পবিত্র কোরআনের আলো-হজ পালন সম্পর্কে আরো কিছু বিধিবিধান

১৯৭। আল-হাজ্জু আশ্হুরুম মা'লূমাত; ফামান ফারাদ্বা ফীহিন্নাল হাজ্জা ফালা রাফাছা ওয়ালা ফুসূক্বা ওয়ালা জিদালা ফিল হাজ্জ; ওয়ামা তাফ্'আলূ মিন খাইরিঁ ইয়া'লাম্হুল্লাহ; ওয়া তাযাওয়্যাদূ ফা-ইন্না খাইরায যাদিত তাক্ব্ওয়া; ওয়াত্তাক্বূনি ইয়া ঊলিল আল্বাব।


১৯৮। লাইসা 'আলাইকুম জুনাহুন আন তাব্তাগূ ফাদ্ব্লাম মির রাব্বিকুম; ফা-ইযা আফাদ্ব্তুম মিন 'আরাফাতিন ফায্কুরূল্লাহা 'ইন্দাল মাশ্'আরিল হারাম; ওয়ায্কুরূহু কামা হাদাকুম; ওয়া ইন কুন্তুম মিন ক্বাব্লিহী লামিনাদ্ব দ্বল্লীন।
১৯৯। ছুম্মা আফীদ্বূ মিন হাইছু আফাদ্বান্নাসু ওয়াস্তাগফিরুল্লাহা ইন্নাল্লাহা গাফূরুর রাহীম। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৭-১৯৯]

অনুবাদ
১৯৭। হজের মাসগুলো সুপরিচিত। সেই সময় যে ব্যক্তি হজ আদায় করার মনস্থ করবে, তার জানা উচিত, হজের ভেতর যৌন সম্ভোগ নেই। নেই কোনো অশ্লীল গালিগালাজ ও ঝগড়াঝাটি। আর যত ভালো কাজ তোমরা আদায় করো, আল্লাহ তায়ালা তা জানেন। হজের জন্য তোমরা পাথেয় (অর্থকড়ি) জোগাড় করে নেবে, যদিও তাকওয়াটাই সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়। হে বুদ্ধিমান মানুষ! তোমরা আমার প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও।
১৯৮। হজ পালন করতে গিয়ে তোমরা যদি আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো, অর্থাৎ সৎ পথে আর্থিক লাভবান হতে চাও, তাহলে তাতে কোনো দোষ নেই। অতঃপর তোমরা যখন আরাফাতের ময়দান থেকে ফিরে আসবে, তখন 'আশয়ারে হারাম' (মুজদালিফা)-এর কাছে এসে আল্লাহকে স্মরণ করবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদের পথ দেখিয়েছেন, যদিও তোমরা এর আগে পথভ্রষ্টদের দলে শামিল ছিলে।
১৯৯। তারপর তোমরা সেখান থেকে ফিরে এসো, যেভাবে অন্য হজ পালনকারীরা ফিরে আসে। আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ভুলত্রুটি মাফ করে দেন; তিনি বড়ই দয়ালু।

ব্যাখ্যা
১৯৭ নম্বর আয়াতে হজের মাসকে প্রসিদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ হজ আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। যেসব নিয়মকানুন আগে প্রচলিত ছিল, এর অনেক কিছুই ইসলাম অনুমোদন করে। শুধু যেখানে যেখানে সংশোধন বা পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলোই বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রচলিত নিয়ম থেকে ইসলাম যা অনুমোদন করেছে, তা হলো শাওয়াল মাসের ১ তারিখ থেকে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত হজের মাস। শাওয়ালের আগে হজের ইহরাম বাঁধা মাকরুহ। হজের সর্বশেষ ক্রিয়া 'তাওয়াফে জিয়ারত', যা জিলহজ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে সমাধা করতে হয়।
হজে নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তবে যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই আয়াতের একপর্যায়ে হজযাত্রায় পাথেয় হিসেবে অর্থকড়ি সঙ্গে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ হজ পালনকারীরা যদি আগে থেকেই প্রয়োজনীয় অর্থকড়ি সঙ্গে না নেন, তাহলে সহযাত্রীদের বিরক্ত ও বিব্রত হওয়ার কারণ সৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, তাকওয়া বা দায়িত্বনিষ্ঠতাই প্রকৃত পাথেয়। অর্থকড়ির অভাব নিয়েও মানুষ হজ করতে পারে। সে জন্য তাকওয়া অবশ্যই থাকতে হবে; অন্যের ওপর নির্ভর করার মনোভাব পরিহার করে চলতে হবে।
১৯৮ নম্বর আয়াতে দুটি বিতর্কিত বিষয়ের ফয়সালা দেওয়া হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে হজ একপর্যায়ে বাণিজ্যিক মেলায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। মক্কার মানুষ মূলত ব্যবসায়ী ছিল এবং হজকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্য জমিয়ে তোলার ধান্দা করত। ইসলামের আগমনের পর এ ব্যাপারে মুসলমানদের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়, ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে আদৌ কোনো ব্যবসায়িক কাজ বৈধ হবে কি না, এ ব্যাপারেই আলোচ্য আয়াতে ফয়সালা দেওয়া হয়েছে- হজ পালনের সময় ব্যবসায়িক কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়, তবে হজ হতে হবে হজের উদ্দেশ্যে; ব্যবসার উদ্দেশ্যে নয়। ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই এখানে মূল লক্ষ্য থাকতে হবে। এই আয়াতে আরেকটি বিষয় এসেছে- আরাফাতের ময়দানে গমন এবং মুজদালিফায় বিরতি দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ। ইসলামপূর্ব যুগে কুরাইশরা আরাফাতে যেত না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.