পররাষ্ট্র সচিব মোমেনের বিদায়
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নিতে হয়েছে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে। রোববার বিকালে কয়েক মিনিটের নোটিশে সচিবকে জরুরিভাবে বিদায় জানানোর আয়োজন করে সেগুনবাগিচা। সোয়া ৫টার ওই আয়োজনে পরিচালক থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের যোগদানের জরুরি আমন্ত্রণ জানিয়ে ৫টায় খুদে বার্তা পাঠায় প্রশাসন অনুবিভাগ। যা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনা’য় থাকা রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ এবং রমনাস্থ ফরেন সার্ভিস একাডেমির কর্মকর্তাদের যোগদানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। অনেকে অংশ নিতে পারেননি। সূত্র বলছে, কাউকে ভারপ্রাপ্ত না করেই বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আচমকা দায়িত্ব ছাড়েন পররাষ্ট্র সচিব। তার দপ্তরের দাবি তিনি রিজাইন বা পদত্যাগ করেননি, চার্জ রিলিংকুইশ করেছেন অর্থাৎ দায়িত্ব পরিত্যাগ করেছেন। সচিবের চুক্তি বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন বার্তা পেয়ে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে গেছেন জানিয়ে রাতে এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, নীতিনির্ধারকদের সিগন্যাল পেয়েই সচিব বিদায় নিয়েছেন। এটা তার জন্য মর্যাদাকর হয়েছে। সোমবার থেকে তার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হবে। সূত্র মতে, চুক্তি বাতিলের আগে সচিব মোমেনের তড়িঘড়ি বিদায় নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। অবশ্য অনাড়ম্বর বিদায় অনুষ্ঠানের পরও বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। অনুষ্ঠান শেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন অবশ্য এ নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সচিবের চুক্তি বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। নোটিশ বা প্রজ্ঞাপন জারির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আজকালের মধ্যে বাতিলের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। প্রশ্ন উঠেছে এই মুহূর্তে তাহলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব কে? জবাব মিলেনি। প্রশাসন সূত্র বলছে, সচিবের চুক্তি বাতিল না হওয়ায় কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। বাতিলের পর যত দ্রুত সম্ভব ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের নাম ঘোষণা এবং নোটিশ জারি হবে। চুক্তি বাতিলের আগে কেন তাকে তড়িঘড়ি বিদায়? কাউকে সচিবের দায়িত্ব না দেয়ায় বিদেশে কি বার্তা যাবে? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর নেই। কেন এই পরিস্থিতি? এমন প্রশ্নে এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে পেশাদার কূটনীতিক মাসুদ বিন মোমেন অবসরে যান। কিন্তু বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকার তাকে ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে রেখে দেন। যার প্রতিদান দিতে পেশাদার ওই কূটনীতিক তৎপর হয়ে ওঠেন। পেশাদারিত্বের বদলে বিবেক-বিবেচনাহীনভাবে তিনি হাসিনার শাসনকে পোক্ত করার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক আন্দোলনের বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ অবস্থান ছিল তার। হেলিকপ্টার থেকে গুলির ঘটনা অস্বীকারের চেষ্টা যার উদাহরণ। এজন্য ৫ই আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকেই পররাষ্ট্র সচিবের বিদায়ের আওয়াজ ওঠে। তিনিও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অবশেষে রোববার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয় ছেড়ে যান তিনি। উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র সচিব হলেন বাংলাদেশ সরকারের একজন সিনিয়র কূটনীতিক। তিনি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কিন্তু অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট করার দায়বদ্ধতা রয়েছে তার। ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ডামি নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিবের দৌড়ঝাঁপের কারণে তাকে ‘অ্যাক্টিভিস্ট ডিপ্লোম্যাট’ বলে আখ্যা দেয় ইন্ডিয়ান মিডিয়া। স্মরণ করা যায়, ২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশের ২৬তম পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে তাকে সিনিয়র সচিব করা হয়।
No comments