প্রশিক্ষণ নেই, তবু সম্ভাবনা

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে কোনো কিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় না। গেমস এলে বিরাট বহর নিয়ে ‘ভ্রমণের’ জন্য সরকারের তহবিল থেকে অনুদান মেলে অনেক টাকা। সেই টাকায় দলের বাইরে ২০-৩০ জনের বিদেশ ভ্রমণের বন্দোবস্ত হয়ে যায়। কিন্তু আদতে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ হয় না ঠিকমতো!
এর পরও বাংলাদেশের জন্য আশার খবর, আসন্ন এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো আসতে পারে একাধিক পদক! এই প্রথম এশিয়াডে অন্তর্ভুক্ত পুরুষ-মহিলা ক্রিকেটের দুই বিভাগেরই সম্ভাবনা আছে। গেমসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বলেছেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’ চ্যাম্পিয়ন হওয়া মানে এশিয়াডে প্রথম সোনা! পুরুষ ক্রিকেটে ভারত নেই। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা থাকায় আশাটা এত দূর বিস্তৃত হতে পারছে না। তবে পদকের আশা বাড়াবাড়ি নয়।
নেপাল, হংকং, জাপানের গ্রুপসঙ্গী বাংলাদেশের সহজে সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ আছে মহিলা ক্রিকেটে। চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তান আছে অন্য গ্রুপে। এই ৮ দলের মধ্যে পাকিস্তানের পরের বড় নামটিই বাংলাদেশ। পদকের সুযোগ তাই থাকছেই।
গলফেও সুযোগ আছে। ১২-২৭ নভেম্বর গুয়াংজুতে অনুষ্ঠেয় ১৬তম এশিয়ান গেমসের গলফ অপেশাদার। পেশাদার হলে সিদ্দিকুর রহমানকে পাওয়া যেত। তবে অপেশাদার গলফেও ভালো কিছুর আশা করছে গলফ অঙ্গন। শ্যুটিংয়ের পক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টেকা কঠিন। তবে বরাবরের মতো হাতের পাঁচ হয়ে থাকা পুরুষ কাবাডি অন্তত খালি হাতে না ফেরার নির্ভরতা দিচ্ছে। প্রথম যুক্ত হওয়া মহিলা কাবাডিও পদকের লড়াই দিতে পারে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ তাই আশায় আছেন ‘ভালো’ কিছু দেখার, ‘ক্রিকেট-গলফ-কাবাডির ওপর নজর রাখছি। আমার বিশ্বাস, এই খেলাগুলোয় ভালো করার সুযোগ আছে।’
গত দক্ষিণ এশীয় (এসএ) গেমসের আগে টানা এক বছর অনুশীলন করে বাংলাদেশ দল তিন থেকে এক লাফে ১৮টি সোনা জিতেছে। ওই সাফল্যের পর সারা বছরই খেলোয়াড়দের অনুশীলনে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্রীড়াবিষয়ক সব অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলে আসছেন—সারা বছর অনুশীলন অব্যাহত রাখা চাই। কিন্তু ক্রীড়া প্রশাসন সেই প্রতিফলন দেখাতে পারছে না।
কুতুবউদ্দিন জানাচ্ছেন কারণটা, ‘ফেডারেশন তাকিয়ে থাকে বিওএর দিকে, কিন্তু বিওএর কী করার আছে? বিওএ তো একটা ‘পোস্ট অফিস’। তবু বিওএর টাকা দিয়ে কিছুদিন অনুশীলন চালিয়েছি আমরা। তবে সারা বছরই অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে আমাদের। এর কোনো বিকল্প নেই।’
কমনওয়েলথ গেমসের শেষ সময়ে টাকা দিয়েছিল সরকার। এশিয়ান গেমসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বিওএর প্রশিক্ষণ কমিটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কণ্ঠে তাই হতাশা, ‘এশিয়ান গেমসের জন্য আমরা টাকা পেয়েছি গত বুধবার। এসএ গেমসের মতো পরিকল্পিত অনুশীলন করতে পারলে এবারের এশিয়াডে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করা যেত।’
সরকার টাকা দিলে তবেই ফেডারেশন নড়েচড়ে বসে। দু-একটি বাদে বাকি ফেডারেশনগুলোর নিজস্ব উদ্যোগ নেই। কেন? হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জান কোহিনূরের পাল্টা প্রশ্ন, ‘প্রশিক্ষণের জন্য স্পনসর পাওয়া যায় না। ফেডারেশন কী করবে?’
সরকারের দেওয়া অনুদান চা-নাশতা, অফিস খরচ আর কর্মীদের বেতন বাবদই নাকি চলে যায়। ফেডারেশনগুলো হয়ে আছে ঠুঁটো জগন্নাথ। তারই ফল—সদ্য শেষ হওয়া দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তলানিতে।
কমনওয়েলথে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পেয়েছে দুটি সোনা, একটি করে রুপা ও ব্রোঞ্জ। সব পদকই দিয়েছে শ্যুটিং। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সাকল্যে প্রাপ্তি তিনটি করে রুপা ও ব্রোঞ্জ। ১৯৮৮ সালে বক্সার মোশাররফ হোসেন এনেছেন একটি ব্রোঞ্জ। বাকি সব পদকই কাবাডি দলের সৌজন্যে।
সেই কাবাডির অবস্থাও এখন রুগ্ণ। প্রশিক্ষণ-প্রস্তুতি কোনো কিছুই ঠিকভাবে চলছে না!

No comments

Powered by Blogger.