আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ রাজনীতিতে চাঞ্চল্য: কার্যক্রম চালালে যে শাস্তি হতে পারে by রাশিম মোল্লা
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বর্বর গণহত্যার দায়ে ৫ই আগস্টের পরই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আওয়াজ উঠে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। গণহত্যা ও লুটপাটে জড়িত দলটির নেতাকর্মীদের বিচারে ইতিমধ্যে সরকারের তরফে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই উদ্যোগের ধীরগতিতে হতাশ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশ নেয়া পক্ষগুলো। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ দেশ ছাড়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। নতুন করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় সারা দেশে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান থেকে পরে শাহবাগে টানা দুইদিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তাদের জোরালো দাবি ও কর্মসূচির জেরেই শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ছিল নানা আলোচনা। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া বিভিন্ন পক্ষ, জামায়াতসহ বিভিন্ন ইসলামী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সরাসরি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধী ছিল। দলটির পক্ষ থেকে কয়েক দফা প্রধান উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। বিএনপি’র দাবি ছিল গণহত্যা ও লুটপাটে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার নিশ্চিত করা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। সর্বশেষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি এমনটাই দাবি করে আসছিল। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পরপরই আনন্দ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নেতাকর্মীরা রাতে শোকরানা নামাজও আদায় করেন। দলটির আমীর রাতে তাৎক্ষণিক জমায়েতে বক্তব্যও রাখেন। সরকারি সিদ্ধান্তের পর কিছুটা সময় নিলেও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা শেষ রাতে শাহবাগের অবস্থান তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের মতো তাদের সহযোগী অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানাচ্ছে এসব দল।
ওদিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা। দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। দলটির ভবিষ্যৎ কী হবে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন থাকবে কিনা, না থাকলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এই দলটির নেতাকর্মীদের অবস্থান কী হবে- এমন নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে কার্যত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। সামনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচার হবে। ব্যক্তির অপরাধের বিচারের সঙ্গে সংগঠনের বিচারের এখতিয়ারও এই ট্রাইব্যুনালকে দেয়া হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতারা গণহত্যার দায়ে দণ্ডিত হলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগও শাস্তির মুখে পড়বে। দলটির কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হতে পারে। সম্ভাব্য এমন পরিস্থিতি মাথায় রেখে দলটির নেতাকর্মীরাও চিন্তিত। দল নিষিদ্ধ থাকলে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা দলটির নেতাদের অংশ নেয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে বিচার প্রক্রিয়া জোরালো হলে শীর্ষ অনেক নেতা এমনিতে নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ছাড়া নয়া এক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। মাঠের রাজনীতিতে এখন প্রধান দল বিএনপি এবং জামায়াত। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি দলীয় অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চরমোনাই’র পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন ইসলামী দলগুলোর একটি নির্বাচনী মোর্চা গঠনের চেষ্টা করছে। ভোটের মাঠে এই মোর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের জোট সঙ্গীদের নিয়ে লড়বে- এমনটা বলা হচ্ছে। জামায়াত কোনো জোট গড়বে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে- তা এখনো স্পষ্ট নয়। এনসিপি’র অবস্থাও একই। এ ছাড়া অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে জোট গড়ার প্রচেষ্টা রয়েছে। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান কোনো না কোনোভাবে থেকে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় দলটির নেতাকর্মীদের কৌশল ভোটের মাঠের পরিস্থিতিও বদলে দিতে পারে। বিশেষ করে রাজনীতির ময়দানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গন্তব্য কী হবে- এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিমধ্যে দলটির অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন দলে ভিড়তে শুরু করেছেন।
যদিও আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তার ঘোর কাটেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারেনি। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর নতুন গুঞ্জন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ। রাজনীতিতে মাইনাস ফর্মুলার আলোচনাও জারি আছে। এমন অবস্থায় সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চালালে যে শাস্তি হতে পারে
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের ১লা আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অঙ্গসংগঠনকে। এর প্রায় তিন মাস পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ছাত্রলীগকে। গত শনিবার ওই একই আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। আইনজীবীদের দেয়া তথ্যমতে, ইতিপূর্বে হরকাতুল জিহাদ, জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবিরসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ওই একই আইনে প্রথমে ছাত্রলীগ এবং শনিবার নিষিদ্ধ করা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করলে এবং তা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যূন ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তবে এটা করতে আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তার এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে বলা হয়, কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার নিমিত্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। উক্ত আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসঙ্গতকারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। উক্ত বিষয়টি স্পষ্টকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মো. মহসিন রশিদ। তিনি বলেন, আইনে বলা আছে কি কি করলে একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা যায়। আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে যা যা করা লাগে তার সব কিছুই করেছে। আমি মনে করি আরও আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল। এ বিষয়ে সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু মানবজমিনকে বলেন, গত ১লা আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। ওই একই আইনে অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের অক্টোবর মাসে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শনিবার নিষিদ্ধ করলো আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। তিনি বলেন, এখন থেকে আওয়ামী লীগ আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। কর্মসূচি পালন করলে তা আইনত অপরাধ। তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সম্পাদক ও বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ইতিপূর্বে এই আইনে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, শিবিরসহ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরেও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং তফসিলভুক্ত করেছেন। শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। আমি আপনাদের বলতে চাই, ইতিপূর্বে বিএনপি’র পক্ষ থেকে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে একই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কিংবা সংগঠন হিসেবে বিচারের প্রস্তাব করেছিলেন। তখন তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এ ছাড়াও আইন উপদেষ্টাও বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া উপদেষ্টামণ্ডলীর সবাই গিয়েছিলো কিন্তু সেটি মঞ্জুর হয় নাই। রোববার আবার তারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, তা কল্পনাকেও হার মানায়। এই দল নিষিদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো পথ ছিল না। এই দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মধ্যে দিয়ে অন্য দলগুলোর শিক্ষা নিতে হবে। ফ্যাসিজম করে কারও রক্ষা নেই।
কার্যক্রম পরিচালনার শাস্তি: সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সন্ত্রাসী কাজ করলে, সন্ত্রাসী কাজে অংশ নিলে, সন্ত্রাসী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিলে বা সন্ত্রাসী কাজ সংঘটনে সাহায্য বা উৎসাহ দিলে, সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত কাউকে সমর্থন বা সহায়তা দিলে সেই ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত বলে বিবেচিত হবে। সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আবুল হোসেন খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনের ধারা অনুযায়ী সত্তা বলতে কোনো আইনি প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, অংশীদারি কারবার, সমবায় সমিতিসহ এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত যেকোনো সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে। সংগঠন নিষিদ্ধ করা মানে হচ্ছে- এ সংগঠন কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না। নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন যদি কার্যক্রম কোনো ভাবে চালু রাখে, তাহলে এর বিরুদ্ধে সরকার যেকোনো রকম স্টেপ নিতে পারে। এই আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৮ এর অধীন কোনো নিষিদ্ধ সত্তার সদস্য হন বা সদস্য বলিয়া দাবি করেন, তাহলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন এবং উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনের জন্য তিনি অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ড, অথবা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৮ এর অধীন কোনো নিষিদ্ধ সত্তাকে সমর্থন করিবার উদ্দেশ্যে কাউকে অনুরোধ বা আহ্বান করেন, অথবা নিষিদ্ধ সত্তাকে সমর্থন বা উহার কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো সভা আয়োজন, পরিচালনা বা পরিচালনায় সহায়তা করেন, অথবা বক্তৃতা প্রদান করেন, তাহলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন। ৯(২) ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নিষিদ্ধ সত্তার জন্য সমর্থন চেয়ে অথবা উহার কর্মকাণ্ডকে সক্রিয় করার উদ্দেশ্যে কোনো সভায় বক্তৃতা করেন অথবা রেডিও, টেলিভিশন অথবা কোনো মুদ্রণ বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো তথ্য সম্প্রচার করেন, তাহলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন। ৯(৩) ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) অথবা (২) এর অধীন কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তিনি অনধিক সাত বৎসর ও অন্যূন দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও আরোপ করা যাবে। ১০ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তির দুই তৃতীয়াংশ মেয়াদের যেকোনো কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং যদি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব চৌদ্দ বৎসরের কারাদণ্ড হইবে, কিন্তু উহা ৪ (চার) বৎসরের কম হবে না। ১১ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রচেষ্টা করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি বা সত্তা অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্ত ব্যক্তি বা উক্ত সত্তার প্রধান, তিনি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য যেকোনো নামে অভিহিত হোক না কেন, উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তির দুই-তৃতীয়াংশ মেয়াদের যেকোনো কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং যদি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে উক্ত অপরাধের শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর ও অন্যূন ৪ (চার) বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড, এবং উহার অতিরিক্ত সংশ্লিষ্ট সত্তার বিরুদ্ধে ধারা ১৮ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে। ১২ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে- (ক) সাহায্য বা সহায়তা করে; বা (খ) সহায়তাকারী হিসেবে অংশগ্রহণ করে; বা (গ) অন্যদের সংগঠিত বা পরিচালনা করে; বা (ঘ) অবদান রাখে; তাহলে উক্ত ব্যক্তি বা সত্তা অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্ত ব্যক্তি বা উক্ত সত্তার প্রধান, তিনি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য যেকোনো নামে অভিহিত হোক না কেন, উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তির দুই-তৃতীয়াংশ মেয়াদের যেকোনো কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং যদি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে উক্ত অপরাধের শাস্তি হইবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর ও অন্যূন ৪ (চার) বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা যাবে।

No comments