ইসরায়েলি আগ্রাসন: গাজায় নিহত ৫১ হাজার ছাড়াল - নেতানিয়াহু বললেন, ‘আরও আঘাতের’ শিকার হবে হামাস
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৯ জন। এ নিয়ে গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নতুন করে হামলা শুরুর পর গাজায় ১ হাজার ৬৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৩০২ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর গাজায় এ পর্যন্ত ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার ধ্বংসস্তূপে এখনো ১০ হাজারের বেশি মরদেহ পড়ে আছে। ভারী উদ্ধার সরঞ্জামের অভাব এবং রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ও অব্যাহত হামলার কারণে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে না পারায় এসব দেহাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ১১ জিম্মির মুক্তির বিনিমিয়ে গাজায় ৪৫ দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে সংগঠনটি। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানানো হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যেতে হামাস এখনো তাদের মূল দাবিতে অটল রয়েছে। হামাসের দাবি, গাজায় যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ হতে হবে এবং সেখান থেকে ইসরায়েলের সব সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
এর আগে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলকে শত্রুতা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে, হামাসের এই দাবি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পূরণ হয়নি।
এ ছাড়া নতুন প্রস্তাবে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে।
গাজায় গিয়ে নেতানিয়াহু বললেন, ‘আরও আঘাতের’ শিকার হবে হামাস
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিরল সফর করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার তিনি এ সফর করেন বলে জানিয়েছে তাঁর কার্যালয়। এমন সময় নেতানিয়াহু গাজা সফর করলেন, যখন উপত্যকাটিতে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার উত্তর গাজা সফর করেন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। টাইমস অব ইসরায়েলের খবর অনুযায়ী, গাজা সফরে গিয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আরও আঘাতের’ শিকার হবে হামাস।
ইসরায়েলি সেনাদের ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একটি পোস্ট দেখান নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইরানের নেতা আবারও ইসরায়েলকে ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সময়ও তিনি একই কাজ করছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। পরে ১৯ জানুয়ারি উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ১৮ মার্চ সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকে গাজার বড় অংশ দখল করেছে তারা। হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে আবারও বাড়িঘর ছেড়ে পালানো শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, একমাত্র সামরিক চাপ দিয়েই হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া ইসরায়েল সরকারের হিসাবে, ২৫১ জিম্মির মধ্যে গাজায় এখনো ৫৮ জন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
| ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুর মরদেহ নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। গতকাল গাজার খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে। ছবি: রয়টার্স |
No comments