নিখোঁজ জীবনের গল্প: ৬৩ বছর পর সন্ধান মিলল এক নারীর
৬৩ বছর। এই দীর্ঘ সময়ের মাঝে কত প্রজন্ম এলো, গেলো। কত প্রযুক্তি বদলালো। কত যুদ্ধ আর শান্তি, কিন্তু অড্রে ব্যাকবার্গের নামটা ঝুলে ছিল নিখোঁজ মানুষদের তালিকায়। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের পুলিশ জানালো তিনি জীবিত এবং সুস্থ আছেন।
উইসকনসিনের এক উলের কারখানায় কাজ করতেন অড্রে। নিখোঁজ হওয়ার দিন তিনি গিয়েছিলেন নিজের বেতন তুলতে। বাড়ির সবাই ভেবেছিল, সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরবে। কিন্তু আর ফিরলেন না। পেছনে ফেলে গেলেন দুটি ছোট সন্তান ও তার দাম্পত্য জীবন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার, সেই সংসার বোধহয় তার জন্য সুখের হয়নি। তার স্বামী তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগেই স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের করেছিলেন একটি ফৌজদারি মামলা। সেখানে তিনি জানান, স্বামী তাকে মারধরও করতেন।
সেদিন তার শিশুদের দেখভাল করছিলেন এক পরিচারিকা। পুলিশকে তিনি জানান, ব্যাকবার্গকে তিনি হেঁটে যেতে দেখেন উইসকনসিনের রাজধানী ম্যাডিসনের দিকে। সেখান থেকে তিনি উঠেছিলেন একটি বাসে, যার গন্তব্য ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের ইন্ডিয়ানা। পরিচারিকা আতঙ্কিত হয়ে চেষ্টা করেন ব্যাকবার্গকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু অড্রে ছিলেন দৃঢ়, তাই তাকে ফেরানো যায়নি।
এরপর এক এক করে কেটে গেছে ছয়টি দশক। পুলিশের অগণিত চেষ্টা, ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি, সাক্ষাৎকার- সবই যেন ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। ব্যাকবার্গের কোনো হদিশ মিলছিল না। একটি জীবনের যবনিকা নেমে গিয়েছিল নীরবতায়।
এ বছরের শুরুতে নতুন করে প্রাণ পেল সেই পুরনো কেস। প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া ফাইলগুলো আবার খুলে দেখেন উইসকনসিনের এক গোয়েন্দা, আইজ্যাক হ্যানসন। তার অনুসন্ধান এক সময় খুঁজে পায় অড্রের বোনের একটি অনলাইন অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকেই মিলল বহুদিনের অজানা সূত্র।
অবশেষে, জীবনের এই বিশাল পাণ্ডুলিপির পাতায় আবার লেখা হলো নতুন একটি অধ্যায়। অড্রে ব্যাকবার্গের সন্ধান মিলল। ৮২ বছর বয়সে তিনি আছেন উইসকনসিনের বাইরে কোথাও। পুলিশের ভাষ্যমতে, তিনি নিজেই চেয়েছিলেন নিখোঁজ হতে, তবে তার এই দীর্ঘ অদৃশ্য জীবনে কোনো অপরাধ বা দুর্নীতির ছায়া নেই।
গোয়েন্দা আইজ্যাক হ্যানসনের কথায়, অড্রে এখনো আত্মবিশ্বাসী, প্রাণবন্ত। এই সবকিছুর ভেতর থেকেও তিনি তার মতো করে জীবন কাটিয়েছেন। ৬৩ বছর পর, হয়তো একমাত্র ব্যাকবার্গই জানেন, কীভাবে হারিয়ে বেঁচেছেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি।
No comments