ক্ষমতা এক হাতে পুঞ্জীভূত হওয়া কি ঠিক by আবুল মোমেন

দেশকে দারিদ্র্য ও পশ্চাত্পদতার বৃত্ত থেকে বের করে আনতে হলে দুটি ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন জরুরি। একটি হলো শাসনব্যবস্থা এবং অপরটি উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি। মোটা দাগে বলা যায়, শাসনব্যবস্থায় দুটি বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন—জবাবদিহিতা-স্বচ্ছতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ। ভোটাধিকার জনগণের একটা বড় প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে, কিন্তু কেবল এটুকুতে তার ভূমিকা সীমিত থাকলে সে কেবল সরকার গঠন ও পরিবর্তনে অবদান কিছু রাখতে পারে, শাসনকাজে তার কোনো ভূমিকাই থাকে না। তাতে শেষ পর্যন্ত যাঁদের তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে, তাঁরা হয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে ক্ষমতাবান, আর জনগণ ক্ষমতাহীন উমেদার ও ভুক্তভোগীতে রূপান্তরিত হয়। আর এভাবে কেবল নির্বাচন-নাট্যের মধ্যেই সীমিত হয়ে পড়ে গণতন্ত্র; সমাজ ও সরকারের যথার্থ ভূমিকা পালন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
এ কথা মানতে হবে যে দুই বড় দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখতে হবে। ফলে আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। সে কারণেই এ সরকারের প্রথম সাত মাস এবং সাত বছর পরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও আগ্রহ ছিল।
সবাই একমত হবেন যে বিরাজমান বাস্তবতায় বড় দুই দলে দুই নেত্রীর স্ব স্ব দলে একচ্ছত্র অধিকর্ত্রীর ভূমিকা নিরঙ্কুশ। তাঁদের ইচ্ছাতেই কমিটি গঠিত ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চয় বিভিন্নজনের সঙ্গে আলোচনা করেন, কিন্তু সেটা ঘটে নেপথ্যে বা গোপনে অনানুষ্ঠানিকভাবে, আর তাতে বোঝা যায় প্রকাশ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্যদের অংশীদারি দেওয়ার মতো মনোভাব বা বাস্তবতা নেই। তাতে সমাজ নিজস্ব বোধ ও বুদ্ধি খাটিয়ে, ভেবে নেত্রীর আস্থাভাজন নেতাদের চিনে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং সমাজের উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরা, যাদের একটা অংশ ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তারা সেভাবে খাতির জমানোয় তত্পর হয়। তাঁদের মাধ্যমে নেত্রীকে প্রভাবিত করার বা নেত্রীর আনুকূল্য লাভের চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। এতে নেত্রীর আস্থাভাজনদের কেন্দ্র করে ক্ষমতার আঞ্চলিক ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বলয় তৈরি হয় এবং গণতন্ত্র কেবল হোঁচট খেতে থাকে।
আমার মনে হচ্ছিল, দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে অনেক পোড় খেয়ে বিপুল জনসমর্থন ও সংসদে বিশাল সংখ্যাধিক্য নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করবেন তাঁর হাতে পুঞ্জীভূত হতে থাকা দল ও সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রিত করার কাজটা।
মন্ত্রিসভা গঠন করার সময় তাঁর প্রথম পরীক্ষায় দেখা গেল মন্ত্রী নির্বাচনে প্রধান বিচার্য বিষয় হয়েছে নেত্রীর আস্থা ও প্রার্থীর তাঁর প্রতি আনুগত্য। মন্ত্রিসভা যাতে একটি দল হিসেবে কাজ করতে পারে তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বাকি সব মন্ত্রীর আনুগত্য একটি বিচার্য বিষয় হতে পারে, কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ-বর্জনের ক্ষেত্রে মাপকাঠি ছিল একমাত্র সেটিই। তাতে সরকারের প্রায় সব ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
