রাশিয়ার হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম যিনি গণতান্ত্রিকভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন by শেখ নিয়ামত উল্লাহ
বোরিস ইয়েলৎসিনের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন বহু উত্থান–পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। প্রায় এক দশক ক্ষমতায় থাকাকালে হয়েছেন নিন্দিত–নন্দিত। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রতিরোধে ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁর দেওয়া ভাষণ আজও স্মরণীয়–প্রশংসিত। আবার তাঁর নির্দেশেই রুশ পার্লামেন্টে ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়া হয়েছিল।
ইয়েলৎসিন ছিলেন একজন প্রকৌশলী। রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি ৩০ বছর বয়সে—১৯৬১ সালে। ওই বছর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৬ সালে জন্মস্থান সভের্দলোভস্ক (বর্তমান ইয়েকাতেরিনবার্গ) অঞ্চলে দলের সম্পাদক হন ইয়েলৎসিন। তখন স্তাভরোপোল শহরে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ছিলেন গর্বাচেভ। রাজনৈতিক সূত্রে সে সময় দুজনের মধ্যে পরিচয় হয়।
গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হন ১৯৮৫ সালে। ওই বছর তিনি ইয়েলৎসিনকে মস্কোয় দলীয় কাঠামোয় দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব দেন। পরের বছরই তাঁকে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেন গর্বাচেভ। পরে গর্বাচেভের সংস্কারের গতি নিয়ে সমালোচনা করায় ১৯৮৭ সালে তাঁকে দলের মস্কোর নেতৃত্ব এবং ১৯৮৮ সালের পলিটব্যুরো থেকে পদত্যাগ করতে হয়।
১৯৮৯ সালে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন ইয়েলৎসিন। এরই মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থা চালু করেছিলেন গর্বাচেভ। নতুন গঠন করা সোভিয়েত পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পান ইয়েলৎসিন। ১৯৯০ সালে রাশিয়ার পার্লামেন্টেও বড় জয় পান তিনি। আর ১৯৯১ সালের জুনে ইয়েলৎসিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। ওই বছরের ১০ জুলাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি।
ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে ভাষণ
মিখাইল গর্বাচেভ ১৯৮৮ সালে সোভিয়েত কাঠামোতে সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। জোর দিয়েছিলেন মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং উন্মুক্ত কূটনীতির ওপর। বছরের পর বছর ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধের পর এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। এর ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে।
গর্বাচেভের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন তাঁর সরকারের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্ব, রক্ষণশীল রাজনীতিক, সামরিক কর্মকর্তা—এমনকি সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিও। তাঁরা মনে করতেন, গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নকে পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন ইয়েলৎসিনও। তিনি অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্রুত কাজ করতে পারছেন না গর্বাচেভ।
এমন পরিস্থিতিতে ১৯৯১ সালের আগস্টে এক অভ্যুত্থানের মুখে পড়েন গর্বাচেভ। তাঁকে ক্রিমিয়ায় নিজ বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়া হয়। তবে তাতে রাজি হননি গর্বাচেভ। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট গেনাদি ইয়ানায়েভের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের নেতারা জরুরি অবস্থা জারি করেন। চেষ্টা করেন সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার।
ঠিক এ সময়ে এগিয়ে আসেন ইয়েলৎসিন। তত দিনে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার জনগণকে এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এর জেরে ইয়েলৎসিনকে গ্রেপ্তার করতে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে রওনা দেয় সেনাবাহিনী। তবে পথে তাদের আটকে দেন সশস্ত্র–নিরস্ত্র সাধারণ লোকজন। তখনই পার্লামেন্ট ভবন থেকে জনগণের মধ্যে হাজির হন ইয়েলৎসিন।
এরপর তৈরি হয় নাটকীয় এক দৃশ্যের। সেনাবাহিনীর একটি ট্যাংকের ওপর উঠে দাঁড়ান ইয়েলৎসিন। মাইক হাতে নিয়ে সেনাসদস্যদের বলেন, তাঁরা যেন সাধারণ মানুষের বিপক্ষে না যান। অভ্যুত্থানকে আখ্যা দেন ‘সন্ত্রাসের নতুন রাজত্ব’ হিসেবে। ইয়েলৎসিনের আহ্বানে পিছু হটেন সেনারা। তাঁদের অনেকেই অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান নেন। এর মধ্য দিয়ে মাত্র তিন দিনের মাথায় ব্যর্থ হয় অভ্যুত্থান।
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর মুক্তি দেওয়া হয় গর্বাচেভকে। তবে অভ্যুত্থানের ধাক্কাটা সামাল দিতে পারেনি তাঁর সরকার। পরের কয়েক মাসে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি বিলুপ্ত করেন। স্বাধীনতা দেন বাল্টিক দেশগুলোকে। গর্বাচেভের এই দুর্বলতার সুযোগে রাশিয়ায় নিজের মতো অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেন ইয়েলৎসিন। সোভিয়েত আইনের তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় বাজেটে রাশিয়া থেকে কর দেওয়া বন্ধ করে দেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে বেলারুশ ও ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন ইয়েলৎসিন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির। আর কোনো আশার আলো দেখতে না পেয়ে ২৫ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন গর্বাচেভ।
রুশ পার্লামেন্টে ট্যাংকের গোলা
গর্বাচেভের পদত্যাগকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছিলেন ইয়েলৎসিন। সোভিয়েত–পরবর্তী রাশিয়ায় সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হন তিনি। স্বাধীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। রাষ্ট্রীয় অনেক সম্পদ ছেড়ে দেন ব্যক্তিমালিকানায়। গড়ে ওঠে শেয়ারবাজার ও বেসরকারি ব্যাংক।
সোভিয়েত উত্তরসূরিদের বিপরীতে গিয়ে বেশ কিছু নজির গড়েছিলেন ইয়েলৎসিন। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। সমালোচনাকে গ্রহণ করতেন। তাঁর সময়ে রাশিয়ায় পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল। এ ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র কমাতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। পূর্ব ইউরোপ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া দেশগুলো থেকেও কিছু সেনাকে ফেরত এনেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ১৯৯৩ সালে বড় সংকটের মুখে পড়তে হয়েছিল ইয়েলৎসিনকে। মুক্তবাজার অর্থনীতি নিয়ে সংস্কারের কারণে পার্লামেন্টে ক্রমেই তাঁর বিরোধিতা বাড়তে থাকে। সোভিয়েত–পরবর্তী রাশিয়ায় ইয়েলৎসিন যে নতুন সংবিধানের প্রস্তাব করেছিলেন, তাতে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও পার্লামেন্টে বড় বিভক্তি দেখা দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৯৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অসাংবিধানিকভাবে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দেন ইয়েলৎসিন। আহ্বান জানান নতুন নির্বাচন আয়োজনের। এর বিরুদ্ধে অক্টোবরের শুরুর দিকে বিদ্রোহ করেন পার্লামেন্টের কট্টরপন্থী সদস্যরা।
৩ অক্টোবর মস্কোয় বিদ্রোহের সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মেয়রের কার্যালয়ে চালানো হয় হামলা। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম দখলের চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি নাজুক বুঝে পরদিন সামরিক বাহিনীকে হস্তক্ষেপের নির্দেশ দেন ইয়েলৎসিন। পার্লামেন্ট ভবনে ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়া হয়। এতে আগুন ধরে যায় ভবনটিতে। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল। সংঘর্ষে ১২৩ জন নিহত হয়েছিলেন বলে সে সময় জানিয়েছিল রুশ কর্তৃপক্ষ।
এই আন্দোলনকে সোভিয়েত–পরবর্তী রাশিয়ার ইতিহাস নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত বলে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছিলেন মস্কোর ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি হায়ার স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক গ্রিগরি ইয়াভলিনস্কি। তাঁর ভাষ্যমতে, পার্লামেন্টের কট্টরপন্থীদের কারণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে বলপ্রয়োগ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তবে এই সংকট ও পরবর্তী সময়ে নতুন সংবিধান পাস রাশিয়াকে ভুল পথে ঠেলে দিয়েছিল।
চেচনিয়ায় হামলা, ৪০ হাজার প্রাণহানি
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে চলে যান ইয়েলৎসিন। এটি তাঁর নৈতিকতার ওপর প্রভাব ফেলে। প্রায়ই তিনি না জানিয়ে মস্কো থেকে উধাও হয়ে যেতেন। মদ্যপানের কারণে ইয়েলৎসিনের শারীরিক অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। এতে তাঁর প্রশাসনে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দেয়। কারণ, বিভিন্ন গোষ্ঠী তখন প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল।
পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে চেচনিয়ায় হামলা। ১৯৯১ সালে চেচনিয়া রাশিয়া থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছিল। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে নিজের নিরাপত্তারক্ষীদের প্রধান আলেকসান্দার কোরজাকভ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাভেল গ্রাচেভের প্ররোচনায় চেচেন নেতা ঝোকার দুদায়েভের ওপর হামলা শুরু করেন ইয়েলৎসিন। এ নিয়ে নিজ শিবিরেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।
রুশ সামরিক বাহিনী চেচনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হামলা চালায়। এতে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। হাজার হাজার মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হন। তারপরও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করতে পারেনি রুশ বাহিনী। পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে চেচনিয়ার সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেন ইয়েলৎসিন। ১৯৯৭ সালে দুই পক্ষের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি হয়।
শান্তিচুক্তি হওয়ার পরও চেচনিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এরই মধ্যে ১৯৯৯ সালের আগস্টে দাগেস্তানে হামলা চালায় চেচেন বিদ্রোহীরা। এর পরের কয়েক মাসে রাশিয়ায় সিরিজ বোমা হামলা হয়। চেচনিয়ার ওপর এর দায় চাপিয়েছিল মস্কো। এর জের ধরে চেচনিয়ায় আবার রুশ সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন ইয়েলৎসিন। পরে প্রায় এক দশক ধরে এই সংঘাত চলেছিল।
অবশেষে ক্ষমতা পুতিনের হাতে
প্রথম মেয়াদের শেষের দিকে ইয়েলৎসিনের শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে তিনবার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপরও ১৯৯৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হন। জয়ও পান। ১৯৯৮ সালের আগস্টে রুশ মুদ্রা রুবলের ব্যাপক দরপতন হয় এবং ট্রেজারি বিল পরিশোধে ব্যর্থ হয় রাশিয়া। তবে এরপরই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়িয়েছিল রুশ অর্থনীতি।
দ্বিতীয় মেয়াদে ব্যাপক অজনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল ইয়েলৎসিনকে। এরই মধ্যে ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সবাইকে অবাক করে দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ইয়েলৎসিন। নিজের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য রুশ জনগণের কাছে ক্ষমা চান। নিজের উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনকে নির্বাচিত করেন। ক্ষমতায় আসার পর পুতিন ইয়েলৎসিনকে দায়মুক্তি দিয়েছিলেন।
উত্তরসূরি হিসেবে পুতিনকে কেন ইয়েলৎসিন বেছে নিয়েছিলেন, তা নিয়ে বিবিসিতে লিখেছিলেন সংবাদমাধ্যমটির হয়ে মস্কোয় কাজ করা সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গ। তাঁর মতে, পুতিনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল ভ্যালেনটিন ইয়ুমাশেভের। তিনিও একসময় সাংবাদিকতা করেছিলেন। পরে ক্রেমলিনের কর্মকর্তা হন। ইয়েলৎসিনের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইয়ুমাশেভ। এমনকি ইয়েলৎসিনের মেয়ে তাতিয়ানার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর।
ইয়ুমাশেভ তখন ক্রেমলিনের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সুবাদে ১৯৯৭ সালে তিনি সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা পুতিনকে ক্রেমলিনে চাকরি দেন। এ সময় পুতিনের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ভালো ধারণা হয় তাঁর। পদত্যাগের আগে ইয়ুমাশেভের সঙ্গে নিজের উত্তরসূরি সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন ইয়েলৎসিন। তখন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের নাম প্রস্তাব করেন ইয়ুমাশেভ।
পরে ১৯৯৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুতিনকে নিয়োগ দেন ইয়েলৎসিন। পদত্যাগের মাত্র তিন দিন আগে নিজের বাসভবনে পুতিনকে তলব করেন তিনি। জানিয়ে দেন ৩১ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করবেন। ইয়েলৎসিনের পদত্যাগের পর রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন পুতিন। তিন মাস পর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পান ভ্লাদিমির পুতিন।
পদত্যাগের পর পুরোদমে অবসর কাটানো শুরু করেন ইয়েলৎসিন। ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যু হয় তাঁর। ইয়েলৎসিনের জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। নানা পদক্ষেপের জন্য সমালোচিত হলেও প্রশংসা কম কুড়াননি তিনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেব দায়িত্ব নেওয়ার আগে ১৯৯০ সালে সংবাদমাধ্যম টাইমসের এক সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন, ‘একজন মানুষকে উজ্জ্বল শিখার মতো বেঁচে থাকতে হবে। যতটা সম্ভব উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে হবে। আর শেষে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে হবে। মিট মিট জ্বলে বেঁচে থাকার চেয়ে এটি অনেক ভালো।’
তথ্যসূত্র:
- বিবিসির প্রতিবেদন: দ্য ম্যান হু হেল্পড মেক এক্স–কেজিবি অফিসার ভ্লাদিমির পুতিন আ প্রেসিডেন্ট (প্রকাশিত: ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর)
- হিস্টোরি টেলিভিশনের প্রতিবেদন: সোভিয়েত হার্ড–লাইনারস লাঞ্চ কোপ এগেইনস্ট গর্বাচেভ (প্রকাশিত: ১৯৯১ সালের ১৮ আগস্ট)
- অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন: ৩০ ইয়ারস এগো ক্রেমলিন ক্রাশড আ পার্লামেন্টারি আপরাইজিং। (প্রকাশিত: ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর)
- জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি আর্কাইভ: ইয়েলৎসিন শেলড রাশিয়ান পার্লামেন্ট থার্টি ইয়ারস এগো।
- আল–জাজিরার প্রতিবেদন: অবিচুয়ারি: বোরিস ইয়েলৎসিন (প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০০৭)
![]() |
| বোরিস ইয়েলৎসিনের সঙ্গে বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স |

No comments