আরও অনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র চুক্তিতে চোখ নেতানিয়াহুর

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বেশিরভাগ বক্তব্যই দেন সচেতনভাবে। তাই তার সাম্প্রতিক ‘স্পার্টা ভাষণ’ ও তথাকথিত সাবমেরিন কেলেঙ্কারির তদন্তে নিযুক্ত গ্রুনিস কমিটির কাজের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে দেখা জরুরি। এ কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সাবমেরিন ও অন্যান্য নৌযান কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন হারেৎজ আরও লিখেছে, নেতানিয়াহু তার ‘স্পার্টা ভাষণে’ প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, আইনি আপত্তিকে উপেক্ষা করা এবং দ্রুত অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেন। উদ্দেশ্য ইসরাইল নিরাপত্তার জন্য বিদেশি নির্ভরতা যাতে কমাতে পারে। তিনি সেইসব পদক্ষেপকেও যৌক্তিক প্রমাণ করতে চান, যেগুলো এখন গ্রুনিস কমিটির পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

গত সপ্তাহে খুব বেশি সংবাদ কাভারেজ ছাড়াই কমিটি ১৫ মাস আগে যেসব সতর্কবার্তা দিয়েছিল তার বিস্তারিত প্রকাশ করে। সেই সতর্কবার্তা পাঠানো হয় পাঁচজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে ছিলেন নেতানিয়াহু ও ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এবং পরে মোসাদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইয়োসি কোহেন। কমিটি বিস্তারিত জানায়, কীভাবে সাবমেরিন কেলেঙ্কারির একাধিক দিক সামনে এসেছিল- যেটি প্রথম প্রকাশ করেন সাংবাদিক রবিভ ড্রুকার ২০১৬ সালের শেষ দিকে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এই বিষয়গুলো শিরোনামে আধিপত্য বিস্তার করতে পারত এবং হয়তো গণবিক্ষোভও ছড়িয়ে পড়ত। কমিটি নির্ধারণ করে নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভা ও নিরাপত্তা মন্ত্রিসভাকে বিভ্রান্ত করেন। ফলে তারা জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলোতে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়। কমিটির মতে, নেতানিয়াহু ও কোহেন বৈঠকগুলো রেকর্ড না করার চেষ্টা করেন এবং নির্বাচিতভাবে মন্ত্রীদের আংশিক তথ্য দেন। নেতানিয়াহুকে পাঠানো সতর্কবার্তায় বলা হয় তিনি ‘জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপদগ্রস্ত করেছেন এবং ইসরাইলের পররাষ্ট্র সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।’ যুদ্ধের বর্তমান পর্যায়ের অন্যায্যতা এবং জিম্মিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার প্রেক্ষাপটে এগুলো হয়তো তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয়। কমিটি কয়েক বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র চুক্তিতে গুরুতর অনিয়ম ও গোপন উদ্দেশ্যের সন্দেহ প্রকাশ করে। যুদ্ধের শুরুতে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা বিবেচনায় সরকার অতিরিক্ত বহু বিলিয়ন শেকেল অনুমোদন করেছে, যার বেশিরভাগই অস্ত্র কেনার জন্য ব্যয় হবে। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে প্রায় কোনো ধরনের তদারকি ছাড়াই, অচলাবস্থায় থাকা সরকার ও নেসেটের মাধ্যমে।

তাই নেতানিয়াহু যখন ‘প্রতিবন্ধকতা দূর করার’ কথা বলেন, অর্থনৈতিক ও ব্যবস্থাপনা ভাষার আড়ালে তার আসল পরিকল্পনা স্পষ্ট হয়: নতুন অস্ত্র চুক্তির বিপুল সুযোগ তৈরি করা- যার ওপর কোনো কার্যকর তদারকি থাকবে না; বেসরকারি স্বার্থ অগ্রসরের উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হবে। গ্রুনিস কমিটি সতর্ক করেছে, কিন্তু এই সতর্কবার্তা হয়তো কোলাহলের ভিড়ে চাপা পড়ে যাবে।

এ সপ্তাহে সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা আরেকটি আর্থিক রায়ের সঙ্গে লড়ছিলেন- জানুয়ারি থেকে কেরিয়ার অফিসারদের পেনশন বৃদ্ধি বন্ধ করার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত। প্রায় নয় বছর আগে রাষ্ট্রীয় নিরীক্ষক যে মহা পেনশন ডাকাতি প্রকাশ করে, সেটিই এখন বন্ধ হলো। প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে আইডিএফ চিফস অফ স্টাফ ও নিরাপত্তা সংস্থার সমকক্ষরা অবসরপ্রাপ্তদের গড়ে ১৪.৮ শতাংশ বেশি ভাতা দিয়েছিলেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গোপন রাখা হয়েছিল। তৎকালীন চিফ গাদি আইজেনকট কিছুটা কমালেও প্রথাটি চলতেই থাকে। ছয় বছরের বিলম্ব শেষে আদালত রায় দেয় যে সরকার ও নেসেটের হাতে এটি সমাধানের জন্য তিন মাস সময় আছে।
ফলাফল হিসেবে শত শত অফিসার এই বছরের শেষের আগে অবসর নেয়ার ইচ্ছা জানিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে অবসর সুবিধা খর্ব হতে পারে এবং সরকার দ্রুত সমাধান দেবে না। একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের চাপের কারণে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক হারে জনবল সংকট দেখা দিয়েছে।

তবু নতুন ‘স্পার্টা’র নেতাদের এতে উদ্বেগ নেই। তারা সমাজের ক্ষুদ্র অংশের উচ্চ প্রেরণার ওপর নির্ভর করছেন এবং ধর্মীয় দলগুলোর সেনা এড়ানোর সুযোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাইছেন।
সাংবাদিক আসেনহাইমের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক তুলে ধরেছে ইসরাইলের স্থলবাহিনীর দশকের অবনতির ধারাবাহিকতা, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) গাই হাজুত তার বইয়ে (দ্য হাই-টেক আর্মি অ্যান্ড দ্য ক্যাভালরি আর্মি) পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এই পতনের। ৭ অক্টোবর সীমান্তে নিয়োজিত তরুণ সেনাদের দুর্বলতার পেছনে মূল কারণ ছিল গোয়েন্দা বিভাগ ও শিন বেতের ভয়াবহ ব্যর্থতা। চিফ অফ স্টাফ এয়াল জামির স্বীকার করেছেন, এটাই গণহত্যার সুযোগ তৈরি করেছিল।

https://mzamin.com/uploads/news/main/180950_Abul-2-1.webp

No comments

Powered by Blogger.