অথচ এভাবে ক্ষমতা পুঞ্জীভূত না করেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। সে জন্য নির্ভর করতে হয় স্বাধীন ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর। স্থানীয় সরকারের প্রসঙ্গে পরে আসছি। দেশে নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমের জন্য এর স্বাধীনতা, তথ্য অধিকার এবং অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা দরকার। এই মুক্ত পরিবেশেই ক্রমে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরাও তাঁদের দায়িত্বশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থে সংযত থাকার প্রয়োজন এবং পরিণত প্রজ্ঞা অর্জন করবেন। মুক্ত পরিণত সংবাদপত্র গণতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সে কারণেই অতীতে সংবাদপত্রকে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ—নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভার মতো রাষ্ট্রের মূল তিন স্তম্ভের সমান গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার সময় মন্ত্রিসভার মতোই অন্ধ আনুগত্যের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সবটা মিলে শেখ হাসিনার হাতে প্রভূত ও অবাধ ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়েছে। ফলে সরকার ও সরকারি দল কতটা গণতান্ত্রিকভাবে চলবে তা অনেকটা নির্ভর করবে একজন ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। একটু আগাম সতর্কবাণী হলেও বলে রাখতে চাই, জনমনে একটা ধারণা হলো, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন সে যথার্থই গণতান্ত্রিক কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেক সময় স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, নিন্দুকের ভাষায় ফ্যাসিস্ট। ফলে এদিকটা মাথায় রাখা দরকার।
আমরা অতীতে দেখেছি, অত্যন্ত গণতান্ত্রিক আদর্শের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ঐতিহাসিকভাবে ও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দুর্বলতার কারণে স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারে বঙ্গবন্ধুর হাতেই ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়ে গিয়েছিল। এর চরম ফলস্বরূপ একপর্যায়ে তিনি হয়ে পড়েছিলেন রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই নিঃসঙ্গ। এ রকম সময়ে যেসব আস্থাভাজন উপনেতা তৈরি হন, তাঁরা প্রায়ই বাস্তবতার কারণেই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব ও বক্তব্য বিসর্জন দিয়ে তোষামোদকারীতে রূপান্তরিত হন। তাতে কেবল নিঃসঙ্গতা নয়, জনপ্রিয়তার সংকটও তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, অনুগত বাধ্য মানুষ নিয়ে সরকার পরিচালনা সহজ, তদ্রূপ সহজ দল পরিচালনাও। কিন্তু সরকার এবং রাজনৈতিক দল চালানো নিছক একটি অফিস চালানোর মতো ব্যাপার নয়। এখানে প্রতি মুহূর্তে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কৌশল নির্ধারণ করতে হয়, স্থায়ী ও সাময়িক মিত্র সন্ধান করতে হয় এবং অনবরত নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। রাজনীতি কেবল রুটিন কাজে সীমাবদ্ধ থাকে না—সরকার বা দল তাই রুটিন কাজ চালানোয় দক্ষ হলেই চলবে না। তাকে চালাতে হয় দেশ—তদুপরি আমাদের ক্ষেত্রে এমন এক দেশ, যে দেশে মানুষ অনেক, সমস্যা অসংখ্য।
