কাল থেকে কার্যকর ॥ দূরপাল্লার বাসভাড়া কিলোমিটারে বাড়ল ১০ পয়সা

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর দূরপাল্লার পথে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ হিসেবে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া এক টাকা ৩৫ পয়সার স্থলে নির্ধারণ করা হয়েছে এক টাকা ৪৫ পয়সা।
আগামী মঙ্গলবার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। রবিবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ‘ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত কস্টিং কমিটি’র বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, নতুন এ ভাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। এর আগে মালিক সমিতিকে পরিবহন ভাড়া না বাড়াতে আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তবে পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যরা সরকারী সিদ্ধান্তে খুব একটা খুশী নন। তাঁরা বলছেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কারণে সরকার ইচ্ছামতো ভাড়া নির্ধারণ করে অনেকটা চাপিয়ে দিয়েছে। তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিবেচনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রতি কিলোমিটারে ২৩ পয়সা ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করে কস্টিং কমিটি। ১৫ ফেব্রুয়ারি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রী তা মানতে রাজি হননি। তিনি ২৩ পয়সা থেকে কমিয়ে নতুন করে প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ দেন। এই প্রেক্ষিতে দূরপাল্লার ভাড়া ১৫ পয়সা বাড়াতে দ্বিতীয় দফা প্রস্তাব দেয়া হয়। এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক কয়েক দফা যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে মালিক সমিতি।
গত ৩ জানুয়ারি সরকার পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটারে ৫ টাকা করে এবং ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৭ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। নতুন দর অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেল ৬৮ টাকা, কেরোসিন ৬৮ টাকা, অকটেন ৯৯ টাকা এবং পেট্রোল ৯৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি আন্তঃজেলা রুটে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা করে বাড়িয়ে ১ টাকা ৩৫ পয়সা করা হয়। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলাচলকারী বাস, অটোরিকশা ও ট্যাক্সির মতো গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সর্বশেষ ঘোষণা আসে ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। সে সময় বাস ও মিনিবাসের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি পাঁচ পয়সা বাড়িয়ে এক টাকা ৬০ পয়সা ও এক টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা। আর বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় সাত টাকা, মিনিবাসে পাঁচ টাকা। একই সময়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় প্রথম দুই কিলোমিটারের পর থেকে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ১৪ পয়সা বাড়িয়ে সাত টাকা ৬৪ পয়সা করা হয়। আর বিরতিকালের ভাড়া বাড়িয়ে করা হয় প্রতি মিনিটে এক টাকা ৪০ পয়সা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে মালিক পক্ষ ও যোগাযোগমন্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘ সময় চলে যুক্তি তর্ক। মালিক সমিতির বক্তব্য ছিল-২৩ পয়সার কম নির্ধারণ করা হলে পরিবহন সেক্টর লোকসানের মুখে পড়বে। লোকসান দিয়ে বাস চালানো সম্ভব হবে না। একারণে অনেক পরিবহন কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন-সরকারের শেষ সময়ে ২৩ পয়সা পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে ভালভাবে নেবে না। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই ১০ পয়সার বেশি ভাড়া বাড়ানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তাহলে কেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো, মন্ত্রীর কাছে এই প্রশ্ন ছিল পরিবহন নেতাদের।
কাক্সিক্ষত ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে মালিক সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় একমত না হওয়ায় বিকল্প প্রস্তাব আসে পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে। তারা বলেন- ফিটনেস, ট্যাক্স ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে গাড়ির জরিমানা মওকুফ করার সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামে সিএনজি গাড়ির নীতিমালা প্রত্যাহার করে ভাড়া বাড়াতে হবে। কারণ এই দুই সিটি কর্পোরেশনে এখন ৫০ ভাগের বেশি গণপরিবহন চলাচল করে জ্বালানি তেলে। এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন-পরিবহনের জরিমানা মওকুফ করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামে পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুমতি নিয়ে করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। এছাড়া মালিকপক্ষ পরিবহন শিল্পের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
তেলের দাম বৃদ্ধির পর তাৎক্ষণিকভাবে গণপরিবহনের নতুন ভাড়া নির্ধারণ না হলেও রাজধানীতে বাসযাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে চার জানুয়ারি থেকেই। দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটেও ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ আছে। এবারের মতো আগেও মন্ত্রী মালিক সমিতিকে সরকারী সিদ্ধান্তের আগে ভাড়া না বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু কথা দিয়ে রাখেননি মালিকপক্ষ। সরকারী ঘোষণার আগেই দূরপাল্লার পথে বাসের ভাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও দূরত্বভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.