ডাকযোগে ভোটে বড় জালিয়াতির অভিযোগ

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে পোস্টাল ভোট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুরো যুক্তরাজ্যে এ ধরনের ৫০টি অভিযোগ তদন্তের তালিকা করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। অসততাবিরোধী আন্দোলনকর্মী মার্টিন বেল ডেইলি মেইল পত্রিকাকে বলেছেন, চূড়ান্ত বাস্তবতা হচ্ছে এই ভুয়া ভোটাররাই হয়তো বদলে দিতে পারেন ভোটের হিসাব-নিকাশ।
যুক্তরাজ্য-জুড়ে মোট চার কোটি ৬০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৭০ লাখ ডাকযোগে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। আর জমাকৃত ভোটের মধ্যে মেট্রোপলিটন পুলিশ লন্ডনের ১২টি বারার ২৮টি গুরুতর অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের অভিযোগ তদন্ত করতে কাজ করছে চারটি পৃথক দল। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০ এপ্রিল ভোট নিবন্ধনের শেষ দিন তারা পাঁচ হাজার ১৬৬ জন নতুন ভোটারের নাম নিবন্ধন করেছে। এত অল্প সময়ে এই বিপুলসংখ্যক ভোটারের তথ্য যাচাই করার সুযোগ ছিল না।
তদন্তে দেখা গেছে, পূর্ব লন্ডনের চার বেড রুমের একটি ফ্ল্যাটে ১৮ জন ভোটারের নাম নিবন্ধন করা হয়েছে। এ ধরনের কাউন্সিল ফ্ল্যাটে যেখানে দুই-তিনজন পূর্ণ বয়স্ক লোক থাকার কথা, সেখানে ভোটার-সংখ্যা এখন ১৮! তদন্তকারী প্রতিনিধিদল সরেজমিনে গিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আসিফুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি তালিকার অন্য ভোটারদের শনাক্ত করতে পারেননি। আসিফ জানিয়েছেন, তালিকায় নিবন্ধিত ভোটাররা ওই বাড়িতে থাকেন না। লন্ডনে, বিশেষ করে ছাত্রদের চিঠিপত্রের জন্য, পরিচিত বাঙালিদের ফ্ল্যাটগুলোর ঠিকানা ব্যবহারের চল আছে। এ রকম ঠিকানায় অনেকে ভোটারও হন। এটি সে রকম কিছু, নাকি আসলেই ভুয়া ভোটার, তা তদন্তে নিশ্চয়ই বের হয়ে আসবে।
পূর্ব লন্ডনের রেইনহিল ওয়ে এলাকার একটি তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটে এক মাস আগে যেখানে ভোটার ছিল পাঁচজন, সেখানে এখন ভোটার-সংখ্যা ১২। জাতীয় দৈনিক ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাংবাদিক জেরেমি টেইলর এর কারণ জানতে ফ্ল্যাটের দরজায় টোকা দিলে স্থানীয় বখাটেরা তাঁকে পিটিয়ে নাক ভেঙে দিয়েছে। গেইল স্ট্রিটের মোহাম্মদ হোসেন দুই বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। তিনি জানেনই না কে তাঁর নাম নিবন্ধন করেছে। অভিযোগ ওঠা এলাকাগুলোতে লেবার দলীয় বাঙালি কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন ও খালিস উদ্দীনের বিরুদ্ধে এই জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে উভয়েই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কনজারভেটিভ কাউন্সিলর পিটার গোল্ড অভিযোগ করেছেন, সব ভুয়া ভোটারই বাংলাদেশি। তিনি দাবি করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে ভিজিটর ভিসায় এসেও তাঁরা ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধন করেছেন।
যুক্তরাজ্যে ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে মোট ভোটের শতকরা ১৫ ভাগ ছিল পোস্টাল। চলতি বছর এই সংখ্যা শতকরা ২০০ ভাগ বাড়তে পারে বলে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের ধারণা। নির্বাচন কমিশন সাত বছর আগে সতর্ক করেছিল, পোস্টাল ভোট পদ্ধতি চালু করলে জালিয়াতির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সে সময় প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, পোস্টাল ভোট পদ্ধতি কার্যকর করার আগে অবশ্যই ভোটারদের হাতে আইডি কার্ড যেতে হবে। কিন্তু ভোটাররা সেই আইডি কার্ড পাননি।
এ ধরনের পোস্টাল ভোট জালিয়াতির ঘটনা ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী গণতন্ত্রের জন্য বিরাট হুমকি বলে মনে করে নির্বাচন কমিশন।
মার্টিন বেলের বক্তব্য, ডাকযোগে ভোটের এই বেহাল অবস্থার কারণে নির্বাচন-প্রক্রিয়ার ওপর আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। তাঁর অভিমত, পোস্টাল ভোট গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানোটা ছিল নির্বাচন কমিশনের বিরাট ভুল।

No comments

Powered by Blogger.