মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ ট্রাম্পের

মিশর, লেবানন ও জর্ডানের মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখাগুলোকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। হামাসের প্রতি সমর্থনের অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।

এতে বলা হয়, সোমবার জারি করা এই নির্বাহী আদেশ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের দমননীতিকে আরও তীব্র করেছে। এতে বলা হয়, জর্ডানের মুসলিম ব্রাদারহুড নেতারা হামাসকে সহায়তা দিয়েছেন এবং লেবাননের শাখা আল-জামাআ আল-ইসলামিয়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাস ও হিজবুল্লাহর পক্ষ নিয়েছে।

একজন মিশরীয় নেতা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে সহিংস হামলার ডাক দিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়। যদিও হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ দেখায়নি। উল্লেখ্য, মিশরে ব্রাদারহুড দীর্ঘদিন ধরেই নিষিদ্ধ এবং গোপন তৎপরতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এই সংগঠন।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিম ব্রাদারহুডের আন্তঃদেশীয় নেটওয়ার্ককে মোকাবিলা করছেন। যে নেটওয়ার্ক সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দেয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও মিত্রদের বিরুদ্ধে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে।
ট্রাম্পের আদেশ অনুযায়ী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ট্রেজারি সেক্রেটারিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে। এর ৪৫ দিনের মধ্যে প্রাসঙ্গিক শাখাগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। সাধারণত এই প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তালিকাকরণ প্রক্রিয়া আরও দ্রুতও হতে পারে। আদেশটি অন্যান্য শাখাকেও কালো তালিকাভুক্ত করার সুযোগ উন্মুক্ত রেখেছে।

এই ঘোষণা কার্যকর হলে সংগঠনটিকে সহায়তা প্রদান করা বেআইনি বলে বিবেচিত হবে। তাদের বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশও প্রধানত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তাদের তহবিল প্রবাহও বাধাগ্রস্ত করা হবে।

১৯২৮ সালে মিশরীয় ইসলামী চিন্তাবিদ হাসান আল-বান্না প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম ব্রাদারহুড নামের এই সংগঠন। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বহু দেশে সরাসরি এই সংগঠনের শাখা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দেশে এই সংগঠনের মতালম্বীরা জাতীয় নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বহু আগেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থি কর্মীরা বহুদিন ধরেই ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছিল। সমালোচকদের মতে, এমন পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে আরও উৎসাহিত করবে এবং স্বাধীন রাজনৈতিক মত প্রকাশের ওপর দমন-পীড়ন বাড়াবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সমাজের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেও এটি ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে মুসলিম সংগঠনগুলোর ওপর ভিত্তিহীনভাবে ব্রাদারহুডের যোগসাজশের অভিযোগ আনা হতে পারে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.