ওসামাকে হত্যার অভিযানে ছিল স্টিলথ হেলিকপ্টার

আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার অভিযানে মার্কিন সেনারা তাঁর অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে কীভাবে পৌঁছাল, তা এখনো অনেকের কাছে বিস্ময়। হেলিকপ্টারে করে সেনারা সেখানে কেবল নির্বিঘ্নেই পৌঁছায়নি, পাকিস্তানি রাডারকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করেই মার্কিন বাহিনী ওসামার বাসভবনে অভিযান চালাতে সক্ষম হয়। আর তা ছিল স্টিলথ হেলিকপ্টার।
অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িতে অভিযানের সময় একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। ওই হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের ছবি থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে বিশেষ ধরনের এই স্টিলথ হেলিকপ্টার আগে দেখা যায়নি। ধ্বংস হওয়া হেলিকপ্টারটির পেছনের অংশ অক্ষত রয়েছে। ওই অংশটিই বিমান বিশেষজ্ঞদের কাছে নানা সূত্র তুলে ধরেছে। ছবি দেখে হেলিকপ্টারের পেছনের অংশটি পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে হেলিকপ্টারটি ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাকহক। তবে ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে এর শব্দ অনেক কমানো হয়েছে এবং রাডার ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা আরও নিশ্চিত হন যে এ অভিযানেই প্রথম এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে।
বিমান প্রস্তুতকারী মার্কিন কোম্পানি সিকোরস্কি এয়ারক্রাফট এর আগে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য স্টিলথ হেলিকপ্টার তৈরি করে। এটি ছিল আরএএইচ-৬৬ কমানচি। তবে এই হেলিকপ্টার তৈরির খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ২০০৪ সালে ওই প্রকল্প বাতিল করা হয়। কোনো অভিযানেই আরএএইচ-৬৬ কমানচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক সাময়িকী অ্যাভিয়েশন উইক-এর সম্পাদক বিল সুইটম্যান বলেন, ‘আমরা সত্যিই এর আগে এমন হেলিকপ্টার এভাবে ব্যবহার করতে দেখিনি।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেলিকপ্টারবিষয়ক সাময়িকী রোটারি-এর উপসম্পাদক টনি অসবর্ন বলেন, স্টিলথ হেলিকপ্টার তৈরির ক্ষেত্রে এর আকারসহ বিভিন্ন অংশ এমনভাবে তৈরি করতে হয়, যাতে তা সহজেই রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো রাডারের তরঙ্গগুলো ফিরিয়ে দিতে সক্ষম করে গড়ে তোলা হয়। এতে রাডারে ওই হেলিকপ্টারের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় হেলিকপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে রাডারের তরঙ্গ শুষে নেওয়ার মতো করে তৈরি করা হয়। অসবর্ন বলেন, ‘অ্যাবোটাবাদে ব্যবহূত হেলিকপ্টারের রোটর গিয়ারবক্স পেছনের দিকে ঢাকা ছিল, যা আমি কখনো দেখিনি। রোটরে পাঁচ থেকে ছয়টি পাখা রয়েছে। পাখার সংখ্যা বেশি হলে তা কিছুটা কম গতিতে ঘোরে। এতে শব্দও তুলনামূলক কম হয়। আর ওই হেলিকপ্টার সম্ভবত রাডারের তরঙ্গ শুষে নিতে সক্ষম ছিল।’

No comments

Powered by Blogger.