উপসাগরীয় অঞ্চল ঝুঁকিতে, বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানি বলেছেন, দোহায় ইসরাইলের হামলার অবশ্যই একটি ‘যৌথ প্রতিক্রিয়া’ প্রয়োজন। আরব নেতারা ইতিমধ্যে দোহায় ছুটে গেছেন সংহতি জানাতে। তিনি সিএনএন’কে বুধবার বলেন, এখান থেকে একটি প্রতিক্রিয়া আসবে। এ প্রতিক্রিয়া নিয়ে বর্তমানে আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলই ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি এমন কিছু হবে যা ইসরাইলকে এই দমনপীড়ন চালিয়ে যেতে নিরুৎসাহিত করবে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তিনি অভিযুক্ত করেন এ অঞ্চলকে ‘অরাজকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন’ বলে।
আল জাজিরার চার্লস স্ট্র্যাটফোর্ড জানান, কাতারে শিগগির একটি আঞ্চলিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে আইনজীবী দল গঠন করেছে, যাতে নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা যায়। তিনি বলেন, চাপ ক্রমেই বাড়ছে শুধু কাতার থেকে নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও। এজন্যই তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ) সিএনএন-এ এত জোরালো বক্তব্য দিলেন।
মঙ্গলবার ইসরাইলি বাহিনী দোহায় হামাস নেতাদের টার্গেট করে, যারা সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠক করছিলেন। এ হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হন। তবে হামাস জানিয়েছে তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব বেঁচে গেছে। কাতার বলেছে, তাদের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ হামলার নিন্দা করেছে আন্তর্জাতিক মহল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বুধবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে ফোনালাপে এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই হামলা অগ্রহণযোগ্য। আমি এর নিন্দা করছি। কাতারের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রতি ফ্রান্সের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা নায়িম কাসেম বলেন, কাতারে হামলা উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর জন্য হুঁশিয়ারি। সেটা হলো ভবিষ্যতে তারাও রেহাই পাবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা কাতারের পাশে আছি, আমরা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধেরও পাশে আছি। এই হামলা বৃহত্তর ‘গ্রেটার ইসরাইল’ প্রকল্পের অংশ।
‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণাটি দখলদার ইসরাইলপন্থি চরম জাতীয়তাবাদীদের কল্পিত পরিকল্পনা, যা পশ্চিম তীর, গাজা, লেবানন, সিরিয়া, মিশর ও জর্ডানের অংশ দখলের দাবি করা হয়। অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। বুধবার একদিনেই গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৭২ জন নিহত হন। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪,৬৫৬-এর বেশি। বর্তমানে গাজা সিটির (যেখানে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ বসবাস করে) দখল নিতে হামলা আরও জোরালো করেছে ইসরাইল। প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বলেন, এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল গাজায় শান্তির যেকোনো সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা। তিনি বলেন, হামাস নেতাদের উপস্থিতি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই জানত। এটা আমরা লুকাইনি। তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহু যা করেছেন, তাতে ওই ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির আশা শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু বিশ্বনেতাদের সমালোচনায়ও নেতানিয়াহু নির্বিকার। বুধবার তিনি কাতারকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমি কাতার ও সব দেশকে বলছি যারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়- তাদের বের করে দাও বা বিচারের মুখোমুখি করো। নইলে আমরা করব।
গত দুই বছরে ইসরাইল হামাসের বহু শীর্ষ নেতা হত্যা করেছে। এর মধ্যে আছেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার, সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ এবং রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ে। কাতার নেতানিয়াহুর ‘বেপরোয়া মন্তব্যের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। কাতার বলেছে, নেতানিয়াহু ভালোভাবেই জানেন, হামাস অফিস দোহায় রাখা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের অনুরোধে মধ্যস্থতার অংশ হিসেবে। এখন তিনি তা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন কাপুরুষোচিত হামলা ও ভবিষ্যৎ হুমকির ন্যায্যতা দিতে।

No comments