কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না: বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়েছেন। যা ভবিষ্যতের যেকোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে কার্যত অসম্ভব করে তুলবে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে তিনি একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। বলেছেন, আমরা আমাদের প্রতিশ্রুত পূর্ণ করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে না।

ফিলিস্তিনকে নিয়ে তিনি বলেন, এই জায়গা আমাদের। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারীদের জন্য ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি তৈরি করা হবে। ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিমতীরের সকল ইসরাইলি বসতি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অবৈধ বলে গণ্য করা হয়। আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদাহ সালহুত বলেন, এই সম্প্রসারণ পরিকল্পনা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের ভৌগলিক সংযোগ ধ্বংস করবে। এর ফলে ভবিষ্যতে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ওই এলাকায় শান্তি আনা সম্ভব। তিনি একে এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন।

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই অধিকৃত ভূখণ্ডে বসতি স্থাপনের পক্ষে এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার বিরোধী। ১৯৯০ এর দশকে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তির বিরুদ্ধেও তিনি সরব ছিলেন। ২০০১ সালে ফাঁস হওয়া এক ভিডিওতে নেতানিয়াহু দাবি করেন, তিনি কার্যত ওই চুক্তির ইতি টেনেছেন।

৭২ ঘণ্টায় ছয় দেশে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল

মাত্র ৭২ ঘণ্টায় ছয় ছয়টি দেশে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালায় দেশটি। তাদের দাবি সেখানে হামাস নেতৃবৃন্দের বৈঠককে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের ওই হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে হামাসের রাজনৈতিক শাখার উচ্চপদস্থ নেতা খালিদ আল হাইয়া অন্তর্ভুক্ত। মূলত তার কার্যালয় লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়। এতে হাইয়ার সঙ্গে তার তিনজন দেহরক্ষী এবং কাতারের এক সেক্রেটারি নিহত হয়েছেন। তবে অন্যান্য কয়েকজন উচ্চপদস্থ নেতা প্রাণে বেঁচে যান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এতে বলা হয়, সেসময় ইসরাইলের হামলা শুধু কাতারেই সীমাব্ধ ছিলোনা। মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ছয়টি দেশে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। গণমাধ্যমটি বলছে, ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার এবং ইয়েমেনে হামলা চালানো হয়েছে। সোমবার থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১৫০ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এরমধ্যে সোমবার ৬৭ জনের মৃতদেহ গ্রহণ করেছে হাসপাতাল। এছাড়া ৩২০ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই নিহতের মধ্যে ১৪ জন ত্রাণপ্রার্থী ছিলেন। এছাড়া দুই শিশুসহ মোট ছয়জন দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছেন। আর বাকি ৮৩ জন নিহত হয়েছেন মঙ্গলবার। এ দিন আরও ২২৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

গাজায় হামলার মধ্যেই সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে লেবাননের বেক্কা এবং হেরমেল জেলায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে সেখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগার এবং তাদের সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে তেল আবিব। যদিও তাদের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। এখনও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। গত নভেম্বরে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর হিজবুল্লাহকে টার্গেট করে পুনরায় হামলা চালানো ইসরাইল। একই দিন সিরিয়ারতেও হামলা চালায় দেশটি। ওই দিন লাতাকিয়া নামক শহরের একটি বিমান ঘাঁটি এবং সামরিক ব্যারাকে হামলা চালানো হয়। তবে এতে বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান তারা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। ইসরাইলের ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই হামলাকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

সোমবার রাতে তিউনিসিয়ার গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রধান জাহাজ বন্দরে নোঙ্গর করার সময় ড্রোন হামলার শিকার হয়। ধারণা করা হচ্ছে এটি ইসরাইলের হামলার অংশ। ড্রোন হামলায় বোটটিতে আগুন লেগে যায়। ২৩ মিটার লম্বা ওই জাহাজটিতে পর্তুগালের পতাকা ছিল। জাহাজের বোর্ডে ছয়জন কর্মকর্তা অবস্থান করছিলেন। ওই হামলায় জাহাজের প্রধান ডেক মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পান জাহাজে অবস্থানকারী যাত্রী এবং ক্রু। এদিকে বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানার বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। যেটি এক মাসের মধ্যে তেল আবিবের দ্বিতীয় হামলা। এর আগে ২৮ আগস্ট ইসরাইলের বিমান হামলায় হুথি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল রাহাউই নিহত হন।
https://mzamin.com/uploads/news/main/179587_Kaium-1.webp

No comments

Powered by Blogger.