জীবন নিয়ে বাণিজ্য

জীবন বাঁচানোর জন্য কিনে আনা ওষুধই এখন জীবন কেড়ে নিচ্ছে। ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। দেদার বিক্রি হচ্ছে ওষুধের দোকানে। অনেকেই এই ওষুধ সেবন বা ব্যবহারের পর আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কিন্তু এদের দমন বা নিয়ন্ত্রণের জোরদার কোনো উদ্যোগ নেই।


এক শ্রেণীর অসৎ ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বাজারে বিক্রি করছেন এই ভেজাল মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যবসা জমজমাট। এতে বহু জীবন অকালে ঝরে গেলেও ওষুধ প্রশাসন তা নিয়ন্ত্রণে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ওষুধ প্রশাসনের বক্তব্য হচ্ছে, প্রয়োজনীয় লোকবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে তারা কিছুই করতে পারছে না। কিন্তু সেখানে তাদের সততা ও আন্তরিকতার অভাব ভেজাল ওষুধ বিপণনে কতটা ভূমিকা রাখছে, তা তারা জানায়নি। শুধু ওষুধ প্রশাসন নয়, আইনশৃঙ্খলাসহ অনেক প্রশাসনই প্রথমেই যে খোঁড়া যুক্তিটি দেয়, তার প্রথমটি হচ্ছে 'লোকবলের অভাব'। কিন্তু যেখানে যে লোকবল আছে, তারা ঠিকমতো কাজ করে কি না কিংবা অর্থের লোভে উল্টো কাজ করে কি না, সে ব্যাপারে কেউ কথা বলে না। লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন, কিন্তু যে লোকবল আছে তারা যাতে ঠিকমতো কাজ করে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। অনেকের মতে, ওষুধ প্রশাসন ঠিকমতো কাজ করলে বাজারে ভেজাল ওষুধের বিপণন অনেকাংশেই কমে যেত। এই ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের কারণে অকালে জীবন দিতে হতো না বহু মানুষকে। তবে এ কথাও সত্য, বর্তমান ওষুধ প্রশাসন খুবই দুর্বল। বাংলাদেশে মোট ৭৯৮টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথিক ২৭০টি, হোমিওপ্যাথিক ৭৮টি, আয়ুর্বেদীয় ১৭০টি, ইউনানি ২৭০টি ও হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ১০টি। এ ছাড়া সারা দেশে লাখ লাখ ওষুধের দোকান রয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের জনবলের মধ্যে আছে_মহাপরিচালক ও পরিচালক ছাড়া ড্রাগ সুপার চারজন, সহকারী পরিচালক ১৯ জন ও ইন্সপেক্টর পাঁচজন। এই সীমিত জনবল দিয়ে এই বিশাল ওষুধ-বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই দুঃসাধ্য। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকেও কিছু ভূমিকা পালন করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বাড়াতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি নামকরা ওষুধের দোকান থেকে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছিল। ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছিল। কিন্তু জরিমানা আদায়ের পরও ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ হয়নি। এর আগে ভেজাল ওষুধের কিছু কারখানায়ও অভিযান চালানো হয়েছিল এবং সেসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই অভিযানকে আরো নিয়মিত করা প্রয়োজন। ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের পাশাপাশি রয়েছে বাড়তি দামে ওষুধ বিক্রির প্রবণতা। সময় ও সুযোগ বুঝে বিক্রেতারা ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেয়।
মানুষের জীবন নিয়ে যে ব্যবসা, তার সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করার প্রশ্নই ওঠে না। অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা আপসেরই নামান্তর। তাই আমরা চাই, বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সম্ভাব্য সব কিছুই করবে।

No comments

Powered by Blogger.