ডি/এলে গলদ দেখছেন না ডাকওয়ার্থ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আবহাওয়া ঠিক আমার প্রেমিকার মতো। মন বোঝা বড় দায়!’ পরশু ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে আবারও বৃষ্টি হানা দেওয়ার পর ক্রিকইনফোতে এক পাঠকের মন্তব্য।
বিষয়টি এখন আর এমন হালকা রসিকতার পর্যায়ে নেই। গ্রুপ পর্বে টানা চারটি ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করে দিয়েছে বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টি-নাটকের সবচেয়ে বড় দৃশ্যটা ইংল্যান্ডকে নিয়েই। প্রথম ম্যাচে ১৯১ রান করেও হেরেছিল ইংল্যান্ড। বৃষ্টি খেলার দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিয়ে সহজ করে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য। ওই ম্যাচের পর ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক পল কলিংউড।
সেই কলিংউডই পরশু বড় বাঁচা বেঁচে গেলেন বৃষ্টির বদান্যতায়। আয়ারল্যান্ড আরেকটু হলেই গত বিশ্বকাপের মতো আরেক আইরিশ রূপকথার জন্ম দিতে চলেছিল। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১২০ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। তাদের সিংহভাগ রানের জোগানদাতা আবার এক আইরিশই—এউইন মরগান (৩৭ বলে ৪৫)।
সে যা-ই হোক। ক্ষণে ক্ষণে বিরতি দিয়ে যেভাবে আবির্ভূত হচ্ছে বৃষ্টি, ঠিক সেভাবেই আলোচনায় হাজির দুই ইংলিশ পরিসংখ্যানবিদ ফ্রাঙ্ক ডাকওয়ার্থ আর টনি লুইস। কলিংউডের ‘টি-টোয়েন্টিতে ডি/এল পদ্ধতি অচল’ মন্তব্যের পর আর মুখ বন্ধ রাখতে পারেননি ডাকওয়ার্থ। পদ্ধতির দোষ না খুঁজে কলিংউডকে নিজের বোলারদের দিকে আঙুল তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, ‘সর্বজনাব ডাকওয়ার্থ আর লুইসের ওপর পল কলিংউড রাগ হতেই পারেন। তবে রাগটা সর্বজনাব টিম ব্রেসনান, গ্রায়েম সোয়ান অ্যান্ড কোম্পানির ওপর হওয়াটাই ছিল যুক্তিসংগত। যাঁরা বৃষ্টির আগে আর পরে চারটি করে আটটি ওয়াইড দিয়েছেন। যার ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্যটা শেষ পর্যন্ত ৬০ নয়, হয়ে গিয়েছিল ৫২।’
ডাকওয়ার্থের কথায় যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। ওই আটটি ওয়াইডের কারণে আটটি বল বেশিও পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এটাও ঠিক, ২০ ওভারে ১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করা আর ৬ ওভারে ৬০—এই দুয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্রতি ওভারে গড়ে প্রায় ১০ করে রান তোলার চাপের মুখে ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙেও পড়তে পারত। যেখানে ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনাই ছিল বেশি, সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে তারা হেরেছে আট উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
ফলাফলের শেষে অবশ্য বন্ধনীর মধ্যে ‘ডি/এল পদ্ধতিতে’ লেখা থাকছে। যেটি এখন পর্যন্ত যেকোনো বাধার মুখে (হোক সেটি বৃষ্টি) সবচেয়ে কার্যকর আইন বলে প্রমাণিত। কিন্তু মৌলিক একটা প্রশ্ন করেছেন কলিংউড। ৫০ ওভারের ওয়ানডেতে ডি/এল পদ্ধতি কার্যকর হলেও ২০ ওভারের টি-টোয়েন্টিতে সেটি কার্যকর নয়।
এখানে দ্বিমত ডাকওয়ার্থের। তিনি বলছেন, আসলে আইসিসির নতুন করে ভাবা উচিত কমপক্ষে ৫ ওভার খেলার নিয়মটা নিয়ে। ওভারের সংখ্যা আরও বাড়ালে দুই পক্ষই বৃষ্টির কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমলেও ডি/এল পদ্ধতির ন্যায়বিচার পাবে। দ্য উইজডেন ক্রিকেটার সাময়িকীকে তিনি বলেছেন, ‘আইসিসির উচিত হবে সম্পন্ন ম্যাচে কমপক্ষে ৫ ওভার খেলা হতে হবে এই নিয়মটা নিয়ে নতুন করে ভাবা। কারণ এটা স্পষ্টতই প্রমাণিত, এ নিয়মটার কারণে ম্যাচের ফল বিকৃত হচ্ছে।’
টি-টোয়েন্টিতে ডি/এল পদ্ধতি নিয়ে শুধু ইংল্যান্ডই অনুযোগ করছে বলে মনে করেন ডাকওয়ার্থ, ‘২০০২ সালে টি-টোয়েন্টি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭০টির মতো ম্যাচে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মাত্র দুবার এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। দুবারই অভিযোগ করেছে কলিংউড কিংবা ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড। দুবারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো না করার পর।’
এই ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়েই ১৯৯৭ সালে হারারেতে যাত্রা শুরু এই পদ্ধতির। এক যুগ পর গত অক্টোবরে সামান্য কিছু রদবদল করেছেন ডাকওয়ার্থ-লুইস। ডাকওয়ার্থ মনে করেন, এই নিয়মটাই যথার্থ। কিন্তু এটাও বাস্তবতা, ক্রিকেট বিশ্বে একটা রসিকতা বেশ চালু, সারা বিশ্বে পদ্ধতিটা কেবল দুজন মানুষই বোঝেন—মিস্টার ডাকওয়ার্থ আর মিস্টার লুইস!

No comments

Powered by Blogger.