চারজন গ্রেপ্তার: বাঁচা-মরার লড়াইয়ে সেই শিশুটি
গতকাল দুপুরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। পাশবিক নির্যাতনের কারণে শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। তার গলার আঘাত গুরুতর। শিশুটির চিকিৎসায় গাইনি, এনেস্থেসিওলজি, শিশু সার্জারি ও শিশু বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা এই শিশুটি মাগুরা শহরে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে মাগুরা থেকে পাঠানো হয় ফরিদপুর মেডিকেলে। সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এখানকার চিকিৎসকরা তার অবনতি দেখে সিএমএইচে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। শিশুটি কয়েকদিন আগে তার বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশুটির গলায় একটা দাগ আছে। মনে হচ্ছে, কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়েছিল। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় আছে। তার যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
গতকাল হাসপাতালে দেখতে গিয়ে উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যে মেয়েটি মেয়ে হয়ে ওঠেনি, নারী হয়ে ওঠেনি তার গায়ে হাত দেয় কী করে। যারা আট বছরের শিশুর গায়ে হাত দিল এই কাপুরুষগুলো পুরুষ হয়ে চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সমাজ সুস্থ আছে কি না সেই প্রশ্ন রেখে এই উপদেষ্টা বলেন, আমি ছয় মাস হলো এসেছি, আর এর মধ্যে এই পচে যাওয়া সমাজকে বদলে দেবো! বাচ্চাটা জীবন নিয়ে লড়ছে। ডাক্তাররা জানে না তাকে বাঁচাতে পারবেন কি পারবেন না। তারা কাজ করছে, তরুণ ছেলে-মেয়েরা প্রতিবাদ করছে। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এই বাচ্চাটা যেন সর্বোচ্চ বিচার পায়। বারবার এই ঘটনাগুলো ঘটছে, এগুলো ঘটতে দেয়া যাবে না।
হাসপাতালে গিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় এসবের বিচার হয়নি। এ কারণেই এসব দমন হয়নি। তারা উল্টো এ সমস্ত ঘটনাকে সমর্থন করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত। একের পর এক ঘটনা ঘটছে।
গতকাল দেখা যায়, ঢামেকের পিআইসিইউ’র সামনে শিশুটির মা, বাবা ও অন্যান্য স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন। তার মা বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন। ওনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি সব দায়িত্ব নিয়েছেন। সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তারেক রহমান ও দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া চাচ্ছি। মেয়ের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটা এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। তার অবস্থা ভালো নয়। এতটুকু বাচ্চাকে কিভাবে যে অত্যাচার করেছে সেটি হয়তো আপনারা শুনেছেন কিন্তু দেখতে তো পারেননি। তার শরীরে কতোগুলো আঘাত করেছে। মেয়েকে নির্যাতনের সঙ্গে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় মেয়ের শ্বশুর, ভাসুর ও তার জামাই তিনজনই নির্যাতন করেছে। মেয়ের জামাই আগেও বিয়ে করেছিল সেটা আমরা জানতাম না। মেয়ের শ্বশুরের বিরুদ্ধে আগেও দু’টি মেয়েলি কেস ছিল। সেখান থেকে খালাস পেয়েছেন। এই মামলা থেকে যাতে খালাস না পায়। এর সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে জঘন্যভাবে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের ফাঁসি দিয়ে দিক। যাতে আর কোনো মা-বোনের দিকে তারা চোখ তুলে তাকাতে না পারে।
এদিকে, শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন তার মা। শনিবার ভুক্তভোগীর বোন ও তার বাবার মাধ্যমে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান তার মা। পরে বিকালে পুলিশ মামলা হিসেবে রুজু করে। মামলায় শিশুটির মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ এনেছেন। মামলায় ভুক্তভোগীর বোন জামাই, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাসুরকে আসামি করা হয়। তারা আগে থেকেই পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। পরে মামলা রুজু হওয়ার পর তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
ওদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গতকাল জুমার পর মাগুরা সদরে মহাসড়ক অবরোধ ও থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। এ সময় থানার মূল ফটক ঘেরাও করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাদের হাতে তুলে দেয়ার দাবি তোলেন। পরে সেনাবাহিনী এসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

No comments