যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই হয়তো একজন একনায়ক চাইতে পারেন: ট্রাম্প কেন এমন কথা বলছেন
তবে গত সোমবার তিনি এটাও বলেছেন, অনেকেই আসলে একনায়ক চান।
সমালোচকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁরা বলেন... “তিনি একজন একনায়ক। তিনি একজন একনায়ক।” অনেক মানুষ বলছেন, “আমাদের বোধ হয় একজন একনায়ক দরকার।” আমি একনায়ক পছন্দ করি না। আমি একনায়ক নই।’
কেন ট্রাম্প এই মন্তব্য করলেন? তিনি হয়তো প্ররোচনা দিচ্ছেন। আবার এমনও হতে পারে, যিনি নিজে সর্বোচ্চ ক্ষমতা চান এবং তা অর্জনে সক্রিয়, তিনিই হয়তো ইঙ্গিত দিচ্ছেন, একনায়কত্ব ভালো, এমনকি মানুষের কাছেও এটি জনপ্রিয় হতে পারে।
কে বলতে পারে
তবে এটা বলা যায়, ট্রাম্প কমবেশি ঠিকই বলেছেন। ক্রমেই অনেক মানুষ একনায়কতন্ত্রের ধারণা আমলে নিচ্ছেন। তাঁরা ট্রাম্পের সমর্থক।
অবশ্য এই সমর্থকেরা সরাসরি ‘হ্যাঁ, আমি একনায়ক চাই’—এমন কথা বলেন না। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানরা লক্ষণীয় মাত্রায় সেদিকেই ঝুঁকছেন।’
এই সুযোগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার নতুন করে তাঁর ক্ষমতার পরিধি বৃদ্ধির কথা বলছেন। অথচ তাঁর সমর্থকদের ভেতর যাঁরা একসময় সীমিত সরকার ও ফেডারেল ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন, তাঁরাও এ নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি তুলছেন না।
গত বছর এ নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বিস্ময়কর জরিপটি প্রকাশিত হয়। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামহার্স্ট ক্যাম্পাসের এক সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে ট্রাম্পের ‘মাত্র এক দিনের জন্য’ ‘একনায়ক’ হতে চাওয়ার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। ট্রাম্প বিষয়টিকে কৌতুক দাবি করলেও ৭৪ শতাংশ রিপাবলিকান এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন।
তবে সেটি ছিল মাত্র এক দিনের ব্যাপার। একে খুবই সীমিত ধরনের একনায়কতন্ত্র বলা যায়। হয়তো কিছু মানুষ মনে করেছিলেন, জরিপে সমর্থন দিয়ে তাঁরা সেই ‘রসিকতায়’ অংশ নিচ্ছেন।
এ ধরনের উদাহরণ আরও অনেক আছে। আরও সূক্ষ্মভাবে প্রশ্ন তুললে বোঝা যায়, ট্রাম্প আমলের রিপাবলিকান দল ক্রমেই স্বৈরশাসনের প্রতি কৌতূহলী হয়ে উঠছে।
জরিপে সাধারণত দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি রিপাবলিকান চান ক্ষমতার ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কম নিয়ন্ত্রণ থাকুক। অন্যদিকে এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে কোনো না কোনোভাবে সমর্থন করেছেন।
প্রথম অংশ থেকেই শুরু করা যাক
চলতি বছরের শুরুর দিকে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৯ শতাংশ রিপাবলিকান ও রিপাবলিকানপন্থী স্বতন্ত্র ভোটার একমত হয়েছেন, দেশের অনেক সমস্যার সমাধান আরও ভালোভাবে করা যেত, ‘যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কংগ্রেস ও আদালত নিয়ে এতটা ভাবতে না হতো।’
গত বছর একই ধরনের দুটি জরিপের ফলাফলের তুলনায় এবারের সংখ্যা বেশি। তবে সব জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা এই মনোভাবকে সমর্থন করছেন। পিউয়ের জরিপে দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের ‘দৃঢ়ভাবে রিপাবলিকান’ মনে করেন, তাঁদের মধ্যে এ সমর্থনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ শতাংশে।
অবশ্য ট্রাম্পের বাধাবিপত্তি কমানোর পক্ষে মত দেওয়া আর তিনি একনায়ক হোন সেটা চাওয়া—এক কথা নয়।
কিন্তু একটু গভীরভাবে দেখলে বোঝা যাবে, রিপাবলিকানদের একটি বড় অংশ এ ধরনের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার পক্ষে; প্রতি ১০ জনে ৩ থেকে ৪ জন।
জরিপের কিছু উল্লেখযোগ্য ফলাফল
