দুদকে অভিযোগ: সুনামগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যানের শত কোটি টাকার দুর্নীতি by ওয়েছ খছরু
জমিসহ ভবনের দাম প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই এলাকায় প্রতি শতক জমির দাম ১০ লাখ টাকা। সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়া, হাসননগরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় তার নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে বাসা-বাড়ি ও জমি আছে। নিজ এলাকার গ্রামের বাড়ির নিকটে গত ৫ বছরে স্ত্রীর নামে ৫০ একর জায়গা ক্রয় করেন। ওই জায়গার দাম ১০ কোটি টাকা। অথচ তার স্ত্রী একজন গৃহবধূ।
তাহিরপুর উপজেলা সদরে বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী প্রয়াত হাজী জয়নাল আবেদীনের দোকান ২ কোটি টাকায় তিনি কিনে নেন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ২০ একর জায়গার উপর গড়ে তুলেছেন মোরগ ও ডিম উৎপাদনের খামার। ওই খামারের দাম ২০ কোটি টাকারও বেশি। সিলেট সদর উপজেলায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাশে একটি সিএনজি পেট্রোল পাম্প নির্মাণাধীন রয়েছে। রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় একটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট ও ঢাকায় দুটো প্লট আছে। ২০২২ সালে কালো টাকার জোরে প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় বালিজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান হওয়ার পরই তাহিরপুরের আনোয়ারপুর বাজারের নিকটস্থ নোয়াহাট এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের আড়াই একর জায়গা দখল করে নেন। এরপর দখলকৃত জায়গায় স্থাপন করেন পাথর ভাঙার ক্রাশার মিল। বর্তমানে এই ক্রাশার মিলকে কেন্দ্র করে ১০ কোটি টাকারও বেশি দামের পাথর স্টক করা হয়েছে। আজাদ হোসেন গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিটি স্থলবন্দর থেকে একসময় নিয়মিত চাঁদা নিতেন। রাজধানী ঢাকার শান্তিনগরে স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের অফিস নিয়েছেন আজাদ। অফিস তার নিয়ন্ত্রণে, তিনি নিয়মিত অফিসে বসেন এবং বেশির ভাগ সময় ইউনিয়নবাসীকে সেবা না দিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ২০১২ সালে রেলমন্ত্রী হওয়ার পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে এই আজাদ হোসেন তিন লাখ টাকা করে ১০০ জনের কাছ থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ফাঁস হয়ে গেলে ওই নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। রেলের কালো বিড়ালের তকমা নিয়ে মন্ত্রিত্ব হারান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। লোকজনের বহুচাপে কিছু মানুষের টাকা ফেরত দিলেও অধিকাংশ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেন আজাদ। ২০১৬ সালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধোপাজান নদীর বালুমহাল সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় ইজারা নেন।
স্থানীয় জাকির হোসেন বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করলে আজাদের লিজ বাতিল করে কয়েক কোটি টাকা জরিমানাও আরোপ করেন। ২০১৮ সালে ফাজিলপুর বালুমহালে ৭১ হেক্টর জায়গার ইজারা নেন। কিন্তু তিনি তার ব্যবসায়িক পার্টনার ফেরদৌস আলমকে হটিয়ে শুধুমাত্র দলীয় তথা আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র প্রভাব খাটিয়ে বহুল আলোচিত জিয়াউল ও সেলিমকে অংশীদার বানান। পরবর্তীতে জাদুকাটা নদীতেও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু তোলেন। এদিকে অভিযোগকারী রেজাউল বলেন- সামান্য একটা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে মাত্র ১৬ বছরে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হলেন এমন প্রশ্ন এলাকার সাধারণ লোকজনের। এ কারণে তিনি দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে তিনি আবেদনটি করেছেন। তদন্ত করলে দ্বিগুণ সম্পদ পাওয়া যাবে বলে জানান রেজাউল।
আজাদের বক্তব্য: এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমি ঠিকাদারিসহ নানা ব্যবসা করি। ব্যবসার মাধ্যমে সুনামগঞ্জে বাড়ি বানিয়েছি। সেটি আমার ট্যাক্স ফাইলে। সিলেট সদর উপজেলায়ও একটি সিএনজি পাম্প নির্মাণের চেষ্টায় আছি। তবে যা করছি সবই বৈধভাবে করছি। ট্যাক্স দিয়ে, ব্যবসা করে সম্পদ উপার্জন তো দোষের কিছু না।’ তিনি বলেন- ‘সম্প্রতি সময়ে নামে-বেনামে আমার কাছে ফোন করে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা চায়। যিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি ওই দলের কিনা জানি না। তবে আমি ক্ষমতার জোরে অন্যায় করলে এখন তো এলাকায় থাকতে পারতাম না। মানুষের জন্য কাজ করি বলে এলাকায় রয়েছি। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে এর বেশির ভাগই মিথ্যা বলে জানান তিনি। দুদক তদন্ত করলে অবশ্যই এর সত্যতা পাবে বলে জানান তিনি।’
No comments