অভিষেক ভাষণে বিলাওয়াল- স্বৈরশাসকদের জনগণের অধিকার হরণ করতে দেওয়া হবে না

মা বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর পঞ্চম বার্ষিকীতে জনসভায় বক্তৃতার মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনীতিতে অভিষিক্ত হলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
আর এ বক্তব্যেই পাকিস্তানের জনগণের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি। তিনি বলেন, “তার দল পাকিস্তানকে ছেড়ে যাবে না বা স্বৈরশাসকদের জনগণের অধিকার হরণ করতে দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসীদের জনগণের ‍অধিকার ছিনিয়ে নেওয়াকে প্রতিহত করা হবে।”

বৃহস্পতিবার পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা, কর্মী ও সমর্থকসহ পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে  বেনজির ভুট্টো ও প্রেসিডেন্ট আসিফ আলির ছেলে বলেন, “আজকে আমি গারহি খুদা বকশের শহীদের সঙ্গে। আজকে আমি ‍আমার মা ও নানার সঙ্গে। জুলফিকার আলি ভুট্টো ও বেনজির ভুট্টো আজও আমাদের মাঝে বেচে আছে।”

বেনজির ভুট্টোর প্রতি সম্মান ও বিলাওয়ালের বক্তব্য শোনার জন্য সিন্ধু প্রদেশের গারহি দেরা বকশে  ভুট্টো পরিবারের কবরস্থানে দুই হাজারের বেশি লোক সমবেত হয়েছিল।

২৪ বছর বয়সী বিলাওয়াল বলেন, “দেশে দুই শক্তি রয়েছে। একপক্ষ সঠিক পথে আরেক পক্ষ মিথ্যার পথে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা খুব কঠিন একটি পথ বেছে নিয়েছি। আমাদের পথ হচ্ছে গণতন্ত্র। যে পথে চলতে শিখিয়েছেন বেনজির ভুট্টো। আমরা সেখানে যাব যেখানে একটি উজ্জ্বল ও অগ্রসর পাকিস্তান আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। পিপিপি গণতন্ত্র এনেছে এবং আমরাই গণতন্ত্রকে রক্ষা করব।”

কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা পিপিপির লাল, কালো ও সবুজ রংয়ে সাজানো মঞ্চে বক্তব্য দেন অক্সফোর্ড পড়ুয়া বেনজির-জারদারি পুত্র। নজরদারি হেলিকপ্টার মঞ্চের ওপর দিয়ে চক্রর দিতে থাকে। এ সময় পুলিশ কমান্ডো ছিল সর্বোচ্চ সতর্ককর্তায়। স্নিফার (অনুসন্ধিৎসু) কুকুর দিয়ে তল্লাসি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী।

পুলিশ জানিয়েছে, ১৫ হাজারের বেশি কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছে এবং মাঠে ছিল আধাসামরিক বাহিনীর ৫০০ সদস্য।

পাকিস্তানে ১৯৭৩ সালের সংবিধান পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারিদারির নেতৃত্বে পাকিস্তান সমৃদ্ধ হবে বলে হবে উল্লেখ করেন পিপিপির কনিষ্ঠ নেতা ‍বিলাওয়াল। তিনি দাবি করেন, “পিপির সময়ে অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকে ভাত-রুটি, পোশাক পাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত পিপিপির কাজ শেষ হবে না।”

“পিপিপি খুবই ভালো অর্থনৈতিক নীতি হাতে নিয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে বৈশ্বিক মন্দা চলছে। সন্ত্রাসবাদের মতো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু এখনও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। পাকিস্তানের জন্য ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা প্রয়োজন”- বলেন পিপিপি চেয়ারম্যান।

স্বাধীন বিচার বিভাগে পিপিপির সমর্থনের কথা ‍উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাসন করা নয়, ন্যায় বিচার করা বিচার বিভাগের দায়িত্ব।”

বেলুচিস্তান নিয়েও কথা বলেন বিলাওয়াল। তিনি বলেন, সরকার বেলুচিস্তান সংকট নিয়ে সচেতন রয়েছে এবং একটি আইন পাস করেছে। প্রদেশটির বাসিন্দারা এতে উপকৃত হব।”

পিপিপি সব দলের সঙ্গে কাজ করতে চায় বলে উল্লেখ করে জারদারি পুত্র বলেন,“সমঝোতার নীতি হচ্ছে তাদের বড় হাতিয়ার। অনেকে ঘৃণার রাজনীতির আশ্রয় নেয়। তারা ভাবে এটা করে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে। কিন্তু তারা জানেন না, রাজনীতি নাম ঘৃণা নয়, ভালবাসা।”

২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওলাপিন্ডিতে নির্বাচনী সমাবেশে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন পাকিস্তানের দুই বারের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে দোষীসাব্যস্ত করা হয়নি।

তবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রী কামার জামান কায়রা বলেছেন, “এক সন্দেহভাজন আততায়ী চালকবিহীন বিমান হামলায় নিহত হয়েছে এবং অন্যান্যরা কারাগারে রয়েছে।”

মা নিহত হওয়ার সময় বিলাওয়ালের বয়স ছিল ১৯ বছর। ২৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে ‍অংশ নিবেন ‍না বিলাওয়াল। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ২৫ বছরে পা দিচ্ছেন বেনজির-জারদারি একমাত্র এ পুত্র।

সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থাকে পরাজিত করে পাকিস্তানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পিপিপির জন্য সমর্থন চেয়েছেন বিলাওয়াল। বিলাওয়াল পিপিপিকে সন্ত্রাসের জন্য বড় বাধা হিসেবে অভিহিত করেন।

নিজের  মায়ের মৃত্যুর জন্য সাবেক সামরিক শাসক মোশাররফকে দায়ী করেন বিলাওয়াল। তিনি বলেন, “সাবেক সামরিক শাসক মোশাররফ ইচ্ছা করেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল রেখে বেনজিরকে হত্যা করেছে।”

২০১০ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করা যেত এবং মোশাররফ সরকার ভুট্টোকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মোশাররফ হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানের তালেবান প্রধান বাইতুল্লাহ মেহসুদকে অভিযুক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.