কালজয়ী পুরাতাত্তি্বক লুই বিনফোর্ড by আদনান আরিফ সালিম

অমোঘ নিয়তির কাছে নতি স্বীকার করে প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞানী ও প্রত্নতাত্তি্বক গবেষক লুই রবার্টস বিনফোর্ড নিজ জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কির্কসভিলে ১১ এপ্রিল ২০১১ তার কর্মময় জীবনের ইতি টেনেছেন। ১৯৬০ সালের দিকে সামাজিক বিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব ও নৃবিজ্ঞানের গবেষণাতে সরাসরি বিজ্ঞানের বিধির ব্যবহার করে এক বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন লুই বিনফোর্ড।


দীর্ঘ ৫০ বছরের বৈচিত্র্যময় কর্মজীবনে তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ আর গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা দেড় শতাধিক। আলাস্কার নুমিয়ান্ট এস্কিমোদের ওপর দীর্ঘ গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতায় তিনি প্রত্নতাত্তি্বক তত্ত্ব ও অনুশীলনে নতুন একটি ধারা উন্মোচনের পথ খুঁজে পান, যা তাকে গবেষণার পরিসরে কিংবদন্তির আসন করে দেয়। তার সঙ্গে ভারতের পুনার ডেকান কলেজের গবেষক ও প্রত্নতাত্তি্বকদের একটা ভালো যোগ ছিল। সমাজ গবেষণার অন্যতম বিষয় হিসেবে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বাইরে ছিল না বরং এটি উপনিবেশবাদী শক্তির ভিত্তিমূলকেই ইস্পাত দৃঢ় করতে কাজ করেছে, যা থেকে তিনিই প্রথম বেরিয়ে আসার পথ দেখান। প্রত্নতত্ত্বের প্রাথমিক দিকে প্রচলিত নীতির কঠোর সমালোচনার মাধ্যমে আবির্ভাব ঘটেছিল ক্ষণজন্মা গবেষক লুই বিনফোর্ডের। তিনি অতীত মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বস্তুগত উপাদানের উপস্থাপননির্ভর সাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে সংস্কৃতিকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার মাধ্যমে অতীত গবেষণার প্রস্তাবনা আনেন। সাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক ধারায় অতীত চর্চার ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে ঔপনিবেশিক শক্তি কোনো অঞ্চলে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করার পর উপনিবেশকে বৈধতার জন্য ওই স্থানের সঙ্গে তাদের অতীত সম্পর্ক প্রমাণের ঐতিহাসিক সত্তাকে আগে থেকেই নির্মাণ করে নিতেন। আর তাকে বাস্তবসম্মত করতে ব্যবহার করতেন প্রত্নতত্ত্ব বা নৃবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো। এখানে তারা ইউরোপীয় দর্শনের দুটি ধারা বিশেষত দৃষ্টিবাদ ও প্রত্যক্ষণবাদকে গুরুত্ব দিয়ে ইতিহাস নির্মাণে অন্ধের যষ্ঠির মতো অতীত মানুষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট বস্তুগত উপাদানকে এক এবং একমাত্র পথ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। তাদের কর্মকাণ্ডে বাদ সাধেন বিনফোর্ড, তিনি আগের এসব বিষয়কে নাকচ করে দিয়ে সংস্কৃতিকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার কথা বলেন, যেখানে পরিবেশের ভূমিকাও অনেক গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। ফলে পুকুর কাটা বা কবর খোঁড়ার গর্ত করা আর প্রয়োজনীয় বস্তুর আলোকে ইচ্ছামতো তৈরি করা ইতিহাস রচনার মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠীর অতীতকে খেলো করার পথে অনেকটা কাঁটা বিছিয়ে দিয়ে ইউরোপীয় প্রত্নতাত্তি্বকদের চক্ষুশূল হন বিনফোর্ড। তারা বিনফোর্ডের প্রবর্তিত ঘরানাকে অনেকটা হাস্যকর প্রতিপন্ন করে নব্য ধারার প্রত্নচর্চা বলে নামকরণ করে। নতুন প্রজন্মের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নৃবিজ্ঞানের গবেষকদের কাছে বিনফোর্ড একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাদৃত।
aurnabmaas@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.