বিসিবি সভাপতির সঙ্গী ‘ব্যর্থ আর অভিযুক্তরা’ by ইশতিয়াক পারভেজ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন অভিভাবক ফারুক আহমেদ। জাতীয় দলে তিনবার প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক এই অধিনায়ক। অনেকটা নাটকীয়ভাবেই এবার হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি। টানা ১২ বছর সভাপতি হিসেবে থাকা নাজমুল হাসান পাপন কোনো প্রতিরোধ না করেই পদত্যাগ করেন। এখন তিনি পালাতক। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে বোর্ডে লম্বা সময় ধরে থাকা বেশির ভাগ পরিচালক চলে গিয়েছেন আত্মগোপনে। আর এখন যে কয়েকজন আছেন তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা রকম অভিযোগ। সবার বিপক্ষেই আছে লম্বা সময় দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে থাকার পরও নিজেদের দায়িত্বে ব্যর্থতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এর মধ্যে আকরাম খান, মাহবুবুল আনাম, ইফতেখার মিঠু, খালেদ মাহমুদ সুজন অন্যতম। অন্যদিকে শুধু পরিচালকই নয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন থেকে শুরু করে বিসিবির প্রায় প্রত্যেক বিভাগে এক-দুজন করে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গেল সরকারের শাসন আমলে পাপনের নেতৃত্বে ধিরে ধিরে বিসিবিতে হয়েছে একের পর এক অনিয়ম। কারো বিপক্ষে দুর্নীতি কারো বিপক্ষে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যহার ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ। এমন ব্যর্থ আর অভিযুক্তরাই এখন নয়া সভাপতি ফারুকের সঙ্গী। যদিও নতুন সভাপতি বলেছেন, ‘আমি জানি নানা অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। তবে বের করতে হবে কাউকে দোষী বলতে হলে প্রমাণও লাগবে। আমরা কাজ করছি, কথা দিচ্ছি যাকেই জড়িত পাওয়া যাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিসিবিতে পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে নাটকীয়তা দিয়ে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কোটায় পরিচালক হয়ে আসা ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। আরেক পরিচালক সাজ্জাদুল আলম ববিকে এনএসসি সরিয়ে দেয় পদ থেকে।  সেখানেই ফারুক হন পরিচালক এরপর নির্বাচিত সভাপতি। তার সঙ্গে আসেন নয়া পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম। এরপর নতুন করে পথ চলা শুরু। বাকি যারা আত্মগোপনে ছিলেন তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন নারী বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। গুঞ্জন রয়েছে মিডিয়া বিভাগের প্রধান তানভীর আহমেদ টিটুও পদত্যাগ করেছেন তবে সত্যতা মিলেনি। বাকি যারা আছেন সব মিলিয়ে তিনটি কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় অংশ না নিলে তাদের পরিচালক পদ খারিজ করে দিতে পারবেন সভাপতি। যদিও আরো কিছু নিয়ম রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে অনুপস্থিতদের বিসিবি থেকে সরে যেতে হবে এটা একেবারেই পরিষ্কার। তবে ভাবনাটা তাদের নিয়ে নয়, যারা আছেন তাদের নিয়েই বেশি! বর্তমানে ফারুক আহমেদের অন্যমত সঙ্গী হলেন আকরাম খান, মাহবুবুল আনাম, ইফতেখার মিঠু ও প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী। এই তিনজনকে পাশে নিয়ে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে নয়া সভাপতিকে। নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসে সভাপতিকে মাহবুবুল আনাম ও আকরামকে নিয়ে প্রশ্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় সংবাদমাধ্যমের। সরাসরি