এখন হয়তো সরকারে ভিন্নমতের আশঙ্কা থাকল না, দলে মতান্তরের অবকাশ রইল না। কিন্তু তার সঙ্গে সরকার ও দলের সচলতা, গতিশীলতা এবং প্রয়োজনে সৃজনশীলতা ক্ষুণ্ন হবে কি না তা ভাবার বিষয়। ক্ষমতার প্রবণতা হলো তা নিরঙ্কুশ হতে চায়, তা সম্ভাব্য সব উপায়ে জবাবদিহিতা এড়িয়ে অস্বচ্ছ হয়ে পড়তে চায়। আর এ রকম হয়ে পড়লে তা দুর্নীতি বাড়ায় ও কর্মক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। বিপদে পড়ে যায় সরকার, আর চূড়ান্ত বিচারে তার দায় বহন করে দল।
তদুপরি মন্ত্রিসভা যদি প্রধানমন্ত্রীর মুখ চেয়েই কাজ করে, তাহলে সেই সন্তর্পণ সতর্ক আচরণের প্রভাব গিয়ে পড়বে মন্ত্রণালয়ের কাজে, তার সূত্র ধরে সব দপ্তরে, অধিদপ্তরে। আর সেই ফাঁকে কাজকর্মের নিয়ন্তা হয়ে উঠবে আমলাতন্ত্র। একটি জবরদস্ত আমলাতান্ত্রিক সরকার লালফিতার দৌরাত্ম্যে ও ফাঁসে আটকা পড়বে। কাজকর্ম চলবে গতানুগতিক পথে এবং দুর্নীতি ও তার ফলস্বরূপ অদক্ষতা বাড়বে।
মানুষের মধ্যে এই সরকার নিয়ে যেমন আশা আছে, তেমনি ভেতরে ভেতরে কিন্তু অস্থিরতাও আছে। মানুষ বেশি ভোগান্তি, বেশি ভুলভ্রান্তি সম্ভবত মেনে নেবে না, ছাড় দেবে না। মোটকথা, সমালোচনার আওয়াজ সে তুলতে থাকবে। তবে জোট সরকারের দুর্নীতি ও অনাচারের ঐতিহাসিক আমলটির কথা তারা এখনো ভোলেনি। তাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্পও নেই। কেবল এ কারণে অস্থির মানুষের পক্ষেও দ্রুত সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে নামা সম্ভব হবে না।
এটা সরকারের জন্য স্বস্তির বারতা হলেও এখানেই কিন্তু বড় রকমের আশঙ্কার একটা বীজ লুকিয়ে আছে। আওয়ামী লীগের সরকার ও দল শেখ হাসিনার হাতে কেন্দ্রীভূত, তিনি ও তাঁর মন্ত্রিসভা ব্যতিব্যস্ত থাকবেন সরকার পরিচালনার কাজে। আর মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকলে বিএনপির পক্ষে কি সম্ভব প্রকৃত জনস্বার্থের রাজনীতি নিয়ে মাঠে নামা? সরকারের ওপর মানুষ যদি অসন্তুষ্ট হয়, মাঠে যদি কোনো গণতান্ত্রিক দল না থাকে, তাহলে ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী মাঠ দখলের চেষ্টা করবে না? মৌলবাদী রাজনীতি সে সুযোগ কাজে লাগাবে না? কিংবা নৈরাজ্য বাধানোর অপশক্তি মাঠে নামবে না? বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি এখন অতি দুর্বল। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের দায় অনেক। সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো যেমন তার কাজ, তেমনি দলের মাধ্যমে মাঠপর্যায়েও গণতান্ত্রিক ধারাকে রাজনীতির প্রধান স্রোত হিসেবে ধরে রাখাও তার কাজ। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায় ব্যর্থ হলে ও দল হিসেবে দুর্বল হলে দেশের সমূহ বিপদ।
পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সরকারকে হটানো এবং তারপর সামরিক স্বৈরশাসন ও ধর্মান্ধ অগণতান্ত্রিক শক্তিকে জোরদার করে তোলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দলকে কঠিন প্রতিকূলতায় ঠেলে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল বলে পুনরায় গণতন্ত্রের রাস্তায় আসতে অনেক সময় লেগেছে আমাদের। তাই ভয় পাই শেখ হাসিনাকে ঘিরে ক্ষমতাবলয় ক্রমে আওয়ামী লীগ ও সরকারকে যদি জনবিচ্ছিন্ন করে তোলে, তাহলে দেশের জন্য তা ভালো হবে না। দেশে এখনো সরকার ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে চোরাবালিতে টেনে নামানোর ও নানাভাবে বিপদে ফেলার জন্য অনেক গোষ্ঠীই সক্রিয় আছে। তাই গণতান্ত্রিক শক্তির উচিত সমাজে সর্বত্র মিত্র শক্তির খোঁজ করা ও তাদের সঙ্গে সক্রিয় মৈত্রী স্থাপন করা। দল ও সরকারকে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে এককেন্দ্রিক হয়ে ওঠার পরিবর্তে ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়নের কথা ভাবতে হবে।
