গাজায় জোর করে মানুষকে অভুক্ত রাখছে ইসরাইল

গাজা সীমান্তে ট্রাকের পর ট্রাক ভর্তি খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। কিন্তু ইসরাইলের অবরোধের কারণে তা গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। এর মধ্য দিয়ে গাজাকে জোরপূর্বক অভুক্ত রাখছে ইসরাইল। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস বলেছে, এই অবরোধের কারণে অনাহারে থাকা কমপক্ষে ৫৭ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। তার ওপর আছে ইসরাইলের অব্যাহত হামলা। শনিবার ভোর থেকে সেখানে কমপক্ষে ৪৫ জনকে হত্যা করেছে তারা। রোববার সকালে গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তাতে নিহত হয়েছেন ৬ জন। গত দু’ দিনে নিহতদের মধ্যে আছে তিনটি শিশু।

গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছতে না দেয়ায় জাতিসংঘ কর্মকর্তা ও অধিকার বিষয়ক কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। নিন্দা জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা কমপক্ষে ৫২,৪৯৫।

ওদিকে গাজা যুদ্ধকে সভ্যতার সুরক্ষা বলে অভিহিত করেছে ইসরাইল। তাদের এমন বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে কাতার। তারা বলেছে, গাজায় নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটানো হচ্ছে। একই সঙ্গে কাতার উভয় দিকের (ইসরাইল ও হামাস) হয়ে খেলছে বলে যে বিবৃতি দিচ্ছে তাও প্রত্যাখ্যান করেছে কাতার। ইসরাইলের এমন মন্তব্যকে জ্বালাময়ী হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এ বিষয়ে এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি। তাতে তিনি বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে যে জ্বালাময়ী বিবৃতি দেয়া হয়েছে তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছে কাতার। তাদের ওই বিবৃতিতে মৌলিক রাজনীতির ভিত্তি এবং নৈতিক দায়িত্বের কিছুই নেই। গাজা যুদ্ধকে সভ্যতা রক্ষা হিসেবে আখ্যায়িত করাকে সমালোচনা করে আল আনসারি বলেন, তারা বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে অপরাধকে বৈধতা দেয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলছে। তিনি পোস্টে প্রশ্ন রাখেন- যে ১৩৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে সেটা কি সামরিক অভিযানে নাকি মধ্যস্থতাকারীর প্রচেষ্টায়? তবুও এ প্রক্রিয়াকে নিয়ে অন্যায়ভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। তিনি গাজার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। একে তিনি অবরোধ করে শ্বাসরোধ করা, পর্যায়ক্রমে অনাহারে রাখা, চিকিৎসা ও আশ্রয় প্রত্যাখ্যান করা এবং মানবিক সহায়তাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে ১২ই মে ইসরাইল সফরের পরিকল্পনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটি হেগসেথ। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা। তার আগেই এই সফর সম্পন্ন করতে চাইছেন তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ১৩ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের পরিকল্পনা আছে ট্রাম্পের। তবে তিনি ইসরাইল সফর করবেন কিনা তা বলেননি লেভিট।

হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে তলব করছে ইসরাইল
গাজায় আক্রমণ বৃদ্ধির জন্য হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে তলব করছে ইসরাইল। বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করেছে এ নিয়ে। তাতে বলা হয়েছে, রিজার্ভ সেনাদের তলব করতে নির্দেশ পাঠানো শুরু করেছে সেনাবাহিনী। বর্তমানে দখলীকৃত পশ্চিমতীরে যেসব ইসরাইলি সেনা আছে, তাদের তুলে নিয়ে সেখানে মোতায়েন করা হবে এসব রিজার্ভ সেনা। শুধু পশ্চিমতীর নয়, পুরো গাজায় তাদেরকে আবার মোতায়েন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এতে বলা হয়, বিষয়টি ইসরাইলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র স্বীকারও করেনি। আবার রিপোর্ট প্রত্যাখ্যানও করেনি। তবে এএফপির সাংবাদিকদের আত্মীয়দের মধ্যে অনেকে এই নির্দেশ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। গাজায় সামরিক অভিযান বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়ে ৪ঠা মে রোববার ইসরাইলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক বসার কথা। সেখানেই রিজার্ভ সেনা মোতায়েন অনুমোদন দেয়ার কথা।

এর আগে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় প্রথম দফা শেষে ১৮ই মার্চ পুরো গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরাইল। নতুন করে হামলা শুরুর পর থেকে এই যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পক্ষে জোরালো কণ্ঠে মত দিয়ে যাচ্ছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে তিনি তার উগ্র ডানপন্থি সমর্থকদের পক্ষ থেকে তীব্র চাপে আছেন। এই পক্ষটি যদি নেতানিয়াহুর ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে তাহলে তার জোট সরকার ভেঙে পড়বে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.