ডিএনএ নমুনা দিয়ে হারিছ কন্যা: ‘আমার অধিকার ছিল না বাবাকে সঠিকভাবে দাফনের’
সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, আপনারা জানেন বাবার লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। সেটা ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাকে তারা ডেকেছেন আমার স্যাম্পল গ্রহণ করার জন্য। এখন আব্বুর স্যাম্পলের ম্যাপিং চলছে, ডিএনএ ম্যাপিং। আমার স্যাম্পলটা নিয়ে তারা আব্বুর ডিএনএ’র সঙ্গে মেলাবেন। তারপর রেজাল্ট দেবে। এটা ২-৩ সপ্তাহ সময় নিতে পারে। কারণ আমার ফ্রেশ ব্লাড নেয়া হচ্ছে। আর এখানে যেহেতু আব্বুর হাড় এবং দাঁত থেকে স্যাম্পল নেয়া হয়েছে তাই এটা ফ্রেমিং করতে সময় লাগবে। তারা তাদের সর্বোচ্চটা করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বলেছি- আমার বাবা মারা গেছেন, গত সরকারের আমলে। তারা সেটা মেনে নেয়নি। এখন আমি কি আমার বাবাকে জীবিত রেখে দিবো? না হলে কাউকে খুঁজে দিতে হবে আমার বাবাকে। আমার বাবা তো নিরুদ্দেশ থাকতে পারেন না। আর মৃত্যু হলে, যেটা আমি বলছি একটা সার্টিফিকেট লাগবে। সেটা এস্ট্যাবলিশড হতে হবে। তিনি তো যেমন তেমন মানুষ ছিলেন না। আর যেমন তেমন মানুষেরও মানবিক অধিকার থাকে। তার মানবিক অধিকার রক্ষা হয়নি। সেটার রেকটিফিকেশন চলছে।
সে সময় এভাবে কেন দাফন করা হয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাবাকে দাদুর বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। মিডিয়া মাহমুদুর নামে অহরহ রিপোর্ট করছে। মাহমুদুর রহমান নামে হারিছ চৌধুরীর দাফন। প্রমাণ করা হচ্ছে- এটা হারিছ চৌধুরী। এটা আসলে সঠিক না। কে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করেছে? আমি তো জানি আমার বাবার লাশ নিয়ে গিয়েছি ওখানে দাফন হয়েছে। ওখানে যারা দাফন করেছে তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। ওখানকার হুজুর মহিলা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন না। আমাকে সেটা বলা হয়েছিল। আমি তখন সদ্যমৃত একটা বাবার লাশ বুকে করে নিয়ে যাওয়া মেয়ে। আমি তো কিছু বলিনি। তারপর আস্তে ধীরে জিনিসটা সারফেসে আসে। আমাকে যখন দু’জন সাংবাদিক অ্যাপ্রোচ করেন, আমার খুব ক্লোজ, মতিউর রহমান চৌধুরী ও মুশফিকুল ফজল আনসারী। তখন আমি কথা বলি। তাদের সঙ্গে যখন আমি কথা বলি তখন আমি বলি হ্যাঁ আব্বু মারা গেছেন। ওই নামে যে দাফন হয়েছে- এটা সত্যি। আমাকে তো আর কেউ জিজ্ঞাসা করেনি। আগের যারা সরকারে ছিলেন আব্বু তো তাদের প্রতিহিংসার পাত্র ছিলেন। যার কারণে তারা যা ইচ্ছে তাই করেছে। সে সময় বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয়েছে। আমার বাবা নির্যাতিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি আত্মগোপনে ছিলেন, তিনি তো দেশ ছেড়ে যাননি। যখন আব্বু মারা গেছেন তখন আমি শোকাহত ছিলাম। সরকার খবর বের করে দিলো হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। কেউ বললেন মারা যাননি। ইন্টারপোল থেকে নাম সরানোর জন্য সে মিথ্যা কথা বলছে। যা ইচ্ছা তাই রিপোর্ট করলো। এ বিষয়ে একটা রিপোর্ট হলো, তখন সবাই আমার কাছ জানতে চাইলো। তখন বললাম আমার বাবা মারা গেছেন। অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আমি অনেককে বলেছি- আমার বাবা মারা গেছেন। সবার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না। যাদের একসেস ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশেষ করে মতি আংকেল ও মুশফিকুল আংকেল। তারা আমাকে বললেন- অবশ্যই সত্যটা সামনে বের করে নিয়ে আসতে হবে। আর মতিউর রহমান চৌধুরী আংকেল এটা নিয়ে অনেকদিন ধরে অসুন্ধান করছিলেন। তিনি বাকিটা অনুসন্ধান করে নিয়ে আসেন। মানবজমিনে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। মাহমুদুর রহমান নাম আব্বু ধারণ করেছিলেন। এটা কখনো বলা ছিল না এবং মতিউর রহমান চৌধুরীর কোনো কথা, অনুসন্ধানে বা ইন্টারভিউতে কখনো বলা হয়নি আমি মাহমুদুর রহমান নামে বাবাকে দাফন করেছি। আমি মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করিনি। আমি আমার আব্বুকে দাফন করেছি। আমি কাউকে কিছু বলিনি। যখন রিপোর্ট প্রকাশ হয়ে যায় তখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভয় পেয়ে যায়। তখন তারা আমার কাছে সার্টিফিকেট চায়। ততক্ষণে মতিউর রহমান চৌধুরী সবকিছু প্রকাশ করে দিয়েছেন। সবকিছু তখন মিডিয়ায় চলে গেছে। সেখান থেকেই সবাই সংগ্রহ করেছে। কিন্তু আমি কিছু বলিনি, হুজুরের সঙ্গে কথা বলিনি। হুজুর টাকা নিয়েছেন; তার অফিসে আমি টাকা দিয়েছি। ডকুমেন্ট ওনারাই ফিলাপ করেছেন।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী সিআইডিতে আসেন। এর আগে ঢাকা জেলার আদালতের নির্দেশে গত ১৬ই অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর লাশ উত্তোলন করে নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ঢাকার সাভারে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর কিনা, তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে লাশটি উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা। ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহটি হারিছ চৌধুরীর কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাই তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করাসহ তাকে দাফনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের মো. জামশের আলী ডিআইজি মানবজমিনকে বলেন, হারিছ চৌধুরীর হাড় ও দাঁত থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মেয়ের নমুনা নেয়া হয়েছে। দু’জনেরটা ডিএনএ পরীক্ষা হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। তারপর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এটা প্রকাশ করবো।
No comments