সামাজিক উন্নয়নের সূচকেও বাংলাদেশ শীর্ষে- অর্থনীতির মতো সূচিত হয়েছে নতুন বিপ্লব by শফিকুল ইসলাম জীবন

বাংলাদেশের অর্থনীতির মতো সামাজিক খাতেও সূচিত হয়েছে নতুন বিপস্নব। বিশ্বব্যাংক বলেছে, কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের আর কোন শিশুকে অপুষ্টি নিয়ে মরতে হবে না।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নের সূচকগুলোতে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। শিা, স্বাস্থ্য, পরিবহন খাতে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়ায় ২০১৫ সালের মধ্যে জাতিসংঘের মিলেনিয়াম উন্নয়ন ল্যমাত্রা অর্জনের েেত্র বাংলাদেশ শীর্ষে থাকবে বলে দেশের উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মতাগ্রহণের পর আনত্মর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া গেছে। বর্তমান সরকারের আমলেই বিশ্বব্যাংক সচল করেছে কমপ ে২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের ল্যে বিশ্বব্যাংক ৩৭টি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সক্রিয় রয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাসত্মবায়নে বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।
শিার মান ও নারী শিা বাড়ানোর ল্যে বর্তমান সরকার সংশিস্নষ্ট সকল প্রকল্প বাসত্মবায়ন কার্যক্রম জোরদার করেছে। ২০০৯ সালেই স্কুলগুলোতে মেয়েদের ভর্তির হার প্রায় ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। বিগত সতেরো বছরের মধ্যে মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার সামগ্রিকভাবে প্রায় ৭০ ভাগ বেড়েছে। ফলাফলের দিক থেকেও এখন ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। মেয়েদের শিার হার বেড়ে যাওয়াকে উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নারী শিা বেড়ে যাওয়ার ফলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাপকহারে কমে গেছে বাল্য বিবাহের হার। গড়ে উঠেছে যৌতুকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন। পুরম্নষ ও নারীর বৈষম্য কমেছে। নারীরা এখন উচ্চ বেতনে চাকরি করছে ও আর্থিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
নারী শিার প্রসার শিশুদের স্বাস্থ্য রায় বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছে। অপুষ্টিজনিত রোগবালাই কমে আসায় শিশুমৃতু্যর হার কমেছে; বেড়েছে জন্মহার। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের ৰেত্রে নারীরা এখন সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করছে। এসব অর্জনের ধারাবাহিকতা রায় বর্তমান সরকার মেয়েদের বিনাবেতনে পড়ালেখা করার সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি অর্থবৃত্তি কর্মসূচী জোরদার করছে। এতদিন দেশের ৫০৭টি উপজেলার মধ্যে ১২১টি উপজেলায় ওই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তা দিত। বর্তমান সরকার মতাগ্রহণের পরপরই বিশ্বব্যাংক সমগ্র দেশেই ওই প্রকল্প ছড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং নরওয়ের এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশনও সহায়তা দিচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধী মেয়ে এবং দরিদ্র ছেলেদেরও প্রথমবারের মতো এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
জাতীয় পুষ্টি প্রকল্পের আওতায় সরকার ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এসব বিনিয়োগের ফলে অচিরে বাংলাদেশ থেকে অপুষ্টিজনিত সমস্যা চিরতরে দূর হবে বলে বিশ্বব্যাংক আশা করছে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পনেরো বছরমেয়াদী এ প্রকল্প বাসত্মবায়নে সরকার বিভিন্ন পদপে নিয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন নিরাপদ খাবার পানি, উন্নত চিকিৎসাসেবা এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহে সবচেয়ে এগিয়ে আছে।
সামাজিক খাতের বিপস্নবাত্মক উন্নয়নে শিার পাশাপাশি পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক অবদান রাখছে। একমাত্র যমুনা সেতু নির্মাণের ফলেই কমপ েতিন কোটি মানুষ দেশের পরিবহন ও অবকাঠামো নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়েছে। সেতু হওয়ার আগে প্রতিদিন ফেরি দিয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের জন্য ৩৬ ঘণ্টা পর্যনত্ম অপো করতে হতো। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা যমুনা সেতু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে এখন চার ঘণ্টায় ঢাকায় আসা যায়। পরিবহন খরচ যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে পণ্যের সরবরাহ। এখন মানুষের অপো বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু। এ সেতুটি গোটা দেশের সমাজ ও অর্থনীতিকে বাংলাদেশের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করবে।

No comments

Powered by Blogger.