মুসলমানদের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরে কাঁদলেন কিথ

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেও মুসলমানরা অপবাদের শিকার হচ্ছে।’ মার্কিন কংগ্রেসে গত বৃহস্পতিবার ‘মুসলমান ও জঙ্গিবাদ’ শীর্ষক শুনানিতে এ কথা বলেন কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম মুসলমান প্রতিনিধি কিথ এলিসন
তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে মার্কিন কংগ্রেসে এই শুনানি হয়েছে। জঙ্গিবাদকে জড়িয়ে মুসলমানদের নিয়ে এ ধরনের শুনানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করেছে। নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই শুনানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফার শুনানিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কিথ এলিসন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, গুটিকয়েক মানুষের কর্মকাণ্ডের দায়ভার গোটা মুসলিম সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এই শুনানি ছিল রক্ষণশীলদের জন্য বড় রাজনৈতিক ঘটনা। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির প্রধান ও নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান পিটার কিং এই শুনানির উদ্যোগ নেন। তাঁর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো জঙ্গিবাদ দমনে মুসলমানদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছে না। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে। এ কারণে জঙ্গিবাদ ও মুসলমানদের নিয়ে কংগ্রেসে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত।
গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে শতাধিক নাগরিক অধিকার সংগঠন এই শুনানির প্রতিবাদে সমাবেশ করে। ডেমোক্র্যাট দলের প্রভাবশালী আইন প্রণেতারাও এর বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন।
শুনানিতে কিথ এলিসন ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনায় মুসলমান প্যারামেডিক সুলেমান হামদানির আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে উচ্চ স্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ধসে পড়া টুইন টাওয়ারে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন সুলেমান। অথচ শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই তাঁকে হামলাকারীর একজন হিসেবে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। শুনানিকক্ষে উপস্থিত সুলেমান হামদানির মা-ও এ সময় কাঁদতে শুরু করেন। ওই দৃশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে গুরুত্বের সঙ্গে সম্প্রচার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানদের মনের কথা তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে বলে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করা হয়।
মিশিগান থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জন ভিনগেল তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুসলমানরাও আমেরিকার সম্মানজনক নাগরিক। মিসিসিপি থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান বেনি থমসন বলেন, কংগ্রেসে এ ধরনের শুনানির পরিণাম হবে ভয়াবহ। এতে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা বেড়ে যাবে।
কাউন্সিল অব ইসলামিক রিলেশনের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, পিটার কিং ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির প্রধান হওয়ার যোগ্যতা পিটার কিংয়ের নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এসব বিরোধিতা উপেক্ষা করে শুনানি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন পিটার কিং। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে শুনানি গ্রহণ থেকে পেছানোর কোনো অবকাশ নেই।

No comments

Powered by Blogger.