক্টেড ট্যুরে যাওয়াটাই সবচেয়ে নিরাপদ। চেনাশোনা সেরাটোপে থাকতে পারবেন, সঙ্গীরও অভাব হবে না।
হোটেল বাছাই করার সময়, সেখানকার কমফোর্টের সঙ্গে সঙ্গে সিকিউরিটির দিকেও দৃষ্টি রাখুন। যদি আপনার পরিচিত কেউ আগে এখানে থেকে থাকেন। তা হলে অবশ্যই সেই রেফারেন্স ব্যবহার করুন। সরকারী রেস্ট হাউস বা ট্যুরিস্ট লজে সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা থাকে, সেখানেও অ্যাকোমোডেশনের চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে অচেনা জায়গায়, ছোট হোটেলে শুধু সস্তায় পাচ্ছেন বলেই থেকে যাবেন না। রুমে চেকইন করার সময় ভাল করে দেখে নিন সমস্ত দরজা এবং জানালার ছিটকিনি এবং লক ভাল করে কাজ করছে কিনা। ঘরের দরজায় সিকিউরিটি চেন এবং পিপহোল থাকাও আবশ্যক। আপনার পছন্দের জায়গায় রাতে বেড়াবার আকর্ষক জায়গা থাকলেও বেশি রাত করে হোটেলে ফিরবেন না। যদি রাত হয়েও যায় তাহলে হোটেলের রিসেপশনে অনুরোধ করুন আপনার জন্য ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করতে। অচেনা জায়গায় বেশি রাতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করাই ভাল। দিনের বেলা বেড়াতে যাওয়ার সময় হোটেলের স্টাফের কাছ থেকে জায়গাটা সম্বন্ধে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সম্বন্ধে জেনে নিন। সঙ্গে রাখুন গাইড বই এবং ম্যাপ। দিনের বেলা বাস বা ট্রেন স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন। কোন ব্যাপারে কনফিউজড লাগলে স্থানীয় কোন মানুষের সাহায্য নিন। কিন্তু অতি উৎসাহী কোন অচেনা লোককে বিশেষ পাত্তা দেবেন না। যদি কখনও মনে হয় রাস্তা বা দিক হারিয়ে ফেলেছেন, তাহলে কোন মহিলার কাছ থেকে কাছাকাছির কোন বাসস্ট্যা-ের ডিরেকশন জেনে নিন। একা বেড়াতে যাওয়ার সময় পোশাক-আশাকের দিকে একটু বিশেষ নজর দিন। পাবলিক প্লেস বা ধর্মস্থানে একটু রক্ষণশীল পোশাক পরাই স্রেফ, নিরাপদ। বিচে গেলে সুইসস্যুট নিতে পারেন, তবে প্রাইভেট বিচ ছাড়া সেটা না পরাই ভাল। সাঁতারের পোশাক পরলেও সঙ্গে কাভারড বিচওয়্যার বা সারং পরুন।

No comments

Powered by Blogger.