নীল দিগন্তে বিলীন হয়ে গেলেন সুনীল by রক্তিম দাশ

ইট, কাঠ, কংক্রিটের পৃথিবীকে ছেড়ে নীল দিগন্তের পথে রওনা দিলেন নীললোহিত। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পিস হেভেনের হিমঘর থেকে বার করে আনা হয় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের `কৃত্তিবাস` সুনীল গাঙ্গুলির নিথর দেহ।

এদিন সকাল ৯টায় পিস হেভেন এসে উপস্থিত হন কবি পুত্র সৌভিক, কবি শ্রীজাত, কবি সৌমিত্র মিত্র। তাকে শেষবার দেখার জন্য পিস হেভেনের সামনে ফুল, মালা হাতে জড়ো হয়েছিলেন অগণিত ভক্ত, পাঠক। অশ্রুসজল চোখে হাজার হাজার সুনীলপ্রেমী বিদায় জানালেন তাদের প্রিয় সাহিত্যিককে৷
এরপর তার মরদেহ ১০টা ৪৫মিনিটে  নিয়ে যাওয়া হয় তার কর্মক্ষেত্র আনন্দবাজার পত্রিকার দফতরে। সেখান থেকে বেলা ১১টায় রবীন্দ্রসদনে নেওয়া হয় মরদেহ— সেখানে তখন লাখো সাহিত্য অনুরাগী সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন।

রবীন্দ্রসদনের বারান্দায় মরদেহ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য রাখা হয়। একে একে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান অভিনতা দীপঙ্কর দে, মনোজ মিত্র, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কবি শঙ্খ ঘোষ, শ্রীজাত, কৃষ্ণা বসু ও জয় গোস্বামী প্রমুখ।

পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি শ্রদ্ধা জানান। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু ও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কবির মরদেহে মাল্যদান করেন।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান উপ-হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে লক্ষ্মী চক্রবর্তী।
সবশেষে বেলা ১২টায় শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এরপর তার নেতৃত্বে শোকমিছিল শুরু হয়।

এরপর আলিপুরে সাহিত্য অ্যাকাডেমি হয়ে বেলা ২টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সড়কের ধারে অগনিত মানুষ সুনীলের এই শেষযাত্রার সাক্ষী রইলেন। সেখনে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ২ট ২০ মিনিটে। তিনি ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না বলে, শ্মাশানে তাঁর জন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়নি এদিন।

এদিকে, বুধবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে বাড়িতে এসে পৌঁছন তার ছেলে সৌভিক। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, সুনীল গাঙ্গুলির শেষ ইচ্ছা থাকলেও তাঁর দেহ মেডিকেল কলেজে দান করা হচ্ছে না৷ দেহ-দানের পরিবর্তে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয় ৷ বোস্টন থেকে ফিরে মা’র সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন সুনীল-পুত্র সৌভিক ৷

তবে, নিজের লেখনীতে এবং বাস্তব জীবনে ঘোরতর নাস্তিক সুনীল গাঙ্গুলির প্রতি সম্মান জানিয়েই তাঁর কোনও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার৷ পরিবর্তে হবে স্মরণসভা৷

অনেক রহস্যভেদ না করেই ছোটদের কাকাবাবু চলে গেলেন।  বাকি রয়ে গেল `ছোটদের মহাভারত` লেখার কাজটা।

No comments

Powered by Blogger.