কাতারে ইসরায়েলি হামলার প্রধান নিশানা খলিল আল–হায়া কে

দোহায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বিমান হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। গত মঙ্গলবারের এ হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল।

হামাস জানিয়েছে, হামলায় তাদের পাঁচ সদস্য ও একজন কাতারি কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে সংগঠনের আলোচক দল বা শীর্ষ নেতৃত্বের কোনো ক্ষতি হয়নি।

হামাসের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, হামলার সময় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের তরফে প্রস্তাব করা সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এতে অন্যদের মধ্যে হামাসের নির্বাসিত গাজাপ্রধান ও শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হায়া উপস্থিত ছিলেন।

ইসরায়েলি হামলায় যেসব নেতাকে নিশানা করা হয়েছিল কিন্তু বেঁচে গেছেন বা নিহত হয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে যা জানা গেছে—

কাতারে ইসরায়েলি হামলার অন্যতম নিশানায় থাকা খলিল আল-হায়া
কাতারে ইসরায়েলি হামলার অন্যতম নিশানায় থাকা খলিল আল-হায়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স

খলিল আল-হায়া

কাতারে ইসরায়েলি হামলার অন্যতম নিশানা ছিলেন খলিল আল-হায়া। তিনি বর্তমানে নির্বাসনে থেকে হামাসের গাজা শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং প্রধান আলোচকের ভূমিকা পালন করছেন।

গত বছর তেহরানে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া, গাজায় নিহত ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফ হত্যাকাণ্ডের পর খলিল আল-হায়ার গুরুত্ব বেড়ে যায়। ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর গাজার নেতৃত্বে আসেন সিনওয়ার, কিন্তু তাঁকেও ২০২৪ সালে হত্যা করা হয়। এর পর থেকে আল-হায়া হামাসের পাঁচ সদস্যের নেতৃত্ব পরিষদের একজন ছিলেন।

নেতৃত্ব পরিষদ হলো যুদ্ধের সময় হামাসকে পরিচালনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে গঠিত অস্থায়ী পাঁচ সদস্যের কার্যনিবাহী কমিটি।

১৯৬০ সালে গাজায় জন্ম নেওয়া আল-হায়া ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যুক্ত আছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। কাতারে অবস্থান করায় তিনি ইসরায়েল, মিসর, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মধ্যস্থতার প্রধান ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

গাজার বাইরে অবস্থান করায় আল–হায়া সহজে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে পারতেন, যা গাজার ওপর ইসরায়েলি অবরোধের কারণে উপত্যকাটিতে থেকে সম্ভব ছিল না। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হামাসের আলোচক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যাঁরা, তিনি তাঁদের অন্যতম।

ইসরায়েলি হামলায় আল-হায়ার পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় তাঁর বড় ছেলে ওসামার বাড়ি ধ্বংস হয়। ওই হামলায় ওসামা, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের তিন সন্তান নিহত হন। আর মঙ্গলবারের হামলায় নিহত হন তাঁর ছেলে হুমাম।

আল-হায়া আল–জাজিরাকে বলেন, ‘যেকোনো প্রাণহানিই মর্মান্তিক। (ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী) আন্দোলনের নেতৃত্বের রক্তও ঠিক ততটা মূল্যবান, যতটা কোনো ফিলিস্তিনি শিশুর রক্ত মূল্যবান।’

আর কারা নিশানায় ছিলেন

আল-হায়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি হামলার নিশানায় ছিলেন জাহের জাবারিন। তিনি হামাসের আর্থিক কার্যক্রমের প্রধান ও নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য।

জাহের জাবারিন ১৯৯৩ সালে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুই দশক কারাভোগ করেন। ২০১১ সালে বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান। মুক্তির পর দ্রুত শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসেন।

জাবারিন সংগঠনের আর্থিক দপ্তরের প্রধান হন এবং বিনিয়োগ ও অর্থায়ন নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি পশ্চিম তীরে হামাসের প্রধান ও নেতৃত্ব পরিষদের পাঁচ সদস্যের একজন।

কাতার হামলায় নিহত যাঁরা

কাতারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আল-হায়ার দপ্তরের পরিচালক জিহাদ লাবাদ, আল-হায়ার ছেলে হুমাম আল-হায়া, দেহরক্ষী আবদুল্লাহ আবদুল ওয়াহিদ, মোয়ামেন হাসসুনা ও আহমেদ আল-মামলুক।

কাতারের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ষষ্ঠ ব্যক্তি হলেন দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বদর সাদ মোহাম্মদ আল-হুমাইদি আল-দোসারি।

হামাসের বর্তমান নেতা কারা

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে হামাসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। এরপর সংগঠনটি পাঁচ সদস্যের নেতৃত্ব পরিষদ গঠন করে। তাঁদের মধ্যে আছেন আল-হায়া ও জাবারিন। এ ছাড়া গাজায়ও একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতা আছেন।

 হামাসের নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য খালেদ মেশাল
হামাসের নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য খালেদ মেশাল। ফাইল ছবি: রয়টার্স

অন্য নেতারা হলেন—

ইজ্জ আল-দীন আল-হাদ্দাদ : ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর ইজ্জ আল–দীন আল–হাদ্দাদ গাজা উপত্যকায় হামাসের সর্বোচ্চ সামরিক নেতা হয়ে ওঠেন। ইসরায়েল তাঁকে ৭ অক্টোবরের হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মনে করে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রেখেছে। তিনি হামাসের নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য নন।

খালেদ মেশাল: ৬৮ বছর বয়সী খালেদ মেশাল নব্বইয়ের দশক থেকে হামাসের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা। ১৯৯৭ সালে জর্ডানে ইসরায়েলি এজেন্টরা তাঁর কানে ধীরগতির প্রাণঘাতী রাসায়নিক প্রয়োগের চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হয়। পরে ওই এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকেই পরিচিতি পান খালেদ মেশাল। বর্তমানে তিনি কাতারে আছেন ও নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মোহাম্মদ দারবিশ: হামাসের নেতৃত্ব পরিষদের প্রধান মোহাম্মদ দারবিশও কাতারে অবস্থান করছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার জন্য একটি জাতীয় ঐক্যের সরকারের ধারণা প্রকাশ্যে সমর্থন করেন।

নিজার আওয়াদাল্লাহ:
দীর্ঘদিনের নেতা নিজার আওয়াদাল্লাহকে হামাসের অন্যতম মূল সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি সংগঠনের সশস্ত্র শাখাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে তিনি আর প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেননি বা গণমাধ্যমে উপস্থিত হননি।

No comments

Powered by Blogger.