তাদের বিপক্ষে নানা অভিযোগ শুনে বিব্রত হতে হয় নয়া সভাপতিকে। আকরামের বিপক্ষে অভিযোগ তো বেশ পুরনো। প্রধান নির্বাচক, এরপর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান এমনকি বর্তমান ফ্যাসিলিটিস বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচক হিসেবে তিনি ব্যর্থতা নিয়ে সরে গেছেন। এরপর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে থেকে ব্যর্থতার কারণে তাকে সরিয়ে দেয় বিসিবি। বর্তমানে তিনি যে দায়িত্বে আছেন সেখানে আছে দুর্নীতির অভিযোগ। বিসিবির সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক।  যে কিনা ক্লাব থেকে শুরু করে বিসিবির অর্থনিতীও নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেই মল্লিকের ব্যবসায়কি পার্টনার আকরাম খান। তিনি নিজেও নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি।  অন্যদিকে মাহবুবুল আনামকে বলা হয় বিসিবির শ্রীলঙ্কান সিন্ডিকেটের প্রধান। বিশেষ করে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার বিপক্ষে অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু মাহবুবুল আনামের আশীর্বাদে এই দুই লঙ্কানই আছেন বহাল তবিয়তে। শুধু তাই নয়, ২০০১ থেকে কয়েকবার সরকার পরিবর্তন হলেও তিনি বিসিবি’র সব বোর্ডে ছিলেন, এখনো আছেন। বলা চলে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। অন্যদিকে ইফতেখার মিঠুর বিপক্ষে অভিযোগ তিনি আম্পায়ারিং বিভাগের প্রধান হওয়ার পরও সেখানে স্বচ্ছতা আনতে পারেননি। বিসিবি পরিচালকদের নিয়ন্ত্রিত বড় বড় ক্লাবের পক্ষেই তিনি তার আম্পায়ারদের ব্যবহার করেছেন। তিনি  ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান ও অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর বন্ধু বলেই পরিচিত। তবে তার কোনো সুফল বাংলাদেশ ক্রিকেট পেয়েছে কিনা সন্দেহ! তিনিও পাপনের সময়ের বোর্ডের পরিচালক, তাকে নানা রকম অনিয়মের সঙ্গ দিয়েছেন এমন অভিযোগও কম নয়। তার আম্পায়ারিং  বিভাগের কর্মকর্তা সয়লাব হোসেন টুটুল বিসিবিতে না এসেই লাখ টাকা বেতন নিচ্ছেন। চেয়ারম্যান হয়েও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি মিঠু। এছাড়া খালেদ মাহমুদ সুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোও বেশ পুরনো। তিনি পরিচালক হয়েও জাতীয় দল থেকে শুরু করে ক্লাব ক্রিকেট- সব জায়গায় পালন করেছেন কোচের দায়িত্ব। প্রিমিয়ার লীগের দল আবাহনী ছাড়াও বিপিএলে ঢাকার কোচ তিনি। এছাড়াও জতীয় দলের ম্যানেজার থেকে শুরু করে টিম ডিরেক্টর পদেও তিনি কাজ করেছেন। তিনিও পাপন বোর্ডের অন্যতম প্রভাবশালীদের একজন। অনেক অনিয়ম জেনেও চুপ ছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক। নানা সময়ে নানা ঘটনায় বিতর্ক জন্ম দিয়েছেন তিনি নিজেও। বিশেষ করে ক্যাসিনোকাণ্ড অন্যতম। অভিযোগ রয়েছে জাতীয় দলের সঙ্গে সফরে থাকা অবস্থায় তিনি ক্যাসিনোতে খেলতে গিয়ে হয়েছেন বিতর্কিত! প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী ১২ বছর ধরে এই একই পদে আছেন। তার বিরুদ্ধে পাপন বোর্ডের নানা অনিয়মের সঙ্গী হিসেবে থাকার অভিযোগ আছে। এছাড়াও অভিযোগ আছে আর্থিক দুর্নীতিরও। এছাড়াও বিসিবি’র অর্থবিভাগের প্রধান কর্মকতা মান্নানের বিপক্ষে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বলতে গেলে নয়া সভাপতিকে নিজের কাজকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি এসব জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। নয়তো তাকেও মেনে নিতে হবে অনেক অদৃশ্যকিছু!

No comments

Powered by Blogger.