পীযূষ কান্তির বিরুদ্ধে বেপরোয়া দুর্নীতির অভিযোগ by প্রতীক ওমর ও ইফতেখায়রুল ইসলাম

বগুড়ার শিবগঞ্জে দেউলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি সাহার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর সকল শিক্ষক কর্মচারীদের স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগপত্র প্রদানের দীর্ঘদিন হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষকমণ্ডলী। অভিযোগ সূত্রে দেখা যায়, ২০২১ সালে করোনার কারণে এসএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য ৯ হাজার ৫০০ টাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে ফেরত আসে। সে টাকা শিক্ষার্থীদেরকে না দিয়ে প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি আত্মসাৎ করেন। স্কুলের হিসাবে ২০২২ সালে ২২ হাজার ৫০০ ও ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৫০০ টাকা স্কুল ফান্ডের অ্যাকাউন্টে জমা রাখার কথা বলে নিজ পকেটে উঠান তিনি। ২০২৩ সালে স্কুল সভাপতি ফজলুল বারি কাটুর স্বাক্ষর জাল করে স্কুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ হাজার টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে সোনালি ব্যাংক পিএলসি মোকামতলা শাখা, বগুড়া জেনারেল ফান্ড থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে লোপাট করেন। একই সালে শিক্ষক কর্মচারীদের মাঝে ৪৫ হাজার টাকা বণ্টন করার কথা বলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়ে তা নিজেই নিয়ে নেন।

২০২৩ সালে ইউনিক আইডি খোলার নামে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায়কৃত ৩০ হাজার টাকা তুলে কাজ না করে আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। প্রশংসাপত্র প্রদান বাবদ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা করে নিয়ে নিজের পকেটে উঠান। সরকারি বিধি মোতাবেক শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের উচ্চতর বেতন প্রাপ্তির ব্যাপারে নানাভাবে হয়রানিও করেন তিনি। পীযূষ কান্তি সাহার অপসারণ চেয়ে গত ৭ই মে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও শিক্ষক কর্মচারী সকলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধন শেষে প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি সাহার অপসারণ চেয়ে গণস্বাক্ষর সম্বলিত এক অভিযোগপত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক জাহেদ আলম বলেন, প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি সাহা আওয়ামীপন্থি হওয়ায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহার করেন এবং চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখান।

সহকারী শিক্ষক দুলালুর রহমান দুলাল বলেন, প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি সাহা আমাদের সহকারী প্রধান শিক্ষক এ কে এম রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তার মানহানির চেষ্টা করছে। রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি সাহার বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এর আগে আমরা সকল শিক্ষক মিলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। তার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি সাহার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং তার ফোনে খুদেবার্তা পাঠালে কোনো উত্তর জানাননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি তদন্ত করার জন্য। তদন্ত প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.