কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক চিকিৎসক সাফিয়াকে কেন মুক্তি দেবে না ইসরায়েল
গত বছরের ডিসেম্বরে গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় চিকিৎসক সাফিয়াকে মারধর ও অপহরণ করা হয়। কারণ, তিনি অবরুদ্ধ রোগীদের ছেড়ে যেতে রাজি হননি।
হামলার পরের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাফিয়া সাদা মেডিকেল অ্যাপ্রোন পরে ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তা পার হচ্ছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, সাফিয়াকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে আটক রাখা হয়েছে। ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত’ থাকার অভিযোগে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তখন থেকেই চিকিৎসক সাফিয়াকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখা হয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দী বিনিময় চুক্তি হলেও হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, চিকিৎসক সাফিয়াকে মুক্তি দেওয়া হবে না।
গত শুক্রবার হামাসের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, দখলদার বাহিনী চিকিৎসক হুসাম আবু সাফিয়াকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
গত জুলাইয়ে আইনজীবী ঘাইদ ঘানেম কাসেম জানান, ইসরায়েলের কুখ্যাত ওফার কারাগারে বন্দী অবস্থায় সাফিয়ার শরীরের ওজন এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমে গেছে। তাঁকে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়েছে এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য বারবার করা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
কাসেম ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘চিকিৎসক হুসাম আবু সাফিয়া ভালো নেই। আমি তাঁর সঙ্গে সর্বশেষ দেখা করি কয়েক দিন আগে, ৯ জুলাই। তিনি ৪০ কেজির বেশি ওজন হারিয়েছেন, যা তাঁর মোট ওজনের এক-তৃতীয়াংশের বেশি।’
আইনজীবী আরও বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাঁর ওজন ছিল ১০০ কেজি। এখন তাঁর ওজন ৬০ কেজির বেশি নয়। তাঁকে গত ২৪ জুন প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছিল।
আইনজীবী কাসেম আরও বলেন, চিকিৎসক সাফিয়া ‘অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনে’ ভুগছেন। আইনজীবীর মাধ্যমে সম্প্রতি আনা তাঁর চশমাটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
হামাসের কর্মকর্তার মতে, রাফার আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের পরিচালক এবং গাজার ফিল্ড হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মারওয়ান আল-হামসকেও মুক্তি দেওয়া হবে না।
এই বছরের জুলাইয়ে বেসামরিক পোশাকে থাকা একদল ছদ্মবেশী ইসরায়েলি বাহিনী হামসকে অপহরণ করে।
প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের (পিসিএইচআর) সংগৃহীত প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, ২১ জুলাই চারজন সশস্ত্র ব্যক্তি বেসামরিক পোশাকে রাফার পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকার আল-রশিদ সড়কে অবস্থিত রেড ক্রসের ফিল্ড হাসপাতালের কাছে সি ক্যাসল ক্যাফেতে অভিযান চালান।
ওই ইসরায়েলি দলটি গুলি চালালে হামস আহত হন। সেখানে স্বাধীনভাবে কাজ করা ফটোসাংবাদিক তামের রেভি রফিক আল-জানিন ও ইব্রাহিম আতেফ আতিয়াহ আবু আশেইবাহ নিহত হন।
পিসিএইচআর জানিয়েছে, আল-জানিন ও হামসের যৌথ উদ্যোগে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের সময় এই হামলা চালানো হয়।
এরপর হামসকে একটি সাদা গাড়ির পেছনে অনেকটা ছুড়ে ফেলে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাঁর আটকের বিষয়ে কোনো কিছু না জানানোয় তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
প্যালেস্টিনিয়ান হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় ২৮ জন চিকিৎসক ইসরায়েলি কারাগারে আটক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজন সার্জারি, অর্থোপেডিকস, ইনটেনসিভ কেয়ার, কার্ডিওলজি ও পেডিয়াট্রিকসের সিনিয়র কনসালট্যান্ট।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীরা ইসরায়েলি কারাগারে ব্যাপক ও গুরুতর দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, যাকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো পরিকল্পিত অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বন্দীদের অনাহারে রাখা, চিকিৎসায় অবহেলা, শারীরিক নির্যাতন, অপমান, যৌন নিপীড়ন, চুরি এবং নজিরবিহীনভাবে নির্জন কারাবাস রাখার মতো নির্যাতনের বিবরণ উঠে এসেছে।
একজন বেসামরিক চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও আবু সাফিয়াকে ইসরায়েলি আইনে ‘বেআইনি যোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার অর্থ হলো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ আইনটিকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন। এই আইন কোনো আদালতের আদেশ বা আইনি সহায়তা ছাড়াই কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার এবং তাঁদের অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে তথ্য গোপন করার ক্ষমতা দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে।
![]() |
| হুসাম আবু সাফিয়া। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া |

No comments