চলতি বছরের শুরুতে সিবিএস নিউজ ইউগভের এক জরিপে দেখা যায়, ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করেন, আদালতকে ট্রাম্পের নীতিমালা পর্যালোচনার অধিকার দেওয়া উচিত নয়।
একই সময়ে অ্যাক্সিওস/পিআরআরআইয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশ রিপাবলিকানের মতে, কংগ্রেস বা সুপ্রিম কোর্ট দেশকে ‘পিছিয়ে দেয়’ বলে মনে হলে প্রেসিডেন্টের এসব প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা থাকা উচিত।
গত ডিসেম্বরে মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৬ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে গিয়ে যদি ‘কিছু আইন ও সংবিধানের ধারা স্থগিত করেন’ তাতেও তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। অন্যদিকে মাত্র ২৩ শতাংশ বলেছেন, এতে তাঁরা ‘ভীষণভাবে বিরক্ত’ হবেন। বাকিরা মাঝামাঝি অবস্থানে ছিলেন।
২০২৩ সালের শেষের দিকে ফক্স নিউজের এক জরিপে ২৮ শতাংশ রিপাবলিকান বলেন, দেশকে সঠিক পথে ফেরাতে এমন একজন প্রেসিডেন্ট দরকার যিনি প্রয়োজনে ‘কিছু নিয়ম ও আইন ভেঙে ফেলতে প্রস্তুত’।
পিআরআরআইয়ের আরেকটি জরিপ অনুসারে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ২৪ শতাংশ রিপাবলিকান মত প্রকাশ করেছিলেন, ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরে যান, তাহলে তাঁর উচিত ক্ষমতায় ফিরে আসতে ‘প্রয়োজনীয় যেকোনো উপায়’ অবলম্বন করা।
সারকথা হলো, রিপাবলিকানদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা তারও বেশি মানুষ ট্রাম্পের ক্ষমতা দখল, প্রয়োজনে আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন এবং কংগ্রেস ও আদালতের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বা বাধা ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাওয়াকে সমর্থন করেন।
স্পষ্ট করে বললে, এটা কেবল ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে বোঝাপড়া না থাকার বিষয় নয়। ট্রাম্পের নাম ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সাধারণভাবে প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে এ ধরনের প্রশ্ন করে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাটরা এ–জাতীয় ধারণা সমর্থনের ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের তুলনায় অনেক কম আগ্রহী।
ট্রাম্পের নতুন মন্তব্য তাহলে আমাদের কী ইঙ্গিত দিচ্ছে
রিপাবলিকানরা কেন ট্রাম্পের ক্ষমতা দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন না, এসব তথ্য থেকে সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। সেই দিক বিচারে প্রেসিডেন্ট আসলে একটি বাস্তব সমস্যার দিকেই ইশারা করছেন।
ট্রাম্পের ক্ষমতা দখলের চেষ্টাকে বৈধতা দিতেই একনায়কতন্ত্রের প্রতি এই সমর্থনের কথা বলছেন—এই ধারণাটিও একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার নয়। ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর মনের কথা প্রচার করতে ‘অনেকেই বলেছে’ ধরনের কৌশল ব্যবহার করে থাকেন।
যদি অনেক মানুষ আংশিক বা পুরোপুরিভাবে একজন একনায়ককে চান, তাহলে সম্ভবত ট্রাম্পের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার দাবিও ততটা অযৌক্তিক নয়।
ট্রাম্প যে প্রেক্ষাপটে এই ধরনের দাবি উপস্থাপন করছেন, সেটিও বিবেচনাযোগ্য। দেশের উগ্র ডানপন্থীদের মধ্যে একটি ধারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে যে দেশ ধীরে ধীরে আরও কর্তৃত্ববাদী সরকারের দিকে যাচ্ছে।
মানুষ এই ধারণা যত বেশি সমর্থন করবে, অন্য দলের আগে নিজেদের পক্ষ থেকে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালানোর কথা ততটাই যৌক্তিক মনে হবে।
এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প যে বীজ বপন করেছেন, সেটিকে তিনি সজীব করে তোলেন কি না। ওপরের আলোচনায় স্পষ্ট, এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া কতটা জরুরি।
| যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স |
No comments