কুতুবদিয়াবাসী কবে অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে রক্ষা পাবে by আবদুল্লাহ নাজিম আল মামুন
কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত কুতুবদিয়া উপজেলাকে বলা হয় বাতিঘরের দ্বীপ। এখানে বসবাস করে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। এই দ্বীপের বর্তমান আয়তন ১৮ মাইলের কম। একসময় এর আয়তন ছিল ১০০ বর্গমাইলের বেশি। বর্ষায় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে নদীভাঙনের কারণে দ্বীপটি এখন অস্তিত্বসংকটের মুখে পতিত হয়েছে। হয়নি কোনো উন্নয়ন।
৩৪ বছরেও কোনো টেকসই বেড়িবাঁধ পায়নি দ্বীপটি। যুগের পর যুগ জিও ব্যাগ দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকানো হয়েছে। কিন্তু এই জিও ব্যাগ সমুদ্রের বিশাল ঢেউ আর জোয়ারের ফলে ভেঙে গিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপ প্লাবিত হয়। যাতায়াতের মাধ্যমে কোনো নিরাপত্তা নেই। নেই ফেরি কিংবা যাত্রীবাহী লঞ্চ। মেডিকেলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল।
অন্যদিকে পাশেই রয়েছে মাতারবাড়ী ও মহেশখালী। মাতারবাড়ীতে রয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। মহেশখালীর সঙ্গে কক্সবাজারে যাতায়াতের জন্য রয়েছে ফেরি। কিন্তু বিপুল খনিজ সম্পদের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়াকে সব সময় অবহেলার চোখে দেখেছেন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।
কুতুবদিয়ায় রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস, যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। রয়েছে গন্ধক ও চুনাপাথর, যা কুতুবদিয়ার ভূপৃষ্ঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। এ ছাড়া কুতুবদিয়ায় কালোবালির মতো খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। দ্বীপটি তেল, গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস হিসেবে পরিচিত, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ ছাড়া কুতুবদিয়া উপজেলা পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় একটি দ্বীপ। দ্বীপের পশ্চিমে ‘মায়া দ্বীপ’ নামের আরও একটি চর জেগে উঠছে। এই চরটিকে পর্যটনের জন্য পরিকল্পনা করা যেতে পারে। আর এখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাতিঘর ও বাংলাদেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র। রয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে সমুদ্রসৈকত, যা উত্তর-দক্ষিণে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রায়।
যদি সরকার ও দেশি-বিদেশি ভ্রমণ-সংস্থাগুলো এগিয়ে আসে, তাহলে বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পের জন্য দ্বীপটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আর এখানকার মানুষের প্রধান পেশা সাগর থেকে মাছ আহরণ ও লবণ উৎপাদন করা। এখানকার লবণচাষিরা প্রতিবছর ৫৯০ একর জমিতে ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টনের অধিক লবণ উৎপাদন করে থাকেন, যা দেশে লবণশিল্পের জন্য বিশাল অবদান।
এত কিছু থাকার পরও কুতুবদিয়া নিয়ে কোনো মহাপরিকল্পনা নেই। দ্বীপবাসীরা পায়নি কোনো টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে নানা ভোগান্তিতে বসবাস করতে হচ্ছে কুতুবদিয়াবাসীকে।
কোনো ইমার্জেন্সি রোগীকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানেও উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যায় না। মেডিকেলের কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম মেডিকেলে ইমার্জেন্সি রোগীকে রেফার করে দেন। এরপর রোগীকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার সময় আরেক সিন্ডিকেটের মুখে পড়তে হয়। কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেলে কোনো ফেরি না থাকায় ডেনিসবোটের মালিকেরা ভাড়া বাড়িয়ে নেন। এভাবেই নানা ভোগান্তি ও সিন্ডিকেটের মধ্য দিয়ে কুতুবদিয়াবাসীকে পারাপার হতে হয় নিত্যদিন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে এই দ্বীপ নিয়ে মহাপরিকল্পনা করতে হবে। এই দ্বীপের দেড় লক্ষাধিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেলে ফেরি চালুর মধ্য দিয়ে যাতায়াতব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম দিতে হবে। রাস্তাঘাট সংস্কার করতে হবে। তবেই কুতুবদিয়াবাসী অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে রক্ষা পাবে।
* আবদুল্লাহ নাজিম আল মামুন
- কুতুবদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার
![]() |
| কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে শত কোটি টাকা খরচ করে ২০২৪ সালে নির্মাণ হয়েছিল ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এখন বাঁধের নড়বড়ে অবস্থা। ছবি: প্রথম আলো |

No comments