হারেৎস পত্রিকার বিশ্লেষণ: গাজা আলোচনা বানচাল করে ট্রাম্প প্রশাসনকে অপমান করলেন নেতানিয়াহু by আমির টিবন
এই বিশ্বাস ছিল যে ট্রাম্প সত্যিই একটি সমঝোতা চাইছেন। সেটাই ছিল নেতানিয়াহুর সফর ঘিরে আশাবাদের প্রধান উৎস। বিশেষ করে, এমন এক সময় যখন ট্রাম্প ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলার নির্দেশ দেয়ার মাত্র এক মাস পরে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তখন নেতানিয়াহু কীভাবে ‘না’ বলতে পারেন? কিন্তু সেই আশাবাদ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে প্রায় এক সপ্তাহ কাটিয়েছেন। এর মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে দু’টি দীর্ঘ বৈঠকও করেছেন। কিন্তু তিনি ওই শহর ছেড়ে আসার সময় যুদ্ধ শেষ করা কিংবা জিম্মিদের মুক্তির আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
নেতানিয়াহু এখনো এমন শর্তে অনড়, যা তিনি জানেন হামাস কখনোই মানবে না। এর ফলে যুদ্ধ দীর্ঘ হচ্ছে। জিম্মিরা আরও ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর ট্রাম্প প্রশাসনকে অপমানিত দেখাচ্ছে-যারা যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ। এই বাস্তবতাগুলো নতুন নয়। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নেতানিয়াহু তার ডানপন্থি জোট টিকিয়ে রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে জিম্মিদের ছাড়িয়ে আনার সুযোগগুলো বিসর্জন দিয়েছেন। তিনি এমন সব প্রস্তাব উপেক্ষা করেছেন, যেগুলো যুদ্ধের সমাপ্তির বিনিময়ে সকল জিম্মির মুক্তি দিতে পারত। পরিবর্তে তিনি আংশিক চুক্তি ও সাময়িক যুদ্ধবিরতির পক্ষে থেকেছেন। এর চেয়েও খারাপ হলো তিনি ওই আংশিক চুক্তিগুলোকেও নিজ হাতে ধ্বংস করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্র তার অনুরোধ মেনে তৈরি করেছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন যখন নেতানিয়াহুর শর্ত মেনে আংশিক চুক্তিতে সম্মতি দিল- যেখানে বহু জিম্মি আরও কয়েক মাস হামাসের কাছে থেকে যাবে- ঠিক সেই সময় নেতানিয়াহু ইসরাইলি ও আমেরিকান মিডিয়ায় ব্রিফ করতে শুরু করলেন যে, যুদ্ধবিরতির পর তিনি আবার যুদ্ধ শুরু করবেন। তিনি জানতেন এমন ঘোষণায় হামাসের অবস্থান আরও কঠোর হয়ে উঠবে এবং চুক্তির পথ আরও দীর্ঘ হবে। কারণ, হামাসের দৃষ্টিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্য হচ্ছে ধাপে ধাপে যুদ্ধের সম্পূর্ণ সমাপ্তির দিকে এগোনো।
প্রশ্ন হলো- ট্রাম্প কেন, বাইডেনের মতোই নেতানিয়াহুর এই নাটক চালিয়ে যেতে দিচ্ছেন?
বাইডেনের প্রশাসনও বহু মাস ধরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে অকার্যকর আলোচনা চালিয়েছিল। তাদের দল নেতানিয়াহুর শর্ত মেনে নিতো। পরে অবাক হতো যখন হামাস তা প্রত্যাখ্যান করত। আর সেই ফাঁকে নেতানিয়াহু হামাসকে বোঝাতেন-তাদের চুক্তি করে কোনো লাভ নেই। কারণ সর্বশেষ জিম্মিকে ফেরত পেলেও ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করবে। এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও একই খেলা খেলছেন নেতানিয়াহু। তারা তার শর্তে রাজি হয়ে গেছে, অথচ ট্রাম্প নিজেই বারবার বলেছেন- তিনি চান সব জিম্মি ঘরে ফিরুক এবং গাজার ‘নৃশংস যুদ্ধ’ শেষ হোক। এমনকি ‘উইটকফ প্রস্তাব’ নামে যে আংশিক ও সাময়িক সমঝোতা পরিকল্পনা বিশেষভাবে নেতানিয়াহুর জন্য তৈরি করা হয়েছিল, তাও তিনি সরাসরি বানচাল করছেন।
যতদিন না ট্রাম্প ও তার মধ্যস্থতাকারী দূত উইটকফ সিদ্ধান্ত নেন যে যথেষ্ট হয়েছে এবং এই রাজনৈতিক নাটক ও অপমানের ইতি টানেন-ততদিন জিম্মিরা টানেলের নিচে বন্দি অবস্থায় কষ্ট পাবেন। ইসরাইলি সেনারা এই অর্থহীন চিরস্থায়ী যুদ্ধে প্রাণ হারাবে। গাজা এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকবে, যেখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। (অনলাইন হারেৎস পত্রিকায় প্রকাশিত বিশ্লেষণের অনুবাদ)

No comments