ফলে গণতান্ত্রিক সরকারের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকারে ও ক্ষমতায় জনগণের অংশীদারি নিশ্চিত করা। সেদিক থেকে স্থানীয় সরকারের স্বাধীনতা ও শক্তিশালী সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই ক্ষমতায় জনগণের অংশীদারি নিশ্চিত হয় আর ক্ষমতা জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এ জন্য স্থানীয় সরকারকে হতে হবে শক্তিশালী ও স্বাধীন। এর অর্থ হলো স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন পরিচালনা ও উন্নয়নকাজের দায়িত্ব থাকতে হবে স্থানীয় সরকারের হাতে এবং স্থানীয় সরকার হতে হবে নির্বাচিত। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, আমাদের দেশের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী সাংসদেরা কিছুতেই ক্ষমতার ভাগ কাউকে দিতে চান না। যে শেখ হাসিনা তাঁর বইয়ে শক্তিশালী স্বাধীন স্থানীয় সরকারের পক্ষে লিখেছেন, তাঁর পক্ষেও সেই অবস্থানে থাকা কঠিন হচ্ছে, সাংসদের চাপ আছে, সঙ্গে হয়তো আমলাদের চাপও যুক্ত হয়েছে, আর রয়েছে সরকারের দ্বিধা ও দোদুল্যমানতা।
দীর্ঘদিনে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে সরকারের দিক থেকে দুটি বড় বাধা হলো প্রশাসনের তথা শাসনযন্ত্রের সর্বস্তরে দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতে না পারা। সোজা কথায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ও বাজেট ব্যয়ে আমাদের অপারগতা বহুদিন ধরেই প্রমাণিত। এ ক্ষেত্রে হয়তো দক্ষতা এবং সততার অভাবের কথা স্বীকার করতে হবে।
রাষ্ট্রে ক্ষমতার যেমন কেন্দ্রীভবন ঘটছে, তেমনি প্রশাসনে কর্মরত জনবলেরও একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান। বাংলাদেশের সাংসদ, রাজনীতিবিদ, আমলা, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই চান রাজধানী ঢাকায় থাকতে। একান্ত অনিচ্ছায় ঢাকার বাইরে যেতে হলেও কেউই চাকরিস্থলে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে রাজি নন। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, বাবা-মায়ের চিকিত্সা ইত্যাদি নানা অজুহাতে সবাই ভিড় করে ঢাকায় থাকবেন। এতেও কিন্তু দুর্নীতি ও অদক্ষতা বাড়ছে। এ নিয়ে বারান্তরে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইল।
কিন্তু শেখ হাসিনা তাঁর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে দিলেন কেন? দিনবদলের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসে গতানুগতিকভাবে ক্ষমতার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে দেশ ও গণতন্ত্র বিপদে পড়বে। এটা যেন তাঁর স্বল্প সময়ের কৌশলী পদক্ষেপের বেশি না হয়। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশ এই তিন দশকের পথ পরিক্রমায় কেবলই ব্যর্থতার চক্র তৈরি করেছে। এবারে যদি সেটি ভাঙা না যায়, ভেঙে সামনে এগোনো না যায়, তাহলে কিন্তু পুরো জাতি গভীর বিপদে ও হতাশার গহ্বরে নিমজ্জিত হবে। আর হতাশা থেকে নৈরাজ্য খুব দূরে নয়। যাদের মনে জঙ্গিবাদী তত্পরতার পরিকল্পনা থাকে, তারাও বসে থাকবে না এবং এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতি আর অদক্ষতাই বাড়বে।
ফলে এই সরকারের ব্যর্থতার কথা আমরা ভাবতে চাই না। আমরা চাই, শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেবেন, স্বাক্ষর রাখবেন একজন যথার্থ রাষ্ট্রনায়কের প্রজ্ঞা, সৃজনশীলতা ও সাহসী নেতৃত্বের।
গতানুগতিক পথে বাংলাদেশের মুক্তি নেই, পরিত্রাণ অসম্ভব।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.