আফগানিস্তানে স্টেডিয়ামে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

আফগানিস্তানে একটি জনাকীর্ণ স্টেডিয়ামে জনসমক্ষে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে তালেবানরা। তার অপরাধ, সে বন্দুক হামলায় ১০ জনকে হত্যা করেছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, মাঙ্গল নামে ওই ব্যক্তিকে পূর্ব আফগানিস্তানের খোস্টে বিপুল জনসমাগমের সামনে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এটি ছিল ১২তম জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড। সুপ্রিম কোর্টের দাবি, মামলাটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং একাধিকবার পর্যালোচনা করার পর তাকে কিসাস বা প্রতিহিংসামূলক শাস্তি দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং মীমাংসার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। সোমবার প্রকাশিত সরকারি নোটিশে সাধারণ মানুষকে এই মৃত্যুদণ্ড প্রত্যক্ষ করার আহ্বান জানানো হয়।

কর্তৃপক্ষ জানায়, মাঙ্গল ছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে একটি বাড়িতে হামলা চালানো একদল আক্রমণকারীর অন্যতম সদস্য। ওই ঘটনায় তিন নারীসহ ১০ জন নিহত হন। জাতিসংঘের আফগানিস্তান মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক রিচার্ড বেনেট মঙ্গলবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগেই বলেন, এ ধরনের শাস্তি অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। তিনি এক্সে লিখেছেন, এগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

গত অক্টোবরে বাডগিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নাও-এর স্টেডিয়ামে জনসমক্ষে একইভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল এক ব্যক্তিকে। সে এক ব্যক্তি ও তার আট মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা করেছিল। তখনও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যই তাকে গুলি করে হত্যা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজারো মানুষ এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে। তিনটি আদালতের রায় এবং তালেবান সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার অনুমোদনের পর শাস্তি কার্যকর করা হয়।
এপ্রিল মাসে তিনটি ভিন্ন প্রদেশের স্টেডিয়ামে একই দিনে চারজনকে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বাডগিসে দুই ব্যক্তিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের এক পুরুষ আত্মীয় ছয়-সাত রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে। নিমরোজের জারাঞ্জ এবং পশ্চিম ফারাহ প্রদেশেও একজন করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কেউ কেউ মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে বলেন, এটি ইসলামি আমিরাতের শক্তি ও নীতি প্রদর্শন করে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তালেবানকে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ডের নীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একে মানব মর্যাদার প্রতি চরম অবমাননা বলে আখ্যা দিয়েছে। তালেবান চুরি, ব্যভিচার, মদপানসহ বহু অপরাধে এখনও বেত্রাঘাতসহ শারীরিক শাস্তি দেয়। সমস্ত মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন তালেবানের রহস্যময় সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তিনি বর্তমানে কান্দাহারে অবস্থান করছেন। সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর ১৯৮৯ সালের গৃহযুদ্ধের বিশৃঙ্খলা থেকে উদ্ভূত তালেবান মতাদর্শের মূল ভিত্তিই হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা- যা এখনো তাদের কঠোর নীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রয়ে গেছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.