প্লট জালিয়াতি: টিউলিপের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বৃটিশ আইনজীবীদের নিন্দা

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের মামলার রায়ের আগে এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বৃটেনের শীর্ষ পাঁচ আইনজীবী। তারা চলমান মামলাকে ‘কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।  এ বিষয়ে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।

এতে বলা হয়, বৃটেনের বর্তমান ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী ছিলেন টিউলিপ। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে উপহার নেয়ার জেরে তার বিরুদ্ধে লন্ডনের পত্রিকাগুলোতে লাগাতার প্রতিবেদন ছাপা হয়। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে তার সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে মন্ত্রীত্ব ছাড়েন টিউলিপ। বাংলাদেশে প্লট বরাদ্দের জালিয়াতির মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনিও অভিযুক্ত। তার অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হয় এবং এই মামলার রায় ঘোষণার কথা জানিয়েছে আদলত। আদালতে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আজীবন কারাদণ্ড চাওয়া হয়েছে।

গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়, হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি টিউলিপ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। গত সপ্তাহে শেখ হাসিনাকে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন রবার্ট বাকল্যান্ড। যিনি বরিস জনসন সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন। তার সঙ্গে আরও আছেন মিনিক গ্রিভ, শেরি ব্লেয়ার কেসি, ফিলিপ স্যান্ডস কেসি ও জেফ্রি রবার্টসন কেসি। আইনজীবীদের সই করা চিঠিতে বলা হয়, টিউলিপের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পাননি তিনি। এমনকি আইনগত প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করতে পারেননি। আইনজীবীরা লিখেছেন, এ ধরনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ কৃত্রিম। এভাবে কাউকে বিচার করা নিছক অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যম।

গত আগস্টের শুরু থেকে ঢাকা আদালতে টিউলিপ সিদ্দিকসহ তার খালা শেখ হাসিনা, মা, ভাই ও বোনসহ অনেকের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। অভিযোগ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ঢাকায় নিজের মায়ের জন্য বরাদ্দ প্লট হাতিয়ে নিয়েছিলেন টিউলিপ। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

চিঠিতে আইনজীবীরা লিখেছেন, যে সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়েই এমন বিচারিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তারা আরও বলেন, টিউলিপ বৃটেনের নাগরিক এবং সংসদ সদস্য। তিনি পলাতক নন। সংসদ ভবনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, এমনকি আইনগত ভিত্তি থাকলে তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণও করা সম্ভব। কিন্তু তিনি অভিযোগপত্র পাননি, আইনজীবীও পাননি।

আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়মিত মিডিয়াতে টিউলিপের বিরুদ্ধে মন্তব্য করছেন। যা একটি ন্যায়সঙ্গত বিচারের পরিপন্থী। তারা লিখেছেন, গণমাধ্যমে এমন প্রচার ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অপরাধের ইঙ্গিতমূলক বক্তব্য নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থী।

চিঠির শেষে আইনজীবীরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, উল্লিখিত অভিযোগ সংশোধন করে টিউলিপ সিদ্দিকের জন্য ন্যায়সংগত বিচার নিশ্চিত করুন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গার্ডিয়ানের অনুরোধে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ হাইকমিশন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.