শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া বন্ধ হোক-শিক্ষকের নির্মম আচরণ

শিশুদের দুষ্টুমি প্রাণের লক্ষণ। ওরা হাসবে, খেলবে, হইচই করবে। আবার পড়ায় মনোযোগীও হবে। এটাই তাদের ধর্ম। বাসাতেই হোক বা স্কুলে—সব সময় ওদের চঞ্চলতার প্রকাশ থাকবেই। একে অন্যায় হিসেবে দেখা উচিত নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে অনাদিকাল থেকে শিশুদের প্রাণচাঞ্চল্যকে বেয়াদবি হিসেবে দেখা হয়। তাদের পিটিয়ে মানুষ করার সর্বনাশা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। ফল হয় বিপরীত।


মারের ভয়ে শিশুদের অনেকে হয়ে পড়ে নির্জীব। আর কেউ কেউ হয়ে ওঠে বেপরোয়া। বড় হয়ে ওদের অনেকে অমানুষ হয়ে যায়। অনেকে হিংস্র আচরণ করে। এটা তাদের প্রতি অবিচারের কুফল।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ষষ্ঠ শ্রেণীর মেধাবী শিশুশিক্ষার্থীকে কিল-ঘুষি-লাথি মেরে নিজেকে শিক্ষকের অযোগ্য বলেই প্রমাণ করলেন। রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ক্লাসে সামান্য হইচই করার অপরাধে ওই শিশুশিক্ষার্থীর প্রতি সাংঘাতিক অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। ওই শিশুর মনে যে ভীতির সৃষ্টি করা হয়েছে, এর কারণে হয়তো সারা জীবন তাকে দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধিতে ভুগতে হবে। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা শিশুকে এভাবে মারপিট করে অসুস্থ রোগীতে পরিণত করার দায় কে বহন করবে?
সরকারি বিদ্যালয়ে এ রকম অমানবিক আচরণ কীভাবে ঘটতে পারল? শ্রেণীকক্ষে শারীরিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করেছে। শিক্ষক কি তা জানেন না? নাকি তিনি মনে করেন, ওই পরিপত্র মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়? অভিযুক্ত শিক্ষক ওই শিশুশিক্ষার্থীকে শারীরিক শাস্তি দিয়েছেন কি না, তা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হোক। যদি তিনি বেআইনি কাজ করে থাকেন, তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
একটি ইংরেজি প্রবাদের দোহাই দিয়ে বলা হয়, ‘স্পেয়ার দ্য রড, স্পয়েল দ্য চাইল্ড’ (মারপিট না করলে শিশু বিপথে যায়)। আধুনিক সভ্যতা কিন্তু এটা মনে করে না; বরং আদর-যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে শিশুদের মন জয় করার কথা বলে। শিক্ষার জন্য বন্ধুসুলভ আচরণ অপরিহার্য। শিশু মনস্তত্ত্ববিষয়ক আধুনিক বিজ্ঞানের এটাই স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে অনেক জ্ঞানী-গুণী শিক্ষক এটা মানতে চান না। তাঁরা বেত দিয়ে শিক্ষার্থীদের মারপিট করেন। এই নির্মমতা পরিত্যাগ করতে হবে। শিক্ষা আর বেত একসঙ্গে চলতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.