কে কী বললো, তাতে কিছু যায় আসে না
আরাকান আর্মিকে দেয়া বার্তার কি জবাব পেয়েছে ঢাকা? জানতে চাইলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, না, আমরা প্রশ্ন করেছি। জবাব আসলে বিচার বিবেচনা করে দেখবো কি তারা কি বলতে চেয়েছে। এখানে কোনো রাখ-ঢাক নেই, বিষয়টি সাদাকালো। হয় তারা জাতিগত নিধনের পক্ষে, নয় বিপক্ষে। আমরা পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের জাতিগত নিধন সমর্থন করি না। এটি আরাকান আর্মির জন্য একটি পরীক্ষা। আমরা অপেক্ষা করছি, এ পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারছে কিনা? আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বিষয়ে মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ড. খলিল বলেন, বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমরা নিজের মতো করে আমাদের স্বার্থ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবো। এখানে কে কি বললো তা শোনার সময় নেই। বাংলাদেশ একটা স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এটি বাস্তবায়ন করছি। মিয়ানমার আরাকান আর্মিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারাও (মিয়ানমার) তো তাদের (আরাকান আর্মি) সঙ্গে যোগাযোগ করছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, একটি জিনিস বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ। এ সীমান্ত বাংলাদেশকে ম্যানেজ করতে হবে, রক্ষা করতে হবে, শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। ফলে ওপারে যেই থাক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখবো। মিয়ানমারের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া রয়েছে। কিছুদিন আগে ভূমিকম্পে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা গিয়েছে, মিয়ানমারের অনুরোধের অপেক্ষা করা হয়নি।
মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা, বাণিজ্যসহ সব দিকে যোগাযোগ রয়েছে। কোনো সমস্যার সমাধান চাইলে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে, না হলে সমস্যার সমাধান হবে না। মিয়ানমারের সার্বভৌম ও অখণ্ডতার কথা বাংলাদেশ বলছে, আরেক দিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ সাংঘর্ষিক কিনা? এমন প্রশ্নে ড. খলিল বলেন, না, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগটি বাস্তবিক প্রয়োজনীয়তা। ওপারে সীমান্তে তারা (আরাকান আর্মি) আছে, তাদের সঙ্গে তো আমাদের কাজ করতে হবে। মানবিক করিডোর বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, সকল পক্ষ রাজি কিনা? আমরা দেখবো। রাজি হলেই যে আমরা মানবিক সাহায্য দেবো এমন কোনো কথা নেই, এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আরাকানে যে নতুন প্রশাসন তৈরি হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব চায়। সেখানে যেসব রোহিঙ্গারা রয়েছে, তাদের ওপর যাতে কোনো অত্যাচার না হয়, তাদের সঙ্গে যেন বৈষম্য করা না হয়, তারা যাতে দলে দলে বাংলাদেশে না আসে। এ বিষয়গুলো মানতে হবে। জাতিগত নিধন কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ মানবে না। ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গাদের ঘর বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন করলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত। পুরোটাই এসেছে সেখানকার যুদ্ধাবস্থার কারণে। এর আগেও যারা এসেছিলেন, তারা বন কেটে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রেখেছিলেন। বনের এ গাছগুলোকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে, অনেক কষ্টও হয়েছে। ফলে পরিবেশগত বিষয় গবেষণা না করে বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। রাখাইনে মানবিক করিডোরের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হবে জানিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, করিডোরের বিষয়ে সকল পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। সবাই রাজি হলেও করিডোর দেয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ঢাকা।

No comments