আলোর নিচে অন্ধকার: দুবাইয়ের গ্ল্যামার পাড়ায় যৌন ব্যবসা
কিন্তু বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অনুসন্ধান বলছে, বাস্তবতা আরও ভয়ংকর। উগান্ডার তরুণীরা জানান, তারা ভেবেছিলেন দুবাই গিয়ে সুপারমার্কেট বা হোটেলে কাজ করবেন। কিন্তু মুসেগওয়ার নেটওয়ার্কে আটকা পড়ে বাধ্য হন যৌনকর্মে। মিয়া ছদ্মনামের এক যুবতী জানান, এক গ্রাহক নিয়মিতভাবে নারীদের উপর মলত্যাগ করার দাবি করতো। তিনি বলেন, মুসেগওয়ার চক্রে পড়ার পর তাকে ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়। আগমনের পর জানানো হয় তিনি ২০০০ পাউন্ড ঋণী। দুই সপ্তাহের মধ্যে সেটি দ্বিগুণ হয়ে যায়- ভিসা, বিমান টিকিট, থাকা ও খাবারের নামে।
মোনিক কারুঙ্গি নামের এক তরুণী পশ্চিম উগান্ডা থেকে দুবাই যান। কিছুদিনের মধ্যেই মুসেগওয়ার কাছে ২৭০০০ ডলারের বেশি ঋণে জড়িয়ে পড়েন। তার পরিবার জানায়, তিনি কান্না ভেজা ভয়েস নোট পাঠাতেন। মোনিক ও কায়লা বিরুঙ্গি নামের আরও এক উগান্ডান তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু হয় দুবাইয়ের উঁচু ভবন থেকে পড়ে। যদিও পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বলেছে, পরিবারের দাবি সঠিক তদন্ত হয়নি। মোনিকের আত্মীয় মাইকেল জানান, তিনি যখন ঘটনাস্থলে যান, দেখেন অ্যাপার্টমেন্টে মাদক, যৌনকর্ম আর চার্লস মুসেগওয়া নিজেই নারীদের সঙ্গে বিছানায়। তাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে মুসেগওয়া বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে দুবাইয়ে আছি। দুবাই আমার। তুমি আমাকে রিপোর্ট করতে পারবে না।
আমি-ই দূতাবাস। মিয়া ও কিয়েরা উভয়েই নিরপেক্ষভাবে এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ট্রয় নামের একজন আগে মুসেগওয়ার নেটওয়ার্কে কাজ করতেন। তিনি জানান মুসেগওয়া নাইট ক্লাবগুলোর নিরাপত্তা কর্মীদের ঘুষ দিতেন, যাতে তার নারীরা সেখানে প্রবেশ করে গ্রাহক খুঁজতে পারে। মুসেগওয়া নিজেকে আড়ালে রাখতে অন্যদের নামে অ্যাপার্টমেন্ট ও গাড়ি ভাড়া নিতেন। ফলে কোনো কাগজপত্রে তার নাম থাকত না।
মোনিকের স্বপ্ন ও করুণ পরিণতি: মোনিক একসময় নতুন চাকরি পেয়ে খুশি হন। ভাবেন, যৌন ব্যবসা থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু ২০২২ সালের মে মাসে তিনি নতুন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পড়ে মারা যান। তার দেহ কখনো পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি। ধারণা করা হয়, দুবাইয়ের আল কুসাইস কবরস্থানের ‘দ্য আননোন’ অংশে অজ্ঞাত কবরেই শায়িত আছেন তিনি।
উগান্ডায় বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোতে কাজ করতে যাওয়া বিশাল শিল্পে পরিণত হয়েছে, যা বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার কর রাজস্ব এনে দেয় দেশটিতে। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর শোষণ। মানবাধিকারকর্মী মারিয়াম মুইজা জানান, তিনি উপসাগর অঞ্চল থেকে কমপক্ষে ৭০০ নারীকে উদ্ধার করেছেন। তার ভাষায়, মানুষকে বলা হয় সুপারমার্কেটে চাকরি দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়।
মুসেগওয়ার বক্তব্য: সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চার্লস ‘অ্যাবি’ মুসেগওয়া। তার দাবি, আমি শুধু পার্টি আয়োজন করি। বড় খরচকারী লোকজন টেবিলে আসে, মেয়েরা স্বেচ্ছায় আসে। আমি কোনো অবৈধ ব্যবসা চালাই না। তিনি আরও দাবি করেন, মোনিক ও কায়লার মৃত্যু যথাযথভাবে পুলিশ তদন্ত করেছে এবং তিনি তাদের মৃত্যুর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে বিবিসি আল বারশা পুলিশ স্টেশনে কেস ফাইল দেখতে চাইলে কোনো সাড়া মেলেনি।

No comments