মেসি-জাদুতে বার্সার আরেক শিরোপা

প্রায় আট বছর ছিলেন আর্সেনালে। দীর্ঘ এই সময়টায় ট্রফি জিতেছেন মাত্র দুটো। সাফল্য কে না চায়! সাফল্যের জন্য বুভুক্ষু সেস ফ্যাব্রিগাস যে-ই না বার্সেলোনায় পা দিলেন, অমনি জিততে শুরু করলেন একের পর এক শিরোপা। দুই সপ্তাহও পুরো হয়নি, এরই মধ্যে দুটো ট্রফি জিতে ফেললেন বার্সারই যুবদলের এই রত্ন। স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতলেন কদিন আগে, পরশু জিতলেন উয়েফা সুপার কাপ।
বার্সার হয়ে সিনিয়র দলে অভিষেক তাঁর হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে, বদলি হিসেবে নেমেছিলেন। পরশু মোনাকোতেও নামলেন বদলি হিসেবে। আর বার্সার জার্সি গায়ে দ্বিতীয় ম্যাচে ভলি থেকে দারুণ এক গোল করলেন ফ্যাব্রিগাস। পোর্তোকে ২-০ গোলে হারিয়ে বার্সা জিতল তাদের চতুর্থ উয়েফা সুপার কাপ। উয়েফার দুই টুর্নামেন্ট—ইউরোপা লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী দুটো দল মুখোমুখি হয় এই একমাত্র ম্যাচে। এই ম্যাচ দিয়ে সূচনা হয় ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের নতুন মৌসুম।
ফ্যাব্রিগাস গোল পেয়েছেন বলে শুরুতেই তাঁর নাম এসেছে, কিন্তু জয়ের নায়ক বরাবরের মতো লিওনেল মেসিই। ৩৯ মিনিটে পোর্তোর রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে মৌসুমে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন আগের রাতে উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় হওয়া আর্জেন্টাইন জাদুকর। দ্বিতীয় গোলটিও তাঁর দুর্দান্ত এক ক্রস থেকে। বক্সের ডান প্রান্তে ডিফেন্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে বলটা তুলে দেন মেসি। বক্সের ভেতরে থাকা ফ্যাব্রিগাস বুক দিয়ে বল রিসিভ করে মাটিতে পড়ার আগের দারুণ শটে বল পাঠিয়ে দেন জালে। নিজের শৈশবের ক্লাবটির হয়ে গোল করতে পেরে আনন্দে মেসির কোলে গিয়ে ওঠেন ফ্যাব্রিগাস। তাঁদের ঘিরে ধরেন ইনিয়েস্তাসহ অন্যরা। মনে হচ্ছিল যেন বার্সার খামারবাড়ি ‘লা মাসিয়া’র পুনর্মিলনী হচ্ছে মাঠে!
অনেকটা জেদ করেই আর্সেনাল ছেড়ে এসেছেন। ছেড়ে এসেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এক ক্লাবের অধিনায়কত্ব। গানারদের নয়নের মণি হয়ে ছিলেন, সেই ফ্যাব্রিগাসের জায়গা নেই বার্সার প্রথম একাদশে! তার পরও এসেছেন। নিজেও বলেছেন, একাদশে জায়গা করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা তিনি জানেন। পরশুও যেমন মাঠে নামতে নামতে ম্যাচের ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে গিয়েছিল ৮০ মিনিট। শেষ ১০ মিনিট খেলেই ফ্যাব্রিগাস ‘দুশ্চিন্তা’ বাড়িয়েছেন পেপ গার্দিওলার—প্রথম একাদশে কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন!
ম্যাচ শেষে ফ্যাব্রিগাস জানিয়েছেন, ‘আপনাদের সবার দুর্দান্ত সমর্থনের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার ক্যারিয়ারে আর্সেনালের অবদানের কথাও আমি ভুলব না। আর্সেনাল সব সময় আমার হূদয়ে থাকবে।’ এই ট্রফি দিয়ে গার্দিওলা শিরোপা-সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেলেন কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফকে। তিন বছরেই ১২টি ট্রফি জেতা গার্দিওলাই এখন বার্সার সফলতম কোচ। তবে এমন সাফল্যের রাতেও দলের আসল রত্নটিকে প্রশংসা করতে ভোলেননি গার্দিওলা, ‘আমরা সবাই জানি লিও (মেসি) কী করতে পারে। এমনকি আমাদের অনুশীলনগুলোতেও ও দুর্দান্ত সব কারুকাজ করে দেখায়। জানতাম, এ ধরনের বড় ম্যাচে ও কিছু না-কিছু করবেই।’
সাফল্যে ভেসে যাচ্ছেন না গার্দিওলা, বরং এটি তাঁর সাফল্যতৃষ্ণা বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও। সেই একই কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাভি, ‘আমরা ইতিহাস গড়ছি। সামনেও তা করতে চাই।’

No comments

Powered by Blogger.