জুলাই ঘোষণা নিয়ে কী হচ্ছে
জুলাই ঘোষণার জন্য সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। তারা ইতিমধ্যে একটি খসড়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকেও পাঠিয়েছে। যেখানে ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ’৫২-’র ভাষা আন্দোলন, ’৬২-’র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-’র গণ-অভ্যুত্থান, ’৭১-’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৭৫-’র ৭ই নভেম্বর, ’৯০-’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানসহ দেশের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের কথা গুরুত্বসহকারে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলায় হেফাজতের আন্দোলনে গণহত্যার কথাও আছে। তবে সরকার প্রণীত এ খসড়া ঘোষণাপত্রে কিছু শব্দগত মারপ্যাঁচ আছে বলে মনে করে কোনো কোনো দল। ইতিমধ্যে তারা সেটি সরকারকে জানিয়েছেও। এ ছাড়াও বিএনপি এ ঘোষণা সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করার বিরোধী। দলটি চায় সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে কেবল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে যুক্ত করতে। অন্যদিকে সরকার ও অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো মনে করে এটি যদি প্রস্তাবনায় যুক্ত করা না হয় তাহলে এটির গুরুত্ব লোপ পাবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব, মর্যাদা, মহিমা ধারণ করে। আমরা এটাকে স্বীকৃতি দিই, সারা জাতি এটাকে স্বীকৃতি দেয়। এটাকে আমরা যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে চাই। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের চাওয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব নিয়েছে। কয়েকদিন আগে সরকারের এক উপদেষ্টা ঘোষণাপত্রের খসড়া বিএনপি মহাসচিবকে দিয়েছেন। বিএনপি এর আগে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি একটি খসড়া সরকারকে দিয়েছিল। এরপর আর অগ্রগতি ছিল না। এবারের খসড়ায় বিএনপি’র আগে দেয়া মতামতের কিছু প্রতিফলন রয়েছে। বুধবার রাতে সরকারকে এবারের খসড়ায় মতামত জানানো হয়েছে। সালাহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিলকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। তাই অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত জুলাই ঘোষণা চতুর্থ তফসিলে একটি অনুচ্ছেদে রেখে স্বীকৃতি দেয়া যৌক্তিক হবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে আরেকটি অনুচ্ছেদে বর্তমান সরকারের স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। তবে এ ধারণাকে নাকচ করে এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণা রাখতে হবে। এটি রাষ্ট্র পরিচালনার পাথেয়। জুলাই ঘোষণার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি মানবজমিনকে বলেন, সরকার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে ঠিক আছে। কিন্তু সরকারকে এ-ও মনে রাখতে হবে যে, কেবল রাজনৈতিক দল না, জনগণ এ সরকারের অন্যতম স্টেকহোল্ডার। তারা কী চায় সেটিও আমলে নিতে হবে। যদি রাজনৈতিকভাবে সমঝোতা না হয় তাহলে গণভোট দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে যথেষ্ট সময় দিয়েছি এটির জন্য। কারণ জুলাই ঘোষণা একটি স্ট্যাটাসের বিষয়। এর ওপরই নির্ভর করবে আমাদের নতুন বাংলাদেশ কেমন হবে। শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দেয়নি- এটা সরকারকে মনে রাখতে হবে। আমরা ৩১শে জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এর মধ্যে সরকার জুলাই ঘোষণা না দিলে ৩রা আগস্ট সচিবালয় ঘেরাও করবো। শরীফ ওসমান বিন হাদি আরও বলেন, জুলাই ঘোষণা সাংবিধানিক স্বীকৃতি জরুরি এ কারণে যে এটি না হলে আগামীতে জুলাই আন্দোলন রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই এটির আইনি ভিত্তি দরকার। তফসিলে আপত্তি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের তফসিলটি ৭ই মার্চের ভাষণসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে এটিকে অনেক হালকা করে ফেলা হয়েছে। সরকার চাইলেই কিছু একটা জুড়ে দিচ্ছে এর সঙ্গে। যেটি প্রস্তাবনায় এলে এর গ্রহণযোগ্যতা থাকে। চাইলেই কোনো সরকার সেটি বাদ দিতে পারবে না। তাই আমরা এটি প্রস্তাবনা চাই।
সার্বিক বিষয়ে জুলাই ঘোষণার দায়িত্বে থাকা সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, এটার জন্য সবার ঐকমত্য দরকার। দলগুলোকে আমরা একটা খসড়া পাঠিয়েছি। তারা কিছু শব্দগত বিষয় নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে। দ্বিমত থাকলে তো আমরা কিছু করতে পারবো না। আমাদের ধারণা ছিল এ বিষয়ে দ্বিমত পাওয়া যাবে না। কারণ এটা জনআকাঙ্ক্ষার বিষয়। জুলাই অভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার বা তার পরবর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার বিষয় এটি। এটা হলে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে। এটার একটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি দরকার। সবার উচিত এ বিষয়ে নিজেদের সম্মতি দেয়া। আমরা আশাবাদী ৫ই আগস্টের আগে এটি হবে।

No comments