গল্পিতিহাস- 'বালিয়াটি জমিদারবাড়ির রূপগল্প' by আসাদুজ্জামান

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বালিয়াটি জমিদারবাড়ি সেই সময়কার ব্যয়বহুল নিদর্শনগুলোর অন্যতম। কালের সমুদ্রে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জমিদার শ্রেণীর ভোগ-বিলাসের নিদর্শন, যা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও আজও টিকে আছে।
মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ভূমি অধিকর্তা ছিল বালিয়াটির রায় বাহাদুর পরিবার। তিন পুরুষ ধরে প্রবল দাপটের সঙ্গে জমিদারি চালানোর পর ভারত বিভাগের সময় তাদের পতন হয়। বালিয়াটিতে জমিদার হিসেবে জমিদাীি করেছেন হরেন্দ্র কুমার রায় বাহাদুর, জ্ঞানেন্দ্র কুমার রায় বাহাদুর এবং ঈশ্বরচন্দ্র রায় বাহাদুর। আঠারো শতকের সময় অগাধ বিত্তের অধিকারী এসব জমিদার গড়ে তোলেন তাদের প্রাসাদোপম আবাসিক ভবন। লন্ডন ও কলকাতা থেকে আনা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয় তিন তলাবিশিষ্ট বেশ কয়েকটি অট্টালিকা। এই জমিদারবাড়ির দুইটি অংশ_একটির স্থানীয় নাম দশআনি জমিদার বাড়ি এবং অপরটির নাম ছয়আনি জমিদার বাড়ি। বালিয়াটি জমিদার বাড়ির দশআনি অংশটুকুর চারটি ভবন টিকে আছে আজও অবিকৃত অবস্থায়। ছয়আনি অংশের সব ভবনই হয়ে গেছে বিধ্বস্ত, ব্যবহারের অনুপযোগী।
বালিয়াটির এই জমিদারবাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে নানা কথা লোকমুখে চালু আছে, যার বেশিরভাগই শোষণ এবং ত্রাসের। আজ থেকে ১০০ বছর আগে এই বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ জুতা পায়ে বা ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করতে পারত না। আদেশ অমান্য করার সাধ্য ছিল না কারো। লাঠিয়ালদের খড়্গ ছিল বড়ই সজাগ। তাছাড়া এরা নাকি খাজনা আদায়ে ছিল বড়ই নির্মম। ব্রিটিশদের চোখে এটাই ছিল সাফল্য। আর এ কারণে বালিয়াটির জমিদারদের দেওয়া হয় রায় বাহাদুর খেতাব। পূর্ববঙ্গের প্রতাপশালী হিন্দু জমিদারদের মধ্যে বালিয়াটির রায় বাহাদুররা বিত্ত-প্রতিপত্তিতে প্রায় শীর্ষস্থানীয় ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এরা প্রবল গণরোষের শিকার হয়। জনতার আক্রোশে অট্টালিকায় চলে ভয়াবহ ভাংচুর ও লুটপাট। গণরোষে ১৯৪৮ সালে বালিয়াটির জমিদাররা সপরিবারে পালিয়ে যায়, পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকার যা পরবর্তী সময়ে অধিগ্রহণ করে। ভূমি অধিদপ্তর থেকে ২০০৪ সালে জমিদার বাড়ির এসব ভবন পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা এসব ভবনের অবকাঠামোর কোনো উন্নয়ন করেনি। পরে ২০০৭ সালের দিকে এসব ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপর থেকে শুরু হয় সংস্কার কার্যক্রম। এ পর্যন্ত জমিদারবাড়ির সংস্কার কাজে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। চেষ্টা চলছে জমিদারবাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় লুট ও স্থানান্তর হওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনার।

বালিয়াটি জমিদারবাড়ির অদূরে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৯২০ সালে স্থাপন করা হয়েছিল ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার মানদণ্ডে একটি স্ট্যান্ডার্ড স্কুল। বর্তমানে অবশ্য স্কুলটিতে বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। সেই সময় এই স্কুলটিতে অভিজাত শ্রেণীর সন্তানরাই কেবল পড়াশোনা করতে পারত। বর্তমানে এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। রায় বাহাদুরের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটির পুরনো ভবন এবং নারিকেল বীথিসমৃদ্ধ প্রাঙ্গণ বড়ই মনোহর। সাজানো-গোছানো স্কুল চত্বর আর জমিদারবাড়ির বাইরে স্কুলের পাশে তিনটি দীঘল দীঘি। শান বাঁধানো ঘাটগুলো পলেস্তারা খসে পড়লেও বিগত দিনের সমৃদ্ধির স্মৃতি বহন করছে ঘাটগুলো।============================ফিচার- ‘কাপ্তাই লেক:ক্রমেই পতিত হচ্ছে মৃত্যুমুখে' by আজিজুর রহমান  রাজনৈতিক আলোচনা- 'ছাত্ররাজনীতি:লেজুড়বৃত্তির অবসান আজ জরুরি by বদিউল আলম মজুমদার  কৃষি আলোচনা- 'কৃষিজমি রক্ষার দায় সবার' by আফতাব চৌধুরী  শিল্পি- 'আমি যে গান গেয়েছিলেম...কলিম শরাফী' by জাহীদ রেজা নূর  আলোচনা- 'হাওয়ার হয়রানি নামে ঢেকে যায় যৌন সন্ত্রাস'  সাহিত্যালোচনা- 'মারিও ভার্গাস ইয়োসা'র সাহিত্যে নোবেলের রাজনৈতিক মোড়  রাজনৈতিক আলোচনা- 'জনগণ ও সেনাবাহিনীর বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতা by নূরুল কবীর  রাজনৈতিক আলোচনা- 'নির্মানবীয় রাজনীতি ও জনসমাজের বিপজ্জনক নীরবতা by নূরুল কবীর  আলোচনা- 'সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ত্রিমুখী অভিযান by নূরুল কবীর  খাদ্য আলোচনা- 'খাদ্য উৎপাদনের বাধা দূর করাই ক্ষুধার বিরোদ্ধে প্রধান সংগ্রাম' by ফরিদা আক্তার  রাজনৈতিক আলোচনা- ' কোন পথে ক্ষমতা! হস্তান্তর নয় রূপান্তর চাই   আলোচনা- 'শিল্পনীতি-২০১০:সামর্থ্যের অপব্যবহারে পঙ্গ  আলোচনা- যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষাকারী ইসরাইল লবি ইভটিজং আলোচনা- নারী উৎপীড়ক সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া  রাজনৈতিক আলোচনা- 'ছাত্ররাজনীতি তার হারানো গৌরব ফিরে পাক by ফরহাদ মাহমুদ  আলোচনা- 'দেশ কাঁপানো নূরজাহান' by আবদুল হামিদ মাহবুব  ইতিহাস- 'বাংলা ভাষার স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ' by রফিকুল ইসলাম    কালের কণ্ঠ এর সৌজন্য
লেখকঃ আসাদুজ্জামান

এই ইতিহাস'টি পড়া হয়েছে...

free counters

No comments

Powered by Blogger.