যুদ্ধ বন্ধের শর্তে ইসরাইলের সকল জিম্মির মুক্তি দেবে হামাস

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা পেলে জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সোমবার সংগঠনটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে সকল ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত হামাস। এক্ষেত্রে ইসরাইলকে যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে হবে বলে জোর দিয়েছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, মিশরের রাজধানী কায়রোতে কাতারের মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছে হামাস। এছাড়া মিশর ও কাতারের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে।

হামাসের ওই কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, ইসরাইলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দী, যুদ্ধ বন্ধ, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যহ্যার এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিনিময়ে সকল জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত হামাস। তবে ওই কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন যে, যুদ্ধবিরতির অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল। তিনি বলেছেন, বিষয়টি বন্দীদের সংখ্যার সঙ্গে জড়িত নয়, বরং দখলদারদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার সঙ্গে জড়িত। তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে এবং যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরও বলেছেন, এ জন্য দখলদার ইসরাইলের কাছে যুদ্ধবিরতির চুক্তি বহাল রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে হামাস।  

সোমবার ইসরাইলি সংবাদ ওয়েবসাইট ইয়নেট জানিয়েছে, হামাসের কাছে একটি নতুন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। চুক্তির অধীনে, ইসরাইল দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় অংশ নেবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চয়তার বিনিময়ে সংগঠনটি ১০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। তখন একাধিক জিম্মি-বন্দী বিনিময় করে উভয় পক্ষ। দুই মাস না যেতেই একতরফাভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ১,৫৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা  দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯৪৪ জনে।

ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনির মৃত্যু, নিহত ৫১ হাজার ছুঁই ছুঁই

গাজা উপত্যকায় দিন দিন হামলা জোরালো করছে ইসরাইলি বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়ে ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। এতে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫১ হাজারে পৌঁছেছে। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এ খবর দিয়ে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫০ হাজার ৯৩৮ ফিলিস্তিনি। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া সর্বশেষ হামলায় আতহ হয়েছেন ১১৮ জন। আহতদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এতে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৭৪ জনে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ইসরাইলি বাহিনীর তৎপরতার ফলে তাদের কাছে উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে পারছে না। প্রায় ১৫ মাস যুদ্ধ চলার পর জানুয়ারিতে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরাইল। যার প্রথম ধাপ শেষ না হতেই গত ১৮ মার্চ একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে পুনরায় হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। দিন দিন তাদের হামলা জোরদার করা হচ্ছে। এসময়ের মধ্যে এক হাজার ১৩ জন নিহত ও চার হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির আওতায় উভয় পক্ষই কিছু বন্দি মুক্তি দিয়েছে। গত নভেম্বরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পাশাপাশি তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এছাড়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগও রয়েছে। যদিও তা তোয়াক্কা না করেই উপত্যকাটিতে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব।

এদিকে ফিলিস্তিনি সরকারের তথ্যের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বলেছে, এখনও হাজারের ওপর ফিলিস্তিনি নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে তারা নিহত হয়েছেন। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.