বিমান হামলার মধ্যে ত্রাণবাহী নতুন নৌযান রওনা দিল গাজার উদ্দেশে
অন্যদিকে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন। এতে বলা হয়, নতুন এই নৌযানটির নাম হান্দালা। এটি পরিচালনা করছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন। রোববার দুপুর ১২টার কিছু পর ইতালির সিরাকিউস বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। নৌযানটিতে রয়েছেন প্রায় ১৫ জন কর্মী। এর যাত্রার সময় ওই বন্দরে শতাধিক মানুষ জড়ো হন। কেউ কেউ ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ান। অনেকে ‘কেফিয়া’ স্কার্ফ পরে উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিয়ে নৌযানটিকে বিদায় জানান। নরওয়ের পুরনো একটি ট্রলারকে ব্যবহার করা এই নৌযানটিতে রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাবার, শিশুদের জিনিসপত্র ও ওষুধ। এটি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার (১১২০ মাইল) পথ অতিক্রম করে এক সপ্তাহের মধ্যে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে। নৌযানটি ইতালির দক্ষিণ-পূর্বের গ্যালিপলি শহরে বিরতি দেবে। সেখানে ফ্রান্সের বামপন্থী রাজনৈতিক দল ‘ফ্রান্স আনবোউড’-এর দুই সদস্য যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
এই উদ্যোগটি আসছে ছয় সপ্তাহ পর, যখন ম্যাডলিন নামের আরেকটি জাহাজ ইতালি থেকে গাজা অভিমুখে রওনা দিয়েছিল এবং তাতে পরিবেশবাদী গ্রেটা থানবার্গসহ কর্মীরা ছিলেন। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার দূরে সেই জাহাজটিকে আটক করে। ফ্রান্স আনবোউডের একজন নেতা গ্যাব্রিয়েল ক্যাথালা বলেন, ‘তাদের নতুন হান্দালা বাহনটি গাজার শিশুদের জন্য মানবিক অবরোধ ভাঙার একটি মিশন। এই গ্রীষ্মে চলমান গণহত্যার নীরবতা ভাঙতেই এই যাত্রা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি গাজায় পৌঁছাতে পারবো। যদি না পারি, তবুও এটি ইসরাইলের আরেকটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দলিল হয়ে থাকবে।’
নারী ও শিশুসহ ৪০ জনের বেশি নিহত গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় রোববার কমপক্ষে ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। হামলাগুলো হয় একটি বাজার ও একটি পানির বিতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে। ইসরাইল ও হামাস এক সপ্তাহ ধরে কাতারের রাজধানী দোহায় একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, গাজা শহরের একটি বাজারে বিমান হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি পানি বিতরণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় ৮ শিশু সহ মোট ১০ জন নিহত হন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা খালেদ রাইয়ান সাংবাদিকদের জানান, আমার ঘুম ভেঙে যায় দুটি প্রবল বিস্ফোরণের শব্দে। আমাদের প্রতিবেশী ও তার বাচ্চারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ১৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা একটি আকাশচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে গাজার উত্তরের বেইত হানুন এলাকায় হামাসের অবস্থানে আঘাত হানার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিস্ফোরণ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠতে দেখা যায়। গাজার সাংবাদিকদের চলাচলে বাধা এবং কিছু এলাকায় পৌঁছানোর অসুবিধার কারণে বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা ও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা কঠিন।
৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনাও শনিবার কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। হামাস চায় গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। কিন্তু ইসরাইল গাজার ৪০ শতাংশেরও বেশি এলাকায় সেনা মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা করছে। এক ফিলিস্তিনি সূত্র বলেছেন, ইসরাইল কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণে জড়ো করে সেখান থেকে জোরপূর্বক মিশর বা অন্য দেশে পাঠাতে চায়। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৫৭৮৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এই সংখ্যাগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচনা করে।

No comments