বার্ষিক গড় নেমে এসেছে সাড়ে ৬ শতাংশে- জুনে মূল্যস্ফীতির হার ২.২৫%

মূল্যস্ফীতির হার বেশ নিম্ন পর্যায়ে রেখে ২০০৮-০৯ অর্থবছর শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জুন মাসে মাসওয়ারি মূল্যস্ফীতির হার নেমে এসেছে ২ দশমিক ২৫ শতাংশে।
এর আগে মে মাসে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর গত বছরের জুন মাসে এ হার ছিল ১০ শতাংশ।
এর ফলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ খানিকটা স্বস্তি পেতেই পারেন। কারণ, ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যহ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ উত্পাদন পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় মূল্য পরিস্থিতির এই (নিম্নমুখী) ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হয়েছে।’
বাস্তবে মূল্যস্ফীতির বার্ষিক গড় হার অর্থবছর শেষে সাড়ে ৬ শতাংশের কাছাকাছি নেমে গেছে।
২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় ১০ শতাংশ (৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ)।
মূলত ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে পণ্যসামগ্রীর দাম কমতে শুরু করায় দেশের বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, যার প্রতিফলন ঘটেছে মূল্যস্ফীতির হারে। এর পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী রাখতে সহায়তা করেছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরবরাহজনিত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়াই মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হওয়ার প্রধান কারণ।’
জায়েদ বখত ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমে আসা এবং দেশে কৃষি উত্পাদন ভালো হওয়া সরবরাহকে স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছে। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অনেক কমেছে। ভারতসহ যেসব দেশ খাদ্য রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত অর্থবছরে এক কোটি ৬০ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বোরোর উত্পাদন হয়েছে এক কোটি ৮৫ লাখ টন। অন্যদিকে আমনের এক কোটি ২০ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ফলন হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এ তথ্য দিয়েছে।
তবে নিম্ন মূল্যস্ফীতিতে এখনই বেশি সন্তুষ্ট না হওয়ার পক্ষে মত দেন জায়েদ বখত। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়ে গেছে। কারণ, বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজারদর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জায়েদ বখত বলেন, সরকারকে বিশ্ববাজার থেকে নিম্নমূল্যের সময় পণ্য কিনে মজুদ বাড়াতে হবে, যেন যখনই মূল্যস্ফীতির চাপ দেখা দেয় তখনই মজুদ থেকে বাজারে ছেড়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এ জন্য তিনি আবার সরকারের মজুদ ও বণ্টনক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.