রংপুরের তারাগঞ্জ: আলুর দামে ধস, সরকারি দর ২২, কৃষক পান ৫ টাকা by রহিদুল মিয়া
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার মৌসুমে তারাগঞ্জে ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। তিনটি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ১৬ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত হিমাগার থেকে আলু বের হয়েছে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। অথচ গত বছর এ সময় তিন ভাগের দুই ভাগ আলু বের করা হয়েছিল।
ইকরচালীর বড় আলুচাষি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘হিমাগারে জায়গা না পেয়ে গোডাউনে, ঘরে আলু সংরক্ষণ করেছি। তা পচে যাওয়ায় ট্রাকে ট্রাকে সড়কের ধারে ফেলেছি। হিমাগারে যে আলু আছে, দাম না থাকলে ছেড়ে আসতে হবে।’
চাষিদের হিসাব অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে আলু উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা। বস্তা, গাড়িভাড়া, শ্রমিকের খরচ, হিমাগারে সংরক্ষণ খরচসহ এ খরচ দাঁড়াচ্ছে কেজিপ্রতি ২৯ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আলুর দাম প্রতি কেজি ১২ টাকা। হিমাগারে প্রতি কেজি আলুর দাম ১২ টাকা হলেও হিমাগারভাড়া বাদ দিয়ে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকার কিছু বেশি। ফলে সরকারি ক্রয় দর ২২ টাকা আর বাস্তবে কৃষকের প্রাপ্তি ৫ টাকার মধ্যে বিশাল বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এতে হিমাগার পর্যায়ে কেজিতে কৃষকের ১৮ টাকা লোকসান থাকছে।
গত শুক্রবার তারাগঞ্জের তিনটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু সাড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা না থাকায় তেমন কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি। হিমাগারের শেডগুলো অধিকাংশ ফাঁকা। সিনহা হিমাগারে কথা হয় বামনদীঘি গ্রামের কৃষক সোনা মিয়ার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তিন একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। জমিতে তাঁর উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ টাকা পড়েছে। মৌসুমের শুরুতে ১৪ টাকা কেজি হওয়ায় লোকসানের ভয়ে আলু হিমাগারে রেখেছেন। সরকার ২২ টাকা দাম বেঁধে দিলেও, সেই দামে কেউ আলু নেন না।
তারাগঞ্জের প্রামাণিকপাড়ার কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২০ টাকা, বস্তা, গাড়িভাড়া, হিমাগারভাড়াসহ ৩০ টাকা। অথচ বাজারে পাচ্ছি ১২ টাকা। হিমাগারের খরচ বাদ দিয়ে হাতে আসে ৫ টাকা। এভাবে লোকসান হলে কৃষকেরা আলু চাষ ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকবেন।’
সিনহা হিমাগারের ব্যবস্থাপক দুলাল হোসেন বলেন, ‘হিমাগারের আলু সংরক্ষিত আছে১ লাখ ৫১ হাজার বস্তা। এই সময়ে গত বছর তিন ভাগের বেশি আলু বের হয়েছিল। এবার আজ পর্যন্ত মাত্র ২৮ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছে। আলুর অবস্থা খুবই ভয়াবহ।’
তারাগঞ্জের এন এম হিমাগারের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বরে মধ্যে হিমাগারের সব আলু বের হয়ে যায়। কিন্তু এবার যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হয় না আলু সব বের হবে। ২ লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা থাকলেও এ পর্যন্ত আলু বের হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার বস্তা।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, সরকারিভাবে রংপুরে আলু কেনা হলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। আগামী মৌসুমে আলুর চাষ কমবে। কৃষকেরা যাতে পরিকল্পিতভাবে আলু চাষ করেন, তা নিয়ে মাঠে কাজ করছেন, যাতে কৃষকেরা লোকসানে না পড়েন।
| আলুর দাম না থাকায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ক্রেতা না পাওয়ায় হিমাগারের বারান্দায় এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে আলু। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারাগঞ্জের এন এন হিমাগারে। ছবি: প্রথম আলো |
No comments