কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২০ বছরের যুদ্ধ জিতল তালেবান by শুভজিৎ বাগচী
রাজধানী কাবুলের লাগোয়া লোগার প্রদেশের একেবারে কেন্দ্রে পুল-এ-আলম জেলার অবস্থান। এই জেলার কেন্দ্রে বড় গ্রামের নাম পোরাখ। গ্রামের উচ্চবিত্তদের অধিকাংশই আফগানিস্তানের প্রভাবশালী স্তানিকজাই গোষ্ঠীর সদস্য। স্তানিকজাইদের এক ছেলের বিবাহ ছিল ২৪ অক্টোবর।
খাওয়া-দাওয়া সেরে আমাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বেরোলেন এক প্রবীণ ইঞ্জিয়ার মহম্মদ তাহের স্তানিকজাই ও তাঁর এক ভাই সাদেক স্তানিকজাই। মহম্মদ তাহেরকে গ্রামে সবাই ইঞ্জিনিয়ার নামেই ডাকেন। তিনি কৃষি বিজ্ঞান পড়েছেন ভারতের দেরাদুনে। আর সাদেক দীর্ঘদিন গ্রেপ্তার হয়ে জেলে ছিলেন। সেটা নব্বইয়ের দশকে প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লার আমলে।
পোরাখের ছেলে-বুড়ো-বাচ্চারা ক্রিকেট খেলা ফেলে ঘুরতে লাগল আমাদের সঙ্গে। আফগানিস্তানের আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে পোরাখের বিশেষ ফারাক নেই। শুষ্ক ও কঠিন মাটি, দেখে মনে হয় মরুভূমির অংশ, সামান্য দূরে পাহাড়। তার মাঝে বাংলাদেশের মতোই মাটি আর কাঠ দিয়ে বানানো বাড়ি, ফাঁকে ফাঁকে চাষের জমি। সেখানে মূলত ভুট্টা ও টমেটো দেখলাম।
কিছুক্ষণ ঘোরার পর এক বৃদ্ধ ইঞ্জিয়ার মহম্মদ তাহেরকে অনুরোধ করলেন গ্রামের কবরস্থানে আমায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। বৃদ্ধের নাম রুহুউল্লাহ স্তানিকজাই। তিনি ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ তাহেরের সবচেয়ে ছোট ভাই।
দরিদ্র দেশের কবরও দরিদ্র, ঝোপঝাড়ে পূর্ণ, ওপরে ধুলার আস্তরণ, কবরঘেরা গ্রিলে ধরেছে মরচে। সবচেয়ে বড় কবরটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন রুহুউল্লাহ। হাত রাখলেন কবরের নীলচে গ্রিলে। ফিসফিস করে নিজেই মনে হলো কিছু বললেন। কাঁধে রাখা কাপড়ের টুকরা চেপে ধরলেন চোখে, বুঝতে কিছু সময় লাগল যে তিনি কাঁদছেন। অঝোরে।
উৎসবের মেজাজ মুহূর্তে অন্তর্হিত হলো, একেবারে চুপ হয়ে গেলেন সবাই। বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ তাহের আর পাড়ার ছেলেরা বৃদ্ধের অশ্রুর কারণ ব্যাখ্যা করলেন। রুহুউল্লাহর পুত্র ২০ বছরের হামদুল্লাহ ছিলেন একজন তালেবান মুজাহিদ। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক সামরিক যৌথ বাহিনীর বিমান হামলায় পাশের প্রদেশ ওয়ার্দাকের টাঙ্গি উপত্যকায় হামদুল্লাহ ও তাঁর সাত সঙ্গীর মৃত্যু হয়।
রুহুউল্লাহ তাঁর বাসায় নিয়ে গেলেন। বাদাম, চা, চকলেট দিলেন। তারপর তিনি ও তাঁর আরও দুই পুত্র আলমারির পেছন থেকে একটা বড়সড় ব্যানার বার করে মেলে ধরলেন দেয়ালে। ব্যানারের চারপাশে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন পবিত্র স্থানের ছবি আর মাঝে ফারসিতে লেখা ‘শহীদ নায়ক হামদুল্লাহ, আল্লাহ তোমার শাহাদাত কবুল করুন।’ গ্রামের মানুষ এবং মুজাহিদদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে এই ব্যানার। আর কিছুই পাননি বৃদ্ধ রুহুউল্লাহ। ‘তবু বলব, ছেলের মৃত্যু বৃথা যায়নি। আমরা জয়লাভ তো করেছি’, রওনা দেওয়ার আগে হাত ধরে বললেন রুহুউল্লাহ।
‘আমরা জয়লাভ করেছি’
এটাই নতুন আফগানিস্তানের স্লোগান: ‘আমরা জয়লাভ করেছি।’ দ্বিতীয় তালেবানের শাসনের এটাই প্রধান সাফল্য—লাখো প্রাণের বিনিময়ে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা। নানান প্রশ্ন আছে ও থাকবে এই স্বাধীনতা নিয়ে, কিন্তু দেশকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে যে মুজাহিদরা মুক্ত করেছেন, সেটা মানুষ, বিশেষত গ্রামের মানুষের পক্ষে ভোলা কঠিন। কারণ, প্রতি গ্রামেই রয়েছেন হামদুল্লাহরা। এ ছাড়া পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে একটা সামগ্রিক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরাতের সরকার। অনেক ব্যর্থতার মধ্যে এটা একটা বড় সাফল্য, বলছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ তাহের স্তানিকজাই।
ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ তাহের বললেন, ‘এই যে রাস্তাটা আপনি দেখছেন, এটার পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে মহাসড়ক, যেটা লোগারের সঙ্গে কাবুলকে যুক্ত করেছে। আর পূর্ব দিকটা চলে গেছে গ্রামের ভেতরে। গ্রামের ভেতরে থাকত মুজাহিদরা, আর মহাসড়কের দিকে রিপাবলিকের বাহিনী।’
পশ্চিমের ফৌজ ও সরকার নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের সাবেক সরকারকে সাধারণভাবে ‘রিপাবলিকের সরকার’ বা ‘জামুরিয়াতের সরকার’ অর্থাৎ গণতন্ত্রের সরকার বলে চিহ্নিত করেন মানুষ।
ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ তাহের বললেন, ‘প্রায় প্রতি রাতেই গ্রামের ভেতরে ঢুকে আসতো রিপাবলিকের বাহিনী, আবার পাল্টা হামলা চালিয়ে কিছু পরে মুজাহিদরা তাদের মহাসড়কের দিকে ঠেলে দিত। এই যে রাস্তার ওপর দিয়ে এখন আপনি হাঁটছেন, এখানে ২০ বছর ধরে প্রায় প্রতি রাতে কার্যত একটা যুদ্ধ হতো। আর ভোরে একটা-দুটো লাশ পাওয়া যেত।’ রাতযুদ্ধের এই আতঙ্ক আর নেই।
এটা প্রায় গোটা আফগানিস্তানের চিত্র। নতুন সরকার আসার পর প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই লড়াই ও মৃত্যু বন্ধ হওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই তালেবান ও মুজাহিদদের কাছে কৃতজ্ঞ সাধারণ মানুষ। ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ তাহের যে তালেবানের সব সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন, তা নয়। কিন্তু গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময় তিনি বললেন, ‘লড়াইটা এরা না করলে গ্রামাঞ্চলে হয়তো আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম।’ তিনি তাঁর পুত্র হাসমত স্তানিকজাইয়ের সামনেই বললেন এ কথা।
হাসমত রিপাবলিক সরকারের আমলে আফগান পুলিশের একজন মুখপাত্র ছিলেন, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা যৌথ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন। কিন্তু তাঁর গ্রাম, তাঁর সম্প্রদায়, এমনকি তাঁর পিতাও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন রিপাবলিক সরকারের পতনের প্রয়োজন ছিল। এটা যৌথ বাহিনীর হারের অন্যতম প্রধান কারণ।
যুদ্ধে কত মানুষের মৃত্যু
আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধে (২০০১-২১) কত মানুষ সরাসরি অর্থাৎ খাদ্য বা চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। কিন্তু মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হিসাব একটা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্ট’।
কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্ট বলছে, আফগানিস্তানের যুদ্ধে সরাসরি আনুমানিক ১ লাখ ৭৬ হাজার জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৬ হাজার ৩১৯ জন বেসামরিক মানুষ। সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ ৬৯ হাজার ৯৫ জন এবং কমপক্ষে ৫২ হাজার ৮৯৩ বিদ্রোহী যোদ্ধা রয়েছেন। প্রকল্পের খুব অনির্দিষ্ট একটা ধারণা হলো যে ২০ বছরে ২ লাখ ৪১ হাজারের বেশি মানুষ যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণে মারা গেছেন। কস্টস অব ওয়ারের ২০১৫ সালের আনুমানিক হিসাব জানাচ্ছে, ক্ষুধা এবং রোগের মতো পরোক্ষ কারণে আরও ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আফগানিস্তানে মারা গেছেন। অর্থাৎ একটা রক্ষণশীল হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যার ০.৪ থেকে ০.৬ শতাংশ মানুষ আফগানিস্তানে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছেন ২০ বছরের যুদ্ধে।
এক পরিবারে শহীদ ১৪ জন
লোগার থেকে ২৪ অক্টোবর কাবুল ফিরি। এর সপ্তাহ খানেক আগে কান্দাহার যাই। সেখানে পৌঁছেই হোটেলে আটকে পড়তে হলো। কান্দাহারের সঙ্গে পাকিস্তানের যে সীমান্ত, সেই স্পিন বোল্ডাকে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার কারণে। স্পিন বোল্ডাকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম, কান্দাহারের তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় অনুমতি পাওয়া গেল না। কিছুটা মন খারাপ করেই কান্দাহারের দোকানবাজারে ঘোরাঘুরির সূত্রে আলাপ হলো বিচিত্র এক মানুষের সঙ্গে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক জোওন ফয়েজি।
সব শহরেই এমন একজন থাকেন, যাঁর জ্ঞান নানা বিষয়ে, সাধারণভাবে তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারবিরোধী হন। ফয়েজিও অনেকটা সে রকম। ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি থেকে ভূরাজনীতি—সবকিছু নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা তাঁর। সঙ্গে একটি বেসরকারি স্কুলও চালান, যেখানে মেয়েরাও পড়তে আসে। আফগানিস্তানে ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েদের আর স্কুলে আসতে দেওয়া হয় না, মাদ্রাসা ছাড়া। সেখানে ফয়েজি ছেলে ও মেয়েদের বেসরকারি স্কুল চালান। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের তাঁকে পছন্দ করার কোনো কারণ নেই, ফলে একবার দিন দশেকের জন্য গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তবে আবার নতুন তালেবানের সঙ্গে পুরোনো তালেবানের তফাত হলো, ফয়েজি সাহেব কিছুটা কাজকর্ম করতেও পারেন। আলাপের দ্বিতীয় দিনে তিনি নিয়ে গেলেন তাঁর এক পরিচিতের বাসায়, ধূলিধূসরিত মিরওয়েজ মহল্লায়।
বাড়ির প্রধান ফটকের কাছে এসে যে ব্যক্তি আমাদের স্বাগত জানালেন, দেখলাম তাঁর এক পায়ে কালো মোজা। তাঁর নাম ফিদা মহম্মদ। ভেতরে ঢুকে গালিচার ওপরে যখন পা খুললেন, তখন বুঝলাম পা কাঠের। কৃত্রিম পায়ে মোজা পরিয়ে রাখেন, যাতে ধুলাময়লা ঢুকে পা অকেজো না হয়ে যায়। আমাদের চা এবং চকলেট পরিবেশন করে বলতে শুরু করলেন পা হারানোর গল্প। সেটা ২০০৬ সালের ঘটনা।
বললেন, ‘আমরা ছিলাম পঞ্জয়াই জেলার তালুখান নামের এক জায়গার হাজিয়ানো-খলা নামে এক গ্রামে। আমাদের যেমন হয়…যৌথ কৃষক পরিবার, বাড়িতে ছিলেন ১৯ জন। আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, বসন্তের একেবারে শেষের দিক...।’
বাড়ির ভেতরে যাঁরা ঘুমাচ্ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ফিদা মহম্মদ, পরিবারের অর্ধেক সদস্যই শুয়ে ছিলেন খোলা আকাশের নিচে, বাইরের উঠানে। রাত ১১টা নাগাদ বিমান হামলা শুরু হয়।
‘এই যে এক ছেলে, এর ডান পায়ে গুলি লাগে। কিন্তু বেঁচে যায়। তখন বয়স ছিল ২ মাস, এখন ১৯...’ পাশে বসা বড় ছেলেকে দেখিয়ে বললেন ফিদা। ‘আমার লাগে বাঁ পায়ে।’ পরে পাকিস্তানের কোয়েটায় অস্ত্রোপচার করে পা বাদ দিতে হয়।
‘ওই রাতে আমাদের পরিবারের কতজন যে গুলিবিদ্ধ হয়, তার হিসাব নেই। এখন আর সঠিকভাবে মনেও পড়ে না...,’ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবতে শুরু করলেন ফিদা মহম্মদ। তারপর বললেন, ‘সব মিলিয়ে ১৪ জন শহীদ হন। কেউ তখনই, কেউ আবার হাসপাতাল যাওয়ার পথে।’ এই ১৪ জনের মধ্যে ফিদা মহম্মদের নাবালক এক ছেলে ও মেয়েও রয়েছেন।
বিমান হামলা চলে ভোর চারটা পর্যন্ত। ওই রাতে যে হামলা শুরু হয় কান্দাহারে, তা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে এরপরের প্রায় ১০ বছর। এর কারণ, মোল্লা ওমর এবং তালেবান নেতৃত্বের বড় অংশ কান্দাহার, হেলমান্দসহ দক্ষিণ আফগানিস্তানের পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে থাকত। কিন্তু এই ধারাবাহিক হামলায় একের পর এক গ্রাম, পরিবার, সংসার অকেজো হয়ে গেল, ফিদা মহম্মদের পায়ের মতোই। ইন্টারনেট ঘাঁটলে এখন শুধু দেখা যায় ‘ব্যাটল অব পঞ্জয়াই’, ‘ব্যাটল অব কান্দাহার’ প্রভৃতি। কত পরিবার যে ২০ বছরের যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে, সেটা এখন আর আঁচ করা যায় না। দরিদ্র দেশে এর হিসাবও রাখেন না কেউ আর।
ফিদা মহম্মদের পরিবারও সম্পূর্ণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। ১০ বছর পর ফিদা গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বাসা বাঁধেন, চাষবাস ছাড়তে বাধ্য হন। লোকের থেকে চেয়ে-চিনতে সংসার চালান। আফগানদের গভীর সম্প্রদায়ভিত্তিক জীবনের কারণে কোনো রকমে চালিয়েও নেন ফিদা মহম্মদ। আমাদের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে মোজাওয়ালা পা হাঁটুর নিচে গলিয়ে নিলেন, অনেকটা পাজামা পরার মতো।
‘এ কারণে যখনই কেউ বলবেন যে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ আফগানিস্তানে আসতে চাইছে, তখনই তার বিরোধিতা হবে, তুমুল প্রতিবাদ হবে,’ ফেরার পথে গাড়ি চালাতে চালাতে বললেন জোওন ফয়েজি।
আপাতত জোটবদ্ধ তাঁরা
সেপ্টেম্বর মাসে এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বলেছিলেন তাঁদের ফেলে যাওয়া সমরাস্ত্রের দখল নিতে বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নেবেন।
রাতারাতি আফগানিস্তানে সব পক্ষ এবং সব সম্প্রদায়—পাঠান, হাজারা, তাজিক, উজবেক প্রভৃতি এক হয়ে এর বিরোধিতা করে। ইসলামি আমিরাতের সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিরোধিতা করে ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, চীন।
ধারাবাহিকভাবে চালানো এই বোমা হামলা, গুম, খুন, রাতবিরেতে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অফিসারদের প্রমাণিত মানসিক অবসাদ ও তার জেরে হঠাৎ তাঁদের গাড়ি বা বিমান নিয়ে বেরিয়ে গুলি চালিয়ে কয়েক ডজন মানুষকে হত্যা থেকে মুখোমুখি সংঘর্ষে গ্রামের পর গ্রামে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু বা পঙ্গু করে দেওয়ার ঘটনা আফগানিস্তানের সমাজকে জোটবদ্ধ করেছে, অন্তত আপাতত।
আফগানিস্তানে নানান সম্প্রদায় ও জাতির বসবাস। তাদের মধ্যে বিরোধ আছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা এক হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঠানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছে—এটাই আফগানিস্তানের কয়েক শ বছরের ইতিহাস। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০ বছরের যুদ্ধ এদের এক জায়গায় নিয়ে এসেছে—তালেবানদের মধ্যে সার্বিকভাবে পাঠানবিরোধী সংখ্যালঘু হাজারাও আছেন, তাঁদের বড় অংশ শিয়া হওয়া সত্ত্বেও। প্রধান সংখ্যালঘু তাজিকরা তো আছেনই।
পশ্চিমের আক্রমণ ছাড়া এটা হতো না। আর এদের ইসলামের মাধ্যমে একটা সূত্রে বেঁধে ফেলার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বাধীন তালেবানের।
তবে এই জয়ের আরও অনেক কারণ আছে—বিশেষত সামরিক স্তরে, যার ব্যাখ্যা দিলেন দুজন। তালেবানের এক ‘ফুট সোলজার’ বা মাঠপর্যায়ের সেনা আখতার জান আর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুদ্ধবিষয়ক সংবাদদাতা আসাদুল্লাহ নাদিম। তবে তাঁদের কথা পরের পর্বে।
![]() |
| পোরাখে গ্রামের বাড়িতে দুই ভাই, ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ তাহের স্তানিকজাই (বাঁয়ে) ও তাঁর ভাই সাদেক স্তানিকজাই। ছবি: লেখকের তোলা |

No comments