‘ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ১০-১৫ মিনিট অন্তর গাজা সিটিতে বোমা ফেলছে’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্যালেস্টিনিয়ান সিভিল ডিফেন্স বলেছে, অবিরাম বোমা হামলা ও অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে গাজা সিটির ছয় হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, গাজা সিটির মানুষ এখন চলমান অবরোধ ও হামলার মধ্যে খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গাজা সিটি দখলের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী ক্রমাগত শহরটিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা উড়োজাহাজ থেকে লিফলেট ফেলে ক্ষুধার্ত ও আতঙ্কিত ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করছে এবং জীবন রক্ষার জন্য শহর ছেড়ে পালানোর পরামর্শ দিচ্ছে।
গাজা সিটি থেকে আল–জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ‘১০ থেকে ১৫ মিনিট অন্তর’ আবাসিক ভবনসহ সরকারি স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালাচ্ছে। অনেক সময় সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার মতো যথেষ্ট সময় পান না।
হানি মাহমুদ আরও বলেন, হামলার গতি ও ধরন দেখে একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে, তা হলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ওই সব এলাকায় চরম চাপ দিচ্ছে, যেখানে বহু বাস্তুচ্যুত পরিবারের বসবাস।
এখন এই উদ্বাস্তু মানুষেরা শহরের পশ্চিম অংশে ভিড় করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমা হামলা চলার মধ্যেও গাজা সিটির অনেক বাসিন্দা এখনো সেখানে থাকছেন। কেউ কেউ আবার দক্ষিণের আল-মাওয়াসি শিবিরে যাওয়ার চেষ্টা করার পর আবার শহরে ফিরে আসছেন। আল-মাওয়াসি শিবিরকে ইসরায়েল প্রায়ই হামলার নিশানা করছে।
গাজা সিটিতে এখনো প্রায় ৯ লাখ মানুষের বসবাস। আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে সরছেন। খুব অল্পসংখ্যক মানুষই দক্ষিণে পৌঁছাতে পারছেন। যাঁরা দক্ষিণে পালাতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁদেরও অনেকে থাকার জন্য জায়গা পাচ্ছেন না। কারণ, আল-মাওয়াসি এলাকা মানুষে ভরে গেছে। দেইর আল বালাহ এলাকাতেও মানুষের অতিরিক্ত ভিড় জমেছে। তাই অনেক মানুষ সেখানে আশ্রয় বা মৌলিক পরিষেবা না পেয়ে আবার গাজা সিটিতে ফিরে আসছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহরটি ছেড়ে গেছেন।
গাজা সিটির দক্ষিণাঞ্চল থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি বলেন, পানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়ার আশায় উত্তরের এলাকাগুলো থেকে অনেক পরিবার আল-মাওয়াসি শিবিরে আসছে। ইসরায়েলি বাহিনীই এগুলো নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। কারণ, ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে আকৃষ্ট করাটা ইসরায়েলের কৌশলের অংশ।
আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েল–সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফের তিনটি বিতরণকেন্দ্র রয়েছে। এসব বিতরণকেন্দ্রের কাছে অনেক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার জিএইচএফের সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে এখন পর্যন্ত ৮৫০ জনের বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
গাজা সিটিতে ইসরায়েল হামলা শুরু করার আগে থেকেই আল-মাওয়াসি শিবিরে মানুষের ভিড় ছিল। পূর্ব রাফা ও খান ইউনিস অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন পরিস্থিতি আরও চরমে পৌঁছেছে। নতুন আসা ব্যক্তিরা তাঁদের তাঁবু স্থাপনের জায়গা পাচ্ছেন না।
![]() |
| বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা গাজা সিটি থেকে দক্ষিণের দিকে সরে যাচ্ছেন। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ছবি: এএফপি |

No comments