যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক রিপোর্ট: ‘সভ্যতাগত বিলুপ্তির’ মুখোমুখি ইউরোপ

বর্তমান পরিস্তিতি বিবেচনায় ইউরোপ ‘সভ্যতাগত বিলুপ্তির’ ঝুঁকিতে পড়বে বলে সতর্ক করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নভেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক এক নথিতে এ সতর্কবার্তা দেয়া হয়।  ৩৩ পৃষ্ঠার ওই নথিতে বিশ্ব রাজনীতি, মিত্রতার কাঠামো এবং সামরিক-অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, নথিটিকে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘রোডম্যাপ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই নথি নিশ্চিত করবে যে যুক্তরাষ্ট্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক সফল জাতি হিসেবে টিকে থাকবে।

ইউরোপকে লক্ষ্য করে নথিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০ বছরের কম সময়ের মধ্যে ইউরোপ অচেনা রূপ ধারণ করবে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের তুলনায় ‘সভ্যতাগত বিলুপ্তির’ ঝুঁকি আরও বেশি। ইউরোপের কিছু দেশ ভবিষ্যত নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কিনা সে বিষয়েও নথিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
নথিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অতরাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে, অভিবাসন নীতি অস্থিরতা তৈরি করছে, জন্মহার কমে যাওয়া, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় পরিচয় সংকটসহ নানা কারণে ইউরোপের আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে, নথিতে ইউরোপের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থানকে গুরুত্ব দিয়ে জানানো হয়েছে, এসব দলকে সমর্থন জানাতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎসাহিত করবে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন জার্মানির অতি-ডানপন্থি এএফডি দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছে। যাকে জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা ‘চরম ডানপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জার্মানির সমাজবিন্যাস বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বহিরাগত পরামর্শের প্রয়োজন নেই। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবেই অভিহিত করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপের রাশিয়াবিষয়ক নীতি আত্মবিশ্বাসহীন। যুদ্ধ অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি বলেও দাবি করা হয় ওই নথিতে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার মূল সংস্করণে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে দিতে বলা হয়। তবে পরে তা সংশোধন করা হয়েছে।

নথিতে পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অগ্রাধিকারও জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সামরিক সম্পদের পুনর্বণ্টনের কথা বলা হয়েছে, যাতে কম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে সম্পদ সরিয়ে পশ্চিম গোলার্ধের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় ব্যবহার করা যায়। ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে মাদকবাহী নৌকায় বারবার আঘাত হানা হচ্ছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম রণতরী ইউএসএস জেরার্ল্ড ফোর্ড মোতায়েন রয়েছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। তাই পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি আরও সবল ও দৃঢ় করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে। নথিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ান নিয়ে সংঘাত প্রতিরোধে অগ্রাধিকার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া স্বনির্ভর শিল্পভিত্তি গড়ে তোলা এবং বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমানোর কথাও নথিতে গুরুত্বসহ উল্লেখ করা হয়েছে। যা ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক শুল